শনিবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৫, ০৮:১৫

তুলার চাষ ও উৎপাদন দ্রুত বাড়ছে

তুলার চাষ ও উৎপাদন দ্রুত বাড়ছে

আবু খালিদ: অধিক লাভজনক হওয়ায় প্রতি বছরই তুলার চাষ ও উৎপাদন বাড়ছে। গত দুই বছরের ব্যবধানে প্রায় ৬ হাজার হেক্টর তুলা চাষের জমি এবং ৪৯ হাজার বেল তুলা উৎপাদন বৃদ্ধি পেয়েছে।

তুলা উন্নয়ন বোর্ড সূত্রে জানা গেছে এসব তথ্য। তুলা চাষিরা জানান, তাদের মধ্যে তুলা চাষের আগ্রহও প্রায় দ্বিগুণ বেড়েছে।

নাটোর জেলার তুলা চাষি ইসাহাক আলী ২০১১ সালে ২ বিঘা জমিতে তুলার চাষাবাদ করেন। ২০১২ সালে সাড়ে তিন বিঘা এবং ১৩ সালে ৭ বিঘা জমিতে তুলার চাষ করেন। এ বছর আরও বেশি জমিতে তুলা চাষের পরিকল্পনা রয়েছে তার।

ইসাহাক আলী বাংলানিউজকে বলেন, প্রতি বছরই আমার তুলা চাষের জমি প্রায় দ্বিগুণ হারে বৃদ্ধি পাচ্ছে। তবে তুলা চাষের জন্য ভালো জমির প্রয়োজন। ভালো জমির অভাবে বেশি জমিতে চাষাবাদ করতে চাইলেও সম্ভব হয় না।

তুলা উন্নয়ন বোর্ডের উপ-পরিচালক (স:দ) ড. তাসদিকুর রহমান জানান, মূলত ২০১০-১১ অর্থবছর থেকে অধিক হারে তুলা চাষ শুরু হয়েছে। ২০১০-১১ অর্থবছরে ৩৩ হাজার ৫০০ হেক্টর জমিতে ৮০ হাজার বেল, ২০১১-১২ অর্থবছরে ৩৫ হাজার ৬৭৫ হেক্টর জমিতে ১ লাখ ৩ হাজার ৪২৪ বেল, ২০১২-১৩ অর্থবছরে ৩৯ হাজার ৭৫৬ হেক্টর জমিতে ১ লাখ ২৯ হাজার বেল তুলা উৎপাদন হয়েছে। আর ২০১৩-১৪ অর্থবছরে ৫২ হাজার হেক্টর জমিতে ২ লাখ ৫ হাজার বেল তুলা উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে।

পরিসংখ্যানটি তুলে ধরে ড. তাসদিকুর রহমান বাংলানিউজকে বলেন, পূর্বের তুলনায় গত কয়েক বছর ধরে তুলার চাষ ও উৎপাদন দ্রুত বাড়ছে। সম্প্রতি হাইব্রিড, উচ্চ ফলনশীল জাতের তুলা চাষ ও মূল্য বৃদ্ধির ফলে আগের তুলনায় বর্তমানে তুলার চাষ ও উৎপাদন দ্রুত বাড়ছে।

তিনি জানান, বরেন্দ্র অঞ্চলে তুলার চাষের চাহিদা অনেক বেড়েছে। সেখানকার কৃষকরা ইতোমধ্যে তুলা চাষ শুরুও করে দিয়েছেন। পরীক্ষামূলক তুলা চাষ করেও ইতিবাচক ফল পাওয়া গেছে। এ অঞ্চলে তুলা চাষের বৃদ্ধির জন্য সরকার একটি কর্মসূচিও দিয়েছে।  আর তুলা বিক্রির শতভাগ নিশ্চিয়তাও রয়েছে।

তুলা উন্নয়ন বোর্ড সূত্রে জানা গেছে, দেশে বর্তমানে দুই ধরনের তুলার চাষাবাদ হচ্ছে। সমতল ও পাহাড়ি ভ্যালিতে সুতা কলগুলোর জন্য বার্ষিক প্রায় ৪২ লাখ বেল আঁশ তুলার চাহিদা রয়েছে। এ পরিমাণ তুলা আমদানি করতে হয় দেশের বাইরে থেকে। প্রায় ২ থেকে আড়াই হেক্টর জমিতে তুলা চাষ করে স্থানীয় চাহিদার প্রায় ৩০ শতাংশ মেটানো সম্ভব। যার আনুমাণিক মূল্য ৯ থেকে ১০ হাজার কোটি টাকা।

সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, তুলা উৎপাদনের জন্য জমি তৈরি থেকে শুরু করে বীজতুলা বাজারজাতকরণ, জিনিং, আঁশতুলা বিপণন, তুলাবীজ থেকে তেল উৎপাদন ও পরিশোধনসহ বিভিন্ন কাজে অনেক মানুষের কর্মসংস্থান হয়। এ ফসলে নারী চাষিরা বেশি কাজ করার সুযোগ পান।

এছাড়া তুলার বীজ থেকে উপজাত দ্রব্য হিসেবে ভোজ্য তেল ও খৈল পাওয়া যায়। তুলার খৈল গবাদি পশু ও মাছের খাবার হিসেবে ব্যবহার করা হয়। শুকনা তুলার গাছ কাগজ তৈরির পাল্প, পার্টিকেল বোর্ড তৈরির পাল্প ও জ্বালানি হিসেবে ব্যবহার করা যায়। তুলা চাষ বৃদ্ধি বাংলাদেশের জন্য অনেক বেশি ইতিবাচক।

রাজশাহী জেলার চারঘাট উপজেলার তুলা চাষি সাইফুল ইসলাম বলেন, অন্যান্য ফসলের চেয়ে তুলা চাষই বেশি লাভজনক। আগে সাধারণত বিঘা প্রতি ১২ থেকে ১৩ মণ করে তুলা উৎপাদিত হতো। কিন্তু এ বছরে বিঘাপ্রতি প্রায় ১৬ মণ হারে তুলা হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। এটি হলে বিঘা প্রতি ২০ হাজার টাকার বেশি লাভ হবে।

তিনি জানান, তুলা চাষের পাশাপাশি স্বল্পমেয়াদী ফসলও আবাদ করা যায় জমিতে। তিনি লাল শাকের আবাদ করে তুলা চাষের ব্যয় কমিয়ে আনেন। ভালো ফলন আর আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে তুলা চাষে বিঘাপ্রতি ২৫ হাজার টাকার বেশি লাভ হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে বলেও তিনি মন্তব্য করেন।

তুলা উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী পরিচালক আবদুল লতিফ বাংলানিউজকে বলেন, তুলা অর্থকরী ফসল। আমাদের দেশে অনেক বেশি চাহিদা রয়েছে। তুলা চাষ বৃদ্ধির জন্য সব ধরনের সহযোগিতা করা হচ্ছে।

তিনি জানান, তুলার মোট চাহিদার ৩০ থেকে ৪০ শতাংশ মেটানোর লক্ষ্যে এক্সপ্যানশান অব কোটন কাল্টিভ্যাশন (Expansion of Cotton Cultivation Project) প্রজেক্ট নামে ১২০ কোটি টাকা ব্যয়ে প্রকল্প প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে দেশে তুলা চাষে একটি নতুন দিগন্ত উন্মোচিত হবে।

সৌজন্য: বাংলানিউজ২৪




Comments are closed.



পুরানো সংবাদ সংগ্রহ

সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি রবি
 
১০১১১২১৩
১৪১৫১৬১৭১৮১৯২০
২১২২২৩২৪২৫২৬২৭
২৮২৯৩০  
All rights reserved © shirshobindu.com 2012-2025