সুমন আহমেদ: নানা কারণে ব্রিটেনে আলেচিত সমালোচিত ঘটনাবহুল বিদায়ী বছর ২০১৩ সাল। প্রাপ্তি আর অপ্রাপ্তির মধ্য দিয়ে বিদায় নিতে যাচ্ছে বছরটি। বছর জুড়ে নানা আলোচিত ঘটনা আর পত্রিকার পাতায় সংবাদ স্থান করে নেয়ায় তা আলোচনায় ছিল মানুষের মুখে মুখে। এরমধ্যে অনেক ঘটনা কমিউনিটিকে নাড়া দিয়েছে ব্যাপকভাবে। ২০১৩ সালে তেমন কিছু আলোচিত ঘটনা তুলে ধরা হলো পাঠদের উদ্দেশে।
ব্রিটেনে ঘোড়ার মাংস কেলেংকারী:
বড় ধরনের প্রশ্নবোদক চিহ্ন দিয়ে শুরু হয় ২০১৩ সাল। শুরুতে বছর জুড়ে তুলপাড় হয় গরুরর মাংসের বার্গার ও অন্যান্য পণ্যের সাথে ঘোড়ার মাংসের উপস্থিতি নিয়ে। টেসকো আজডাসহ বেশ কয়েকটি রিটেল শপের বাজারে বার্গারে ২৯ শতাংশ ঘোড়ার মাংসের মিশ্রন উপস্থিতিতে তুলপাড় তুলে পুরো ইন্ডাষ্ট্রিতে। মূলত আয়ারল্যান্ডের সীমান্তবর্তী এলাকায় বেশ কিছু কারখানায় এসব পণ্যে উৎপাদিত হতো। জানুয়ারী থেকে এপ্রিল পর্যন্ত আলোচিত শিরোনাম ছিল এই ঘোড়ার মাংসের ঘটনা।
লি রিগভী হত্যাকান্ড:
এই বছরের আলোচিত আরও একটি ঘটনা একজন ব্রিটিশ সেনা হত্যাকান্ড যার নাম লি রিগভী। ২৯শে মে দক্ষিন লন্ডনের উলউইচের সেনা ব্যারাকের কাছে তাকে জবাই করে হত্যাকরে দুই মুসলমান নামধারী ব্যাক্তি মাইকেল এডগোলাজো ও মাইকেল এডওয়ালে। নিজেদের মুসলমান দাবি করে তারা এই হত্যাকান্ড চালায়। এই ঘটনার প্রেক্ষিতে বেশ চাপের মধ্যে পড়ে মুসলমান কমিউনিটি। এরই মধ্যে মার্চ করে উগ্রবাদপন্থী সংগঠন ইডিএল সহ বেশ কয়েকটি উগ্রবাদ অনুসারী মুসলিমব্রিদেস্বি সংগঠন। এ ঘটনায় মুসলিমসহ অন্যান্য শান্তিপ্রিয় সংগঠন এর তীব্র প্রতিবাদ জানায়।
রমযান মাসে চ্যানেল ফোরে আযান প্রচার:
লি রিগভীর হত্যাকান্ডের মুসলিম কমিউনিটিতে তুমুল ঝড় বইলেও ২০১৩ সালের রময়ান মাসে মেইনই স্ট্রিমে তৈরি হয় এক যুগান্তকারী উদাহরণ। এ বছর রময়ান মাসে প্রথমবারের মতো কোন মূলধারার টেলিভিশন ফজরের আযান প্রচার করে। এই আযান প্রচারে বহু আলোচনা সমালোচনার জন্মদিলেও চ্যানেল ফোরে আগামীতেও একইভাবে আযান প্রচারের ঘোষনা দেয়।
ব্রিটেনের ভবিষ্যাত রাজা প্রিন্স জর্জের জন্ম:
এই বছর জুলাইয়ের ২২ তারিখ ব্রিটেনের ভবিষ্যত রাজা প্রিন্স জর্জ জন্ম নেয়। প্রিন্স উইলিয়াম ও প্রিন্সেস ক্যাট মিডলটনের কোলে জন্ম নেয়া এই ছোট্র প্রিন্স ব্রিটিশ রাজপরিবারে ভবিষ্যত ইতিহাসের পুনরাবিত্তি করেন। তার জন্মের মাধ্যমেই মাধ্যমেই এক সাথে চার ব্রিটিশ রাজ সিংহাসনের উত্তরাধকারীকে এক সাথে দ্বিতীয়বারের মতো দেখতে পায় বিশ্ববাসী। ১৮৯৪ সালে কুইন ভিক্টরিয়ার শাসন আমলেও একই সময়ে চার জন রাজ সিংহাসনের জন্য জীবিত ছিলেন।
মার্গার ট্রেচারের মৃত্যু:
অনেক প্রাপ্তির মধ্যে ব্রিটেন হারিয়েছে অনেক কিছু। মস্তিস্কের রক্তক্ষরণ জনিত রোগে ভোগে মৃতু বরণ করে ব্রিটেনের একমাত্র ব্রিটিশ মহিলা প্রধানমন্স্রী মার্গার ট্রেচার। আলোচিত ও সমালোচিত এই আয়রণ লেডি নামে খ্যাত এই সাবেক মহিলা প্রধানমন্ত্রীর মরদেহ সমাধিসহ সকল ধর্মীয়কাজে ব্রিটেনের ইতিহাসে ব্রিটিশ সরকারের ছিল সবচেয়ে ব্যয় বহুল আয়োজন।
উঠতিদের অবাধ যৌনতা ঠোকাতে প্রধানমন্ত্রী ডেভিড ক্যামেরুণের নিজ উদ্যেগ:
অবাধ যৌনতা ও পশ্চিমাবিশ্বে স্বাভাবিক মনে হলেও তার বিকৃতি এমন পর্যায়ে পৌছেছে শেষ পর্যন্ত নিয়ে মাথা গামাতে হয় খোদ ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রীকেও। ব্রিটেনে উঠতি বয়সীদের অবাধ যৌনতা ঠেকাতে খোদ ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রীই উদ্যেগী হোন এ বছর।
২০১৩ সালে চাইল্ড সেক্স এবিউস ও ইন্টারনেটে অবাধ পর্ণগ্রাফি বন্ধ করতে রীতিমতো আইন পাশ করতে হয় পার্লামেন্টে। এ আইন পাশে গুগলসহ অন্যন্য সার্চে ইঞ্জিনে এই পর্ণগ্রাফি বন্ধ হয়।
ব্রিটেনে বণ্যায় প্লাবিত লোকজনের ক্রিসমাস উদযাপন:
বছরের শেষ দিকে ব্রিটিশরা একটি তুষাড় শুভ্র ক্রিসমাস পালন করেলেও এবার তা জুটেনি তাদের কপালে। এর বদলে এবার ২০১৩ বন্যা ঝড় অন্যন্য মহামারির মধ্যে শেস করতে হয়েছে ২০১৩ সাল। এ বছর আকস্মিকভাবে বন্যায় প্লবিত ব্রিটিশদের ক্রিসমাস উদযাপন মাটি করে দিল।
গত প্রায় সাত বছরের মধ্যে এই বছর আকস্মিক প্রবল বন্যার কবলে পতিত হয় ব্রিটেন। এই ক্রিসমাসে ব্রিটেনে বিদুৎহীন থাকে প্রায় ৫০ হাজার বাড়িঘর ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠান।