শীর্ষবিন্দু নিউজ: বাঙালির প্রাণের উৎসব বাংলা নববর্ষ উদযাপন উপলক্ষে রাজধানীতে চার স্তরের নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করবে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। এ লক্ষ্যে ইতোমধ্যে কাজও শুরু করেছে পুলিশ, ৠাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব) ও গোয়েন্দা সংস্থার সদস্যরা। পুলিশ সদর দপ্তর সূত্রে জানা যায় বলেন, পুলিশ সদর দফতরে পহেলা বৈশাখের অনুষ্ঠানকে ঘিরে সারাদেশের পুলিশকে সতর্ক থাকার নির্দেশ দিয়েছেন পুলিশ মহাপরিদর্শক হাসান মাহমুদ খন্দকার। সব ধরনের হুমকি মাথায় রেখে নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে বলে জানান তিনি।
নাশকতার বিষয়টিকে সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ পুরো রমনা এলাকা থাকবে ক্লোজ সার্কিট ক্যামেরার (সিসিটিভি) আওতায়। পাশাপাশি আকাশপথে র্যাবের হেলিকপ্টার টহল থাকবে। এছাড়া, সারাদেশেই উৎসবের এই আয়োজনকে ঘিরে সতর্ক থাকবে পুলিশ। গতবারের চেয়ে এবারের পহেলা বৈশাখের নিরাপত্তা ব্যবস্থা আরও কঠোর হবে বলে জানিয়েছেন পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা। ইতোমধ্যে পহেলা বৈশাখের নিরাপত্তা নিয়ে পুলিশ সদর দফতর ও ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ একাধিক বৈঠক করেছেন। বৈঠকে নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিয়ে পরিকল্পনা গ্রহণ ও বাস্তবায়ন নিয়ে আলোচনা হয়েছে। ঢাকা মহানগর পুলিশের পক্ষ থেকে কমিশনার বেনজীর আহমেদ শনিবার সার্বিক নিরাপত্তা ব্যবস্থা সম্পর্কে নগরবাসীকে অবহিত করবেন।
ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) যুগ্ম-কমিশনার শাহাবুদ্দিন খান (ক্রাইম) বাংলানিউজকে জানান, প্রতি বছরের মতো এবারও পহেলা বৈশাখে ডিএমপি রাজধানীর নিরাপত্তায় ব্যাপক প্রস্তুতি নিচ্ছে। বিশেষ করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ পুরো রমনা এলাকায় নিশ্চিদ্র নিরাপত্তার ব্যবস্থা করবে।
তিনি জানান, রাজধানীর রমনা পার্ক ও সোহরাওয়ার্দী উদ্যানজুড়ে অর্ধশতাধিক ক্লোজসার্কিট ক্যামেরা (সিসিটিভি) বসানো হবে। এগুলো সার্বক্ষণিকভাবে মনিটরিং করার জন্য একটি কন্ট্রোল রুম স্থাপন করা হবে। শনিবার থেকে সিসিটিভিগুলো স্থাপনের কাজ শুরু হবে। সিসিটিভিগুলো সার্বক্ষণিক মনিটরিংয়ের জন্য একটি কন্ট্রোল রুম থাকবে।
পুলিশ ও গোয়েন্দা সংস্থার সদস্যরা জানান, পহেলা বৈশাখের আগের দিন দুপুর থেকে ৠাব ও পুলিশ রমনা পার্ক, সোহরাওয়ার্দী উদ্যান, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসি, শাহবাগ চত্বর এলাকায় মেটাল ডিটেক্টর এবং ডগ স্কোয়ার্ড দিয়ে নিরাপত্তামূলক সুইপিং করবে। বিকেল সাড়ে ৫টার মধ্যে সুইপিং শেষে পার্কে প্রবেশের সব গেট বন্ধ করে দেওয়া হবে। গেটে অবস্থান নেবে পুলিশ। এবারও রমনা পার্কে প্রবেশের ক্ষেত্রে কড়াকড়ি আরোপ করা হবে। প্রতিবারের ন্যায় এবারও জনসাধারণকে নিরাপত্তা তল্লাশির পর নির্ধারিত চারটি গেট দিয়ে পার্কের ভেতরে প্রবেশ করতে দেওয়া হবে। একইভাবে ধানমন্ডির রবীন্দ্র সরোবর এলাকার নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হবে। সেখানেও চলবে নিরাপত্তা তল্লাশি ও গোয়েন্দা নজরদারি।
কর্মকর্তারা জানান, পহেলা বৈশাখের প্রথম প্রহরে চারুকলা ইন্সটিটিউট থেকে বের হওয়া মঙ্গল শোভাযাত্রার ওপর বিশেষ নজর রাখা হবে। চারুকলার ছাত্রছাত্রীরা বর্ণিল সাজে সেজে এই মঙ্গল শোভাযাত্রা বের করবে। জঙ্গি বা সন্ত্রাসী গোষ্ঠীর সদস্যরা শোভাযাত্রার ভিড়ের মধ্যে ঢুকে যেন নাশকতা ঘটাতে না পারে সে দিকে গোয়েন্দারা সতর্ক নজরদারি চালাবে। সাদা পোশাকে গোয়েন্দারা শোভাযাত্রায় অংশ নেবেন-এমন পরিকল্পনাও গ্রহণ করা হয়েছে।
র্যাবের লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক এটিএম হাবিবুর রহমান বাংলানিউজকে জানান, গত বছরের মতো এবারও পহেলা বৈশাখের নিরপত্তায় ৠাব বিশেষ ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে। র্যাবের প্রায় তিন হাজার সদস্য এদিন ভোর থেকে রাত পর্যন্ত রাজপথে থাকবে। থাকবে বিস্ফোরক বিশেষজ্ঞ টিম ও ডগ স্কোয়াড। তিনি বলেন, রমনা পার্কের ভেতরে ওয়াচ টাওয়ার স্থাপন করে বাইনোকুলার এবং ভিডিও ক্যামেরার মাধ্যমেও র্যাবের পোশাকধারী ও সাদা পোশাকের সদস্যরা নজরদারি চালাবে। সকাল থেকে রাজধানীর আকাশে র্যাবের হেলিকপ্টার টহল দেওয়ার পরিকল্পনা রয়েছে। এছাড়া, পুরো রমনা এলাকায় র্যাবের টহল অব্যাহত থাকবে।
ঢাকা মহানগর পুলিশের ট্রাফিক বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, পহেলা বৈশাখে রাজধানীর কয়েকটি সড়কে যানবাহন চলাচল পুরোপুরি বন্ধ করে দেওয়া হবে। শাহবাগ থেকে টিএসসি, দোয়েল চত্বর, হাইকোর্ট মোড়, কদম ফোয়ারা, মৎস্য ভবন মোড়, হয়ে রূপসী বাংলা মোড় পর্যন্ত সড়কগুলোতে কোনো যানবাহন চলাচল করতে দেওয়া হবে না। এছাড়া, শুধু রাজধানীই নয়, সারাদেশের মানুষ যেন বাঙালির এই প্রাণের উৎসব নির্বিঘ্নে উদযাপন করতে পারে, সে লক্ষ্যে দেশজুড়েই র্যাব, পুলিশ ও গোয়েন্দা সংস্থার সদস্যরা সতর্ক থাকবে।