বিনোদন ডেস্ক: সালমান খানের ব্যক্তিগত জীবন নিয়ে আগ্রহের কমতি নেই তাঁর অগণিত ভক্তের। একাধিক নারীর সঙ্গে প্রণয়ে জড়িয়ে বহুবারই খবরের শিরোনাম হয়েছেন বলিউডের প্রভাবশালী এ তারকা অভিনেতা। ‘বিগহার্ট লাভারবয়’ তকমাও বসেছে তাঁর নামের পাশে। গত ২৭ ডিসেম্বর ৪৮ বছরে পা রেখেছেন সালমান। জীবনের এতটা পথ পাড়ি দিলেও এখন পর্যন্ত বলিউডের অন্যতম কাঙ্ক্ষিত ব্যাচেলর তকমাটা ধরে রেখেছেন তিনি। বিয়ে করে থিতু হতে চাইলেও ব্যাটে-বলে মেলেনি সালমান খানের। একের পর এক প্রেমে ব্যর্থ হয়ে বলিউডে বিরল নজিরই গড়েছেন খান সাহেব। সালমান যাঁদের জীবনসঙ্গী হিসেবে পেতে চেয়েছিলেন এমন আটজন নারীকে নিয়ে সম্প্রতি একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে টাইমস অব ইন্ডিয়া।
সংগীতা বিজলানি
সালমানের ব্যক্তিগত জীবন প্রথম খবরের পাতায় আসে আশির দশকে। ১৯৮০ সালের মিস ইন্ডিয়া খেতাব পাওয়া মডেল ও বলিউডের অভিনেত্রী সংগীতা বিজলানির সঙ্গে প্রণয়ে জড়িয়ে মুখরোচক খবরের জোগান দেন সালমান। ঘন ঘন বিভিন্ন জায়গায় ঘুরে বেড়াতেন তাঁরা। শুধু তা-ই নয়, সব সময় এ জুটিকে একসঙ্গেই দেখা যেত। এমনকি তাঁদের বিয়ের দিনক্ষণও চূড়ান্ত হয়েছিল। এ প্রসঙ্গে কিছুদিন আগে কফি উইথ করণ অনুষ্ঠানে সালমান বলেন, ‘একটা সময়ে সত্যিই বিয়ে করে থিতু হতে চেয়েছিলাম। কিন্তু নানা কারণে শেষ পর্যন্ত তা হয়ে ওঠেনি। বিয়ের সব প্রস্তুতি নেওয়ার পর শেষ মুহূর্তে গিয়ে ভেস্তে যাওয়ার মতো ঘটনাও ঘটেছে আমার জীবনে।’
সাবেক প্রেমিকা সংগীতা বিজলানির প্রসঙ্গ টেনে সালমান এ-ও জানান, সংগীতার সঙ্গে তাঁর বিয়ের দিনক্ষণ চূড়ান্ত হয়েছিল। এমনকি বিয়ের কার্ডও ছাপানো হয়ে গিয়েছিল। কিন্তু শেষ মুহূর্তে সংগীতা জানতে পারেন, সালমান তাঁর সঙ্গে প্রতারণা করেছেন। আরেক নারীর সঙ্গে সালমানের প্রেমের খবর জানার পর তাঁকে ছেড়ে চলে যান সংগীতা। সালমানকে ছেড়ে সংগীতা বিয়ে করেছিলেন ভারতীয় ক্রিকেট দলের সাবেক অধিনায়ক আজহারউদ্দিনকে। ১৪ বছর সংসার করার পর আজহারউদ্দিনের সঙ্গে বিচ্ছেদ ঘটে সংগীতার। সালমানের সঙ্গে সম্পর্ক চুকেবুকে গেলেও, তাঁর পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে ঠিকই সুসম্পর্ক বজায় রেখেছেন সংগীতা। সালমানও এখনো সংগীতাকে নিজের পরিবারের সদস্য বলেই ভাবেন।
সোমি আলী
সংগীতার পর সালমানের জীবনে আসেন সোমি আলি। সোমির মা ইরাকি ও বাবা পাকিস্তানি। সোমি থাকতেন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে। বলিউডে ক্যারিয়ার গড়তে মুম্বাই পাড়ি জমান কিশোরী সোমি। তাঁর দাবি, মাত্র ১৫ বছর বয়সে সালমানের প্রেমে পড়েছিলেন তিনি। সালমানের সঙ্গে প্রেমের বিষয়টিকে একদমই মেনে নিতে পারেননি সোমির বাবা। তার পরও সালমানের কাছে নিজেকে সঁপে দেন সোমি। ১৯৯৩ সালে মুক্তি পায় সোমি ও সুনীল শেঠি অভিনীত ব্যবসাসফল ছবি ‘আনথ’। সোমির সঙ্গে সালমানের প্রেম অনেকদিন টিকলেও, স্থায়ী হয়নি। একটা সময়ে তাঁদের ভালোবাসার সম্পর্কে ঘৃণা এসে ভর করে। গণমাধ্যমের সামনে সালমানের অ্যালকোহল আসক্তির কথা ফাঁস করে দেন সোমি। জনসমক্ষে সালমানের মতো জনপ্রিয় তারকার হাঁড়ির খবর ফাঁস করে দেওয়ায় সোমির ওপর প্রচণ্ড বিরক্ত হন খান সাহেব। সোমির শিশুসুলভ আচরণে বিরক্ত সালমান তাঁর সঙ্গে প্রেমের ইতি টানেন। অন্যদিকে খবর রটে, সালমানের মাত্রাতিরিক্ত মদ্যপান আর বাজে আচরণ সহ্য করতে না পেরেই তাঁকে ছেড়ে যেতে বাধ্য হয়েছিলেন সোমি।
স্নেহা উলাল ও ঐশ্বরিয়া রাই বচ্চনঐশ্বরিয়া রাই বচ্চন
সালমানের তৃতীয় প্রেমিকা হিসেবে নাম লেখান বলিউডের অভিনেত্রী ও সাবেক বিশ্বসুন্দরী ঐশ্বরিয়া রাই বচ্চন। ১৯৯৯ সালে মুক্তি পাওয়া ‘হাম দিল দে চুকে সোনম’ ছবিতে জুটি বেঁধে অভিনয় করেছিলেন সালমান-ঐশ্বরিয়া। সঞ্জয় লীলা বানশালী পরিচালিত ছবিটিতে অভিনয় করতে গিয়ে প্রথম দেখাতেই ঐশ্বরিয়ার প্রেমে পড়ে যান সালমান। ‘বিগহার্ট লাভারবয়’ সালমানের প্রেমের ফাঁদে ধরা দিলেও কখনোই জনসমক্ষে স্বীকার করেননি ঐশ্বরিয়া। পছন্দের মানুষদের দামি সব উপহার দেওয়ার বাতিক আছে সালমানের। খবর রটেছিল, অ্যাশকে বিলাসবহুল বাড়ির পাশাপাশি দামি গাড়িও উপহার দিয়েছিলেন সালমান। বরাবরের মতো অ্যাশের সঙ্গেও সম্পর্ক টিকিয়ে রাখতে ব্যর্থ হন সালমান। যথারীতি এই ভাঙনের জন্যও দায়ী করা হয় সালমানের বাজে আচরণকে। ‘চলতে চলতে’ ছবির সেটে ঐশ্বরিয়ার সঙ্গে অত্যন্ত বাজে ব্যবহার করে তাঁকে চিরদিনের জন্য হারিয়ে ফেলেছিলেন সালমান। ছবিটিতে শুরুর দিকে শাহরুখ খানের বিপরীতে অভিনয়ের জন্য চুক্তিবদ্ধ হয়েছিলেন অ্যাশ। পরে অবশ্য তাঁর পরিবর্তে অভিনয় করেন রানী মুখার্জি। ‘চলতে চলতে’ ছবির সেটে ঐশ্বরিয়ার সঙ্গে অশোভন আচরণ শুরু করলে সালমানকে শান্ত করার চেষ্টা করেন শাহরুখ। এতে প্রচণ্ড ক্ষিপ্ত হয়ে শাহরুখের সঙ্গে বাগবিতণ্ডা শুরু করে দেন সালমান। একসময়ের কাছের বন্ধু সালমানের কাছ থেকে এমন আচরণ পাওয়ার কথা ভাবতেই পারেননি শাহরুখ। মূলত সেদিনই শাহরুখ-সালমান বন্ধুত্বে প্রথম চিড় ধরেছিল। ২০০২ সালের মার্চে সালমানের সঙ্গে সম্পর্কের ইতি টানেন ঐশ্বরিয়া। এ আঘাত সহ্য করতে না পেরে এক রাতে মাতাল অবস্থায় ঐশ্বরিয়ার বাড়িতে হানা দেন সালমান। ঘরের আসবাব ভাঙচুর করেন এবং ঐশ্বরিয়ার পরিবারের সদস্যদের হুমকি দেন। এ ঘটনায় তাঁর বিরুদ্ধে পুলিশের কাছে অভিযোগও দায়ের করা হয়েছিল।
স্নেহা উলাল
ঐশ্বরিয়াকে হারিয়ে ঠিক তাঁর মতোই দেখতে স্নেহা উলালকে বলিউডে হাজির করেন সালমান। তিনি ২০০৫ সালের এপ্রিলে মুক্তি পাওয়া ‘লাকি’ ছবিতে স্নেহার বিপরীতে অভিনয় করেন। অ্যাশের সঙ্গে স্নেহার চেহারার অদ্ভুত সাদৃশ্য দর্শকদের বেশ অবাক করে। সালমানের বোন অর্পিতা খানের বন্ধু স্নেহার বলিউড অভিষেক হয়েছিল মাত্র ১৮ বছর বয়সে। সালমানের সঙ্গে স্নেহার সখ্যের খবর যেমন দ্রুত ছড়িয়েছিল, ঠিক তেমনি দ্রুততার সঙ্গে মিলিয়েও গিয়েছিল।
ক্যাটরিনা কাইফ ও জেরিন খানক্যাটরিনা কাইফ
ক্যাটরিনা কাইফকে দেখে ভালো লাগার পর তাঁকে পটাতে ব্যস্ত হয়ে পড়েছিলেন সালমান খান। ২০০৫ সালের জুলাই মাসে মুক্তি পায় সালমান ও ক্যাটরিনা অভিনীত ‘ম্যায়নে পেয়ার কিউ কিয়া’ ছবিটি। পরের বছর ‘পার্টনার’ ছবিতে সালমান ও গোবিন্দর সঙ্গে কেন্দ্রীয় নারী চরিত্রে অভিনয়ের সুযোগ পান ক্যাটরিনা। সালমানের কল্যাণে পর পর দুটি হিট ছবি উপহার দিয়ে নির্মাতাদের নজরে আসেন ক্যাটরিনা। ২০০৭ সালে মুক্তি পায় ক্যাটরিনা ও অক্ষয় কুমার অভিনীত ব্লকবাস্টার হিট ছবি ‘নমস্তে লন্ডন’। এরপর আর পেছন ফিরে তাকাতে হয়নি ক্যাটরিনাকে। একের পর এক সাফল্যের সিঁড়ি ডিঙিয়েছেন। বলিউডের প্রেমের চিরায়ত রীতি মেনে বরাবরই প্রেমের কথা অস্বীকার করেছেন সালমান-ক্যাটরিনা। কিন্তু একাধিকবার তাঁদের অন্তরঙ্গ অবস্থায় ক্যামেরাবন্দী করেছেন আলোকচিত্রীরা। বহুবার খবরের শিরোনামে এসেছে সালমান-ক্যাটরিনার প্রেম। বলিউডে প্রতিষ্ঠা পাওয়ার পর ধীরে ধীরে সালমানের সঙ্গে ক্যাটরিনার দূরত্ব বাড়তে থাকে। একটা সময়ে গিয়ে তাঁদের প্রেম ভেঙে যায়। সালমানকে ছেড়ে বলিউডের আরেক অভিনেতা রণবীর কাপুরের কাছে নিজেকে সঁপে দেন ক্যাটরিনা।
জেরিন খান
ক্যাটরিনার কাছ থেকে প্রত্যাখ্যাত হওয়ার পর ঠিক তাঁর মতোই দেখতে জেরিন খানকে বলিউডে কাজের সুযোগ করে দেন সালমান। ২০১০ সালে ‘বীর’ ছবির মাধ্যমে বলিউডে পা রাখেন জেরিন। ধারণা করা হয়েছিল, সালমানের জীবনে আলো ছড়াবেন হুবহু ক্যাটরিনার মতো দেখতে জেরিন। কিন্তু বক্স অফিসে ‘বীর’ ছবির ভরাডুবির মতো সালমান-জেরিন প্রেমের অধ্যায়ও হালে পানি পায়নি।
ইলুলিয়া ভেঞ্চুর
গত বছর সালমানের প্রেমিকার তালিকায় যুক্ত হয় রোমানীয় টিভি তারকা ইলুলিয়া ভেঞ্চুরের নাম। ২০১১ সালে মুক্তি পাওয়া ‘বডিগার্ড’ ছবির শুটিং করতে আয়ারল্যান্ডের রাজধানী ডাবলিনে গিয়েছিলেন সালমান। সেখানেই ইলুলিয়ার সঙ্গে তাঁর প্রথম পরিচয়। গত বছরের মে মাসে ভারতে আসেন ইলুলিয়া। নিজের বাড়িতেই তাঁর থাকার ব্যবস্থা করে দিয়েছিলেন সালমান। বিভিন্ন জায়গায় ঘুরে বেড়াতেও দেখা যায় তাঁদের। এমনকি ইলুলিয়াকে বিয়ে করতে যাচ্ছেন সালমান—এমন খবরও চাউর হয়। শুরুতে গোপন থাকলেও পরে জানা যায়, রোমানীয় সংগীতশিল্পী মরিয়াস মগাকে বিয়ে করেছিলেন ইলুলিয়া। বিষয়টা জানার পর সালমানকে ইলুলিয়ার সঙ্গ ত্যাগ করতে বলেন সালমানের বাবা-মা। বাধ্য ছেলের মতো বাবা-মায়ের কথা শুনে ইলুলিয়ার সঙ্গে সম্পর্ক ভেঙে দেন ‘দাবাং’ তারকা সালমান।
এলি আবরাম
সর্বশেষ সুইডিশ অভিনেত্রী এলি আবরামের সঙ্গে সালমানের সখ্যের খবর চাউর হয়েছে। ২০১৩ সালের ২৫ অক্টোবর মুক্তি পাওয়া ‘মিকি ভাইরাস’ ছবির মাধ্যমে এলির বলিউড অভিষেক হয়। তবে ছবিটি মুক্তির আগেই তিনি আলোচনায় আসেন সালমান খানের সঞ্চালনায় ‘বিগ বস ৭’-এর প্রতিযোগী হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে। গত সেপ্টেম্বরে শুরু হওয়া ‘বিগ বস ৭’ অনুষ্ঠানে এলির সঙ্গে সালমানের সখ্য নিয়ে নানা কানাঘুষা ওঠে। সালমান-এলির লুকোচুরির কারণে তাঁদের সম্পর্কের রসায়ন নিয়ে নানা কথার চর্চা শুরু হয়েছে বলিউডে।