মঙ্গলবার, ১৩ মে ২০২৫, ১১:২০

ইহকাল ও পরকালে সফলতার জন্য রাসুলের (সা:) এর তিনটি উপদেশ

ইহকাল ও পরকালে সফলতার জন্য রাসুলের (সা:) এর তিনটি উপদেশ

শাইখ জামাল আবদি-নাসির: দু’জন মহান সাহাবী রাসুল (সাঃ) এর কাছে এসে বললেন: “হে আল্লাহর রাসূল, আমাকে এমন কিছু উপদেশ দিন যা আমি আমল করতে পারি, যা দুনিয়াতে উপকার দিবে এবং আখিরাতে মুক্তি দিবে।”

রাসূলুল্লাহ (সাঃ) তিনটি শক্তিশালী বাক্যে উত্তর দিলেন:  এক. “যেখানেই থাকো আল্লাহকে ভয় করো । দুই. খারাপ কাজের পর ভালো কাজ করো, তা সেই খারাপটিকে মুছে দেবে। তিন. মানুষের সঙ্গে উত্তম আচরণ করো।”

শাইখ জামাল আবদি-নাসির গত ৪ মে শুক্রবার ইস্ট লন্ডন মসজিদের জুমার খুতবায় উপরোক্ত হাদীসটি উদ্ধৃত করে বক্তব্য শুরু করেন।  তিনি অতিথি ইমাম হিসেবে খুতবা পেশ করছিলেন। তিনি বলেন, এই সপ্তাহের খুতবায় আমি এই হাদীসটি নিয়ে চিন্তাভাবনা করেছি যা ইমাম আহমাদের ‘মুসনাদ’ গ্রন্থে বর্ণিত হয়েছে। এরপর তিনি হাদীসটি বিশদ ব্যাখ্যা তুলে ধরেন।

১. “যেখানেই থাকো, আল্লাহকে ভয় করো।” তুমি একা হও বা জনসমক্ষে। ভ্রমণে বা বাসস্থানে, পরিবারে বা ব্যবসায় — সব জায়গায় আল্লাহকে ভয় করো। কুরআনে আল্লাহ তায়ালা বলেন: “সে কি জানে না যে আল্লাহ তাকে দেখছেন?”  সূরা আল-আলাক, ৯৬:১৪।

রাসূল (সাঃ) বলেছেন, তাকওয়া অন্তরে থাকে। এটা তোমার চেহারায়, কথায় বা বংশে নয় । যদি অন্তরে না থাকে, জীবনে তা প্রতিফলিত হবে না। যার অন্তরে তাকওয়া নেই, সে আল্লাহকে সত্যিকারভাবে চিনতে পারে না।

সাহাবি সাওবান (রাঃ) থেকে বর্ণিত, রাসূল (সাঃ) বলেছেন: “কিয়ামতের দিন এমন কিছু লোক থাকবে যাদের নেক আমল পাহাড়সম হবে, কিন্তু আল্লাহ তা বাতাসে উড়ন্ত ধুলোর মতো করে দেবেন।” সাহাবিরা জিজ্ঞেস করলেন, তারা কারা?

তিনি বললেন: তারা হল এমন লোক যারা একাকী অবস্থায় আল্লাহকে ভয় করে না। তারা লুকিয়ে গুনাহ করে, ধর্মের সীমা লঙ্ঘন করে, কিন্তু জনসমক্ষে নিজেকে ধার্মিক দেখায়। আল্লাহ সব জানেন, তাই তাদের আমল নিজের চোখের সামনেই ধ্বংস হয়ে যাবে।”

দুই. “খারাপ কাজের পর ভালো কাজ করো, তা সেই খারাপটিকে মুছে দেবে।” আমরা ফেরেশতা নই, মানুষ । আমাদের দ্বারা ভুল হবেই । কিন্তু আল্লাহ চান আমরা জান্নাতে যাই। তাই যদি কোনো গুনাহ করো, তার পরে একটা ভালো কাজ করো। সেটা পূর্বের গুনাহ মুছে দেবে।

শয়তান হয়তো কানে কানে বলবে, “এটা তো ভণ্ডামি! গুনাহ করে আবার নেক আমল?” কিন্তু আল্লাহ আমাদের প্রকৃতি জানেন। তাই তিনি বলেন: “খারাপ কাজের পরে ভালো কাজ করো, আমি তা মাফ করে দেব।”

আল্লাহ বলেন: “দিনের দুই প্রান্তে এবং রাতের প্রথম ভাগে নামাজ কায়েম করো। নিশ্চয়ই ভালো কাজগুলো খারাপ কাজগুলোকে মুছে দেয়। এটা স্মরণকারীদের জন্য উপদেশ।” (সূরা হুদ)।

তিন: ‘মানুষের সঙ্গে উত্তম আচরণ করো’ মানুষের সঙ্গে এমন ব্যবহার করো, যেমন ব্যবহার তুমি তাদের কাছ থেকে আশা করো।” অনেকে অন্যকে কষ্ট দেয়, অপবাদ দেয়, গীবত করে বা অন্যায় আচরণ করে — অথচ নিজের সঙ্গে এমন হলে সহ্য করতে পারে না।

রাসূল (সাঃ) বলেন: “মানুষের সঙ্গে এমনভাবে চলো, যেমনটা তুমি চাও তারা তোমার সঙ্গে করুক।” রাসূল (সাঃ) বলেছেন, যে ব্যক্তি চায় জাহান্নাম থেকে মুক্তি ও জান্নাতে প্রবেশ, সে যেন দুটি কাজ করে: ১. আল্লাহ ও আখিরাতে বিশ্বাস নিয়ে জীবনযাপন ও মৃত্যু লাভ। ২. মানুষের সঙ্গে এমন ব্যবহার করা, যেমন ব্যবহার সে নিজের জন্য চায়।

আরেকটি হাদীসে তাঁকে জিজ্ঞেস করা হয়েছিল, “মানুষকে জান্নাতে নিয়ে যাওয়ার সবচেয়ে বড় মাধ্যম কী? জবাবে তিনি বললেন: “আল্লাহভীতি এবং উত্তম চরিত্র।”

রাসূল (সাঃ) “দেউলিয়া মুসলিম” সম্পর্কে সতর্ক করেছেন। সে এমন ব্যক্তি- যে নামাজ, রোজা ও সদকা নিয়ে কিয়ামতের ময়দানে আসবে, কিন্তু মানুষকে গালি দিয়েছে, অপবাদ দিয়েছে, কারও হক মেরেছে। তখন তার নেক আমল থেকে সেই হকের ক্ষতিপূরণ আদায় করা হবে। যখন তার আমল শেষ হয়ে যাবে, তখন তাদের গুনাহ তার ওপর চাপিয়ে দেয়া হবে এবং সে জাহান্নামে নিক্ষিপ্ত হবে।

ইমাম শাইখ জামাল আবদি-নাসির খুতবার সমাপ্তিতে বলেন, এই তিনটি উপদেশই একজন মুসলমানের জীবন বদলে দেওয়ার জন্য যথেষ্ট । আল্লাহ আমাদের এসব উপদেশ অনুযায়ী
জীবনযাপন করার তাওফিক দিন। আমীন।




Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *



পুরানো সংবাদ সংগ্রহ

সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি রবি
 
১০১১
১২১৩১৪১৫১৬১৭১৮
১৯২০২১২২২৩২৪২৫
২৬২৭২৮২৯৩০৩১  
All rights reserved © shirshobindu.com 2012-2025