আদিত্য আরাফাত: বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) টানা তিনদিনের রিমাণ্ডে স্বীকার করেছেন যে, যুক্তরাজ্যের লয়েডস্ টিএসবি অফশোর প্রাইভেট ব্যাংকে তার ও স্ত্রীর যৌথ অ্যাকাউন্টে ৮ লাখ ৪ হাজার ব্রিটিশ পাউন্ড জমা রয়েছে। বাংলাদেশি টাকায় এর পরিমাণ ৯ কোটি ৫৩ লাখের বেশি। একইসঙ্গে এ মুদ্রা দেশ থেকে পাচার করেননি জানিয়ে দুদকের রিমান্ডে তিনি বলেছেন, ওই দেশে আয় করেই অ্যাকাউন্টে অর্থ রাখা হয়েছে। যা বৈধ বলে দাবি করেছেন বিএনপির হেভিওয়েট এ নেতা।
রাষ্ট্রীয় দুর্নীতি বিরোধী সংস্থা দুদকের কর্মকর্তারা মনে করছেন, পাচার করা ওই অর্থ বর্তমানে লন্ডনের ব্যাংকটিতে জব্দ অবস্থায় থাকায় খন্দকার মোশাররফ যৌথ অ্যাকাউন্টে ব্রিটিশ পাউন্ডের বিষয়টি রিমান্ডে অস্বীকার করতে পারেননি।
দুদক জানায়, বিএনপির এ নেতা টাকা পাচার করার কথা অস্বীকার করলেও লন্ডন মেট্রোপলিটন পুলিশের এক তদন্তে লয়েডস টিএসবি ব্যাংকের যৌথ হিসাবে ওই অর্থ যে মানিলন্ডারিং করে পাঠানো হয়েছে, তা প্রমাণিত হয়েছে। এ অর্থ দেশে ফেরত আনতে যাবতীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করছে দুদক। বিদেশে অর্থ পাচারের মামলায় গত বুধবার রাতে গুলশানের নিজ বাসভবন থেকে দুদকের একটি বিশেষ টিম খন্দকার মোশাররফকে গ্রেফতার করেন। গ্রেফতারের পরদিনই দুদক ঢাকা মূখ্য মহানগর হাকিমের আদালতে তিনদিনের রিমাণ্ডের আবেদন করে। আদালত দুদকের আবেদন মঞ্জুর করার পর দুদক কার্যালয়ে তাকে রিমান্ডে নেওয়া হয়। তিনদিনের রিমাণ্ড শেষে গত রোববার আদালত তাকে কারাগারে পাঠান। দুদকের উপ-পরিচালক আহসান আলী তাকে রিমাণ্ডে জিজ্ঞাসাবাদ করেন।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, টানা তিনদিনের রিমাণ্ডে খন্দকার মোশাররফ দুদককে জানিয়েছেন, তিনি শারীরিকভাবে কিছুটা অসুস্থ ও ক্লান্ত। জিজ্ঞাসাবাদে একাধিকবার বিশ্রামের সময়ও চান তিনি। দুদক নিয়ম অনুযায়ী তাকে বিশ্রাম ও ওষুধ খাওয়ার সুযোগ দেন। রিমাণ্ডে দুদক কর্মকর্তা তার কাছে অর্থ পাচারের অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, লয়েডস্ টিএসবি অফসোর প্রাইভেট ব্যাংকের সব টাকাই তার ও তার পরিবারের আয়ের টাকা। দেশ থেকে টাকা নিয়ে ব্যাংকটিতে রাখা হয়নি।
মোশাররফের এমন বক্তব্যে দুদক তাদের কাছে মানি লন্ডারিংয়ের সকল তথ্য-উপাত্ত দেখানোর পরও তিনি গ্রেফতার থেকে মুক্ত হতে পারলেই তিনি আদালতের মাধ্যমে নির্দোষ হবেন বলে দাবি করেন। রিমান্ড খন্দকার মোশাররফ বারবার বৈধ পন্থায় আয় করে ব্যাংকটিতে টাকা জমা রাখার কথা বললেও কিভাবে তিনি আয় করেছেন তারও কোনো সুস্পষ্ট যুক্তি দেখাতে পারেননি।
জিজ্ঞাসাবাদের বিষয়ে জানতে চাইলে দুদক কমিশনার মো: সাহাবুদ্দিন চুপ্পু সোমবার রাতে বাংলানিউজকে জানান, তিনি দাবি করেছেন ব্রিটিশ পাউন্ড তার ওখানে জমা আছে, যা সেদেশে তিনি আয় করেছেন। দুদকের তদন্তে তার এমন কথার কোনো সত্যতা পাওয়া যায়নি। তিনি বলেন, আমাদের তদন্ত বলছে সে সত্য বলছে না।
দুদক কমিশনার বলেন, তিনি যে সত্য বলছেন না তার প্রমাণতো আমাদের কাছে আছে। আমরা তথ্য-প্রমাণের ভিত্তিতে তার বিরুদ্ধে এজাহার করেছি। এখন বাকিটা আদালতের বিষয়। আদালতের কাছে আমরা আমাদের তথ্য-প্রমাণ তুলে ধরবো। যুক্তরাজ্যের বাইলিবিক অব গুয়েরনসের ফিন্যান্সিয়াল ইনভেস্টিগেশন ইউনিটের এক তদন্ত প্রতিবেদনে বলা হয়, পাচার করা ওই পরিমাণ অর্থ বর্তমানে জব্দ অবস্থায় আছে।
দুদক জানায়, লন্ডন মেট্রোপলিটন পুলিশের এক তদন্তে লয়েডস টিএসবি ব্যাংকে যৌথ হিসাবে ওই অর্থের তথ্য পাওয়া যায়। ওই অর্থ দেশে ফেরত আনতে যাবতীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে দুদক। যুক্তরাজ্যে মোট ৯ কোটি ৫৩ লাখ ৯৫ হাজার টাকা অর্থ পাচারের অভিযোগে গত ৬ ফেব্রুয়ারি রাজধানীর রমনা মডেল থানায় মামলা দায়ের করে দুদক। দুদকের পরিচালক নাসিম আনোয়ার বাদী হয়ে মামলা দায়ের করেন।
এজাহারে বলা হয়, বিগত চারদলীয় জোট সরকারের সময় স্বাস্থ্যমন্ত্রীর দায়িত্বে থাকাকালে ২০০১ থেকে ২০০৬ সাল পর্যন্ত সময়ে তিনি ক্ষমতার অপব্যবহার করে দুর্নীতির মাধ্যমে মোট ৯ কোটি ৫৩ লাখ ৯৫ হাজার ৩৮১ টাকা অর্জন করেছেন। পরে গোপনে যুক্তরাজ্যের লয়েডস টিএসবি অফশোর প্রাইভেট ব্যাংকে নিজের ও স্ত্রী বিলকিস আক্তার হোসেনের নামে যৌথ হিসাবে ওই পরিমাণ অর্থ জমা করেন। ওই ব্যাংকের ১০৮৪৯২ নম্বর হিসাবে ফিক্সড টার্ম ডিপোজিট হিসেবে অর্থ জমা করা হয়। সরকারের কোনো অনুমতি ছাড়াই গোপনে অসৎ উদ্দেশ্যে দেশ থেকে অর্থ পাচার করে তিনি মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ আইন, ২০১২-এর ১৩ ধারা, ২০০৯-এর ৪ ধারা লঙ্ঘন করেছেন।