শীর্ষবিন্দু নিউজ: গৃহকর্মীদের মানবাধিকার রক্ষার জন্য তাদের নিয়োগপত্র দেওয়া বাধ্যতামূলক করে আইন করা হবে। এমনকি আইনে তাদের সঠিক সময়ে বেতন পরিশোধ ও সাপ্তাহিক ছুটির বিধানও রাখা হবে বলে জানিয়েছেন শ্রম ও কর্মসংস্থান প্রতিমন্ত্রী অ্যাডভোকেট মুজিবুল হক চুন্নু। নিজের ঘরে যে মানবাধিকার লঙ্ঘন হচ্ছে সকলকে তার বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ার আহ্বান জানান প্রতিমন্ত্রী। শনিবার জাতীয় প্রেসক্লাবে আয়োজিত এক আলোচনাসভা ও গুণীজন সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি একথাগুলো বলেন।
স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষে মানবাধিকার কর্মী ও প্রশাসনিক কর্মকর্তাদের পুরস্কৃত করতে এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করে বাংলাদেশ আইন সহায়তা কেন্দ্র ফাউন্ডেশন (বাসক)। অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন- বাসকের চেয়ারম্যান সাগরিকা ইসলাম, সৈয়দ মোসলে উদ্দিন আহমদ, মনিমোহন বিশ্বাস, শেখ ইলিয়াছউর রহমান, খুলনা-১ আসনের সংসদ সদস্য পঞ্চাণন বিশ্বাস প্রমুখ।
অনুষ্ঠানে প্রতিমন্ত্রী বলেন, দেশে বিভিন্ন সময় সুশীল সমাজ মানবাধিকার নিয়ে কথা বলে। কিন্তু আমরা আমাদের নিজেদের ঘরে যে গৃহকর্মী থাকে তার মানবাধিকার নিয়ে কোনো কথা বলি না। দেশের অধিকাংশ ঘরে আজ গৃহকর্মীদের মানবাধিকার লঙ্ঘন হচ্ছে। তাই তাদের মানবাধিকার রক্ষার জন্য আইন করা হবে। আমি এ আইন সংসদে উত্থাপন করবো। তিনি আরও বলেন, আমাদের ঘরের ছোট গৃহকর্মী যদি একটা মিষ্টি খায় কিংবা কোনো কিছু ভেঙে ফেলে, তবে তার ওপর যে নির্মম নির্যাতন করি তার বিচার কেউ করে না। তাদের ওপর নির্যাতন করা চরম মানবাধিকার লঙ্ঘন। তাই গৃহকর্মীদের অধিকার রক্ষার জন্য এ আইন করা হবে।
নারী ও শিশুদের অধিকার রক্ষায় পুলিশের ভূমিকার কথা উল্লেখ করে প্রতিমন্ত্রী বলেন, দেশ স্বাধীন হওয়ার পেছনে বড় অবদান রয়েছে পুলিশের। বাসক পুলিশ সদস্যদের পুরস্কৃত করেছে, এ জন্য তাদের ধন্যবাদ। কারণ পুলিশ সম্পর্কে অনেক নেতিবাচক ধারণা আমাদের মাঝে আছে। তবে এটাও মনে রাখতে হবে যে, পুলিশের সবাই খারাপ নয়। তাদের মধ্যে কেউ কেউ নারী ও শিশুদের রক্ষায় কাজ করে যাচ্ছেন। তাই তাদের পুরস্কৃত করার সিদ্ধান্ত সঠিক।
বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে মানবাধিকার লঙ্ঘন বিষয়ে সংকোচ প্রকাশ করে প্রতিমন্ত্রী বলেন, আমরা তো দেশের অধিকাংশ মানুষের মৌলিক অধিকারই পূরণ করতে পারি না। সেখানে আমরা মানবাধিকার কিভাবে সংজ্ঞায়িত করবো বুঝতে পারছি না। তবে মানবাধিকার রক্ষার জন্য সকলকেই সচেতন হতে হবে। আর সেটা শুরু করতে হবে আমাদের ঘর থেকেই। পিতা-মাতার ভরণ-পোষণের বিষয়ে মুজিবুল হক চুন্নু বলেন, আমাদের দেশের অধিকাংশ সন্তান তাদের বৃদ্ধ পিতামাতার কথা চিন্তা করেন না। বিশেষ করে যখন কেউ বিয়ে করেন। তাই বৃদ্ধ পিতা-মাতার ভরণ পোষণের কথা চিন্তা করে গত সংসদ অধিবেশনে আমি একটি আইন পাস করিয়েছি। ওই আইন অনুযায়ী, সন্তানরা তার বৃদ্ধ পিতা-মাতার ভরণ পোষণ করতে বাধ্য থাকবেন। তাদের আয়ের একটি নির্দিষ্ট অংশ তার পিতামাতাকে দেওয়া হবে।
সম্প্রতি বাংলাদেশের প্রথম রাষ্ট্রপতি নিয়ে দেশে যে বিতর্ক শুরু হয়েছে তার কঠোর সমালোচনা করে তিনি বলেন, যারা বঙ্গবন্ধুকে মানে না, তারা নিজেদের অস্তিত্বকে অস্বীকার করে। তারা জ্ঞানপাপী। সম্মিলিতভাবে তাদের প্রতিরোধ করতে হবে। দেশে সন্ত্রাস নির্মূলের বিষয়ে তিনি বলেন, আমাদের দেশে রাজনৈতিক দলের সহায়তা ছাড়া কোনো সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড হয় না। তাই এ বিষয়ে রাজনৈতিক দলের নেতাদের এগিয়ে আসতে হবে। নেতারা যদি ঘোষণা দেয় যে, কোনো সন্ত্রাস বা সন্ত্রাসের পৃষ্ঠপোষকতাকারীকে দলে রাখা হবে না। তাহলেই দেশ থেকে সন্ত্রাস নির্মূল করা সম্ভব।
রাজনৈতিক দলগুলোর হরতাল করার অধিকার বিষয়ে চুন্নু বলেন, বলা হয়ে থাকে হরতাল রাজনৈতিক দলগুলোর গণতান্ত্রিক ও সাংবিধানিক অধিকার। কিন্তু আমি তা স্বীকার করি না। কারণ তারা জনস্বার্থে হরতাল দেয় না। কেউ হরতাল দেয় ক্ষমতায় যাওয়ার জন্য, কেউ হরতাল দেয় ক্ষমতায় দীর্ঘদিন থাকার জন্য। তাই হরতালের জন্যও একটি নীতিমালা থাকা দরকার। অনেক আগে আমি এ বিষয়ে ‘জনস্বার্থ রক্ষা আইন’ নামে একটি আইন এনেছিলাম। কিন্তু দুই দলের কেউ সেটা পাস করেনি।
এ বিষয়ে তিনি আরও বলেন, হরতালে চলন্ত গাড়িতে পেট্রোল মেরে মানুষ পুড়িয়ে দেওয়া হয়, রাস্তার রিকশা চালকের রিকশা ভেঙে দেওয়া হয়। কিন্তু তাদের কোনো ক্ষতিপূরণ দেওয়ার আইন নেই। দুষ্কৃতকারীদেরও কোনো বিচার হয় না। রাজনৈতিক দলের যদি হরতাল করার অধিকার থাকে, তবে জনগণেরও স্বাধীনভাবে রাস্তায় চলাচলের অধিকার আছে। আর সেটা খর্ব করলে তারও বিচার হওয়া উচিত। হরতালে সহিংসতার দায় হরতাল আহ্বানকারী দলের নেতার। হোন তিনি হাসিনা, খালেদা বা এরশাদ। আর জনগণের যে ক্ষতি হবে তার ক্ষতিপূরণ দায়ী দলের ফান্ড থেকেই দিতে হবে। দলের ফান্ডে টাকা না থাকলে নেতার ব্যক্তিগত অ্যাকাউন্ট থেকে পরিশোধ করতে হবে। তাও না থাকলে দলের নামে যদি কোনো সম্পদ থাকে তবে তা বিক্রি করে পরিশোধ করতে হবে।