নিউজ ডেস্ক: বাংলাদেশের দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে যুক্তরাজ্যের হাউজ অব কমন্সে আবারো আলোচনা হয়েছে। যাতে বাংলাদেশের সঙ্গে কাজ চালিয়ে যাওয়ার পক্ষে মত দিয়েছেন একজন মন্ত্রী। অবশ্য জনগণের প্রত্যাশা পূরণে রাজনীতিবিদরা ব্যর্থ হলে কঠোর হওয়ারও পরামর্শ দিয়েছেন তিনি। দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে যুক্তরাজ্যের হাউজ অব কমন্সে বুধবার এক বিতর্কে এ ধরনের ভাষ্য ওঠে এসেছে।
আলোচনার শেষ বক্তা হিসেবে ফরেন অ্যান্ড কমনওয়েলথ প্রতিমন্ত্রী হাগ রবার্টসন বলেন, উন্নয়ন, স্থিতিশীল রাজনীতি এবং গণতান্ত্রিক ধারা অব্যাহত রাখতে যুক্তরাজ্যের উচিত বাংলাদেশের সঙ্গে কাজ চালিয়ে যাওয়া। তবে জনগণের প্রত্যাশা পূরণে রাজনীতিবিদরা ব্যর্থ হলে প্রয়োজনে কঠোর হতে হবে। তিনি বলেন, বাংলাদেশের সঙ্গে যুক্তরাজ্যের সম্পর্ক ঐতিহাসিক। আমরা গণতন্ত্র, সুশাসন এবং টেকসই উন্নয়নে বিশ্বাসী।
দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন এবং তা ঘিরে সহিংসতার কথা তুলে ধরে ব্রিটিশ মন্ত্রী বলেন, সেক্ষেত্রে তিনটি বিষয়ে আমাদের দায় রয়েছে। প্রথমতঃ নির্বাচনে সবার অংশগ্রহণ নিশ্চিত না হওয়া এবং সহিংসতার ঘটনায় দুঃখ প্রকাশ। দ্বিতীয়তঃ দীর্ঘ মেয়াদি টেকসই সমাধানে পৌঁছাতে রাজনৈতিক দলগুলোকে সংলাপে বসানো। তৃতীয়তঃ বাংলাদেশের ভবিষ্যত নিরাপত্তা এবং উন্নয়নের জন্য কার্যকর গণতন্ত্র নিশ্চিত।
সংবিধান অনুযায়ী দশম জাতীয় নির্বাচনে কোনো সমস্যা না থাকলেও বিরোধী দলের অংশগ্রহণ ছাড়া এ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ার জনগণের ইচ্ছার প্রতিফলন ঘটেছে কি-না সে বিষয়েও দৃষ্টি দেয়া জরুরি বলে মনে করেন হাগ রবার্টসন। নির্বাচনী সহিংসতায় হতাহতের ঘটনায়ও দুঃখ প্রকাশ করেন তিনি।
হরতাল ও অবরোধের মতো কর্মসূচি প্রত্যাহার এবং বিএনপির কয়েকজন জ্যেষ্ঠ নেতাকে মুক্তি দেয়ার বিষয় তুলে ধরে ফরেন অ্যান্ড কমনওয়েলথ প্রতিমন্ত্রী বলেন, রাজনৈতিক দলগুলোর আরো দায়িত্ব রয়েছে। সবার আগে তাদের জনগণের কথা ভাবতে হবে। এর আগে আলোচনার শুরুতে লেবার পার্টির লুটন সাউথের সাংসদ গ্যাভিন শুকার বাংলাদেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি তুলে ধরে বলেন, এ থেকে যুক্তরাজ্যেরও অনেক কিছু শেখার আছে। তাছাড়া এখন যুক্তরাজ্যের উচিত বাংলাদেশের পাশে দাঁড়ানো।
জবাবে একই দলের অক্সফোর্ড ইস্টের সাংসদ অ্যান্ড্রু স্মিথ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের বিষয়টি তুলে ধরেন। তিনি প্রশ্ন রাখেন, দশম সংসদ নির্বাচনের মাধ্যমে কি আওয়ামী লীগ অবাধ, নিরপেক্ষ নির্বাচন অনুষ্ঠানের প্রক্রিয়া থেকে সরে আসেনি? যুক্তরাজ্যে বিপুল সংখ্যক বাংলাদেশি প্রবাসী থাকার কথা উল্লেখ করে লেবারপার্টির এমপি জিম কানিংহ্যাম বলেন, অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের অনুপস্থিতিতে নির্বাচনের কারণে বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে তারা দেশে ফেরার ক্ষেত্রে অনিশ্চয়তায় রয়েছে।সেক্ষেত্রে বিরোধী রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীদের হয়রানি না করতে জাতিসংঘ ও অন্যান্য আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোর কি উচিত নয় সরকারের উপর চাপ সৃষ্টি করা?
এর আগে গত ১৬ জানুয়ারি ইউরোপীয় পার্লামেন্টের এক প্রস্তাবে বাংলাদেশে বিবাদমান দুই পক্ষকে সমঝোতায় এসে সঙ্কট সমাধানের আহ্বানও জানানো হয়। প্রস্তাবে বিরোধী দল দমনের পথ থেকে সরকারকে সরে আসতে বলার পাশাপাশি জামায়াতে ইসলামী ও হেফাজতে ইসলাম থেকে দূরে থাকতে বিএনপিকে আহ্বান জানায় ইউরোপীয় পার্লামেন্ট। এছাড়া ইতোমধ্যে কানাডার পক্ষ থেকেও সব রাজনৈতিক দলকে সমঝোতার জন্য সংলাপে বসার তাগিদ দেয়া হয়েছে। তবে ভারত, রাশিয়া ও চীন নতুন সরকারকে সমর্থন জানিয়ে একসঙ্গে কাজ করে যাওয়ার কথা বলেছে।
অবশ্য ব্রিটিশ কনজারভেশন পার্টির সাংসদ রেহমান চিস্তি মনে করেন আন্তর্জাতিক মহলের উচিত নতুন সরকারের সঙ্গে কাজ করে যাওয়া। তিনি বলেন, যা কিছু ঘটেছে তা অতীত। আমাদের এগিয়ে যাওয়া উচিত। আন্তর্জাতিক মহলের উচিত নতুন সরকারকে সহযোগিতায় হাত বাড়িয়ে দেয়া। পাশাপাশি একটি গণতান্ত্রিক ধারা অব্যাহত রাখতে ভবিষ্যত নির্বাচনের জন্য সরকারকে একটি সময় বেঁধে দেয়া। গত ৫ জানুয়ারি বিএনপিবিহীন নির্বাচনে মোট ১২টি দল অংশ নেয় এবং ১৫৩ আসনে প্রার্থীরা বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হওয়ায় ভোট হয় ১৪৭টি আসনে। তাতে নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেয়ে আওয়ামী লীগ ইতোমধ্যে টানা দ্বিতীয় দফায় সরকার গঠন করেছে।