শীর্ষবিন্দু নিউজ: মুক্তিযুদ্ধের শক্তিকে ধ্বংস করতেই হেফাজত-জামায়াত আওয়ামী লীগে যোগদান করছে। এটা একটা গভীর ষড়যন্ত্র। জামায়াত-হেফাজতের নতুন কৌশল বলে দাবি করেছেন বক্তারা। এই অবস্থায় মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের সব শক্তিকে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন বিশিষ্টজনেরা।
তারা বলেন, বিএনপি-জামায়াতকে ক্ষমতায় আনতে দেশি-বিদেশি চক্রান্ত চলছে। তারা তাদের স্বার্থ অর্জনের জন্য নতুন কৌশল নিয়েছে; যে কৌশলে তারা দেশ দখল করা নয়, শাসনতন্ত্রের পরিবর্তন চায়। সোমবার সকালে জাতীয় জাদুঘরের সুফিয়া কামাল মিলনায়তনে আমাদের মুক্তিযুদ্ধে বাংলাদেশ শান্তি পরিষদ শিরোনামে আলোচনা সভায় বক্তারা এ আহ্বান জানান।
বাংলাদেশ শান্তি পরিষদ আয়োজিত এ আলোচনা সভায় সভাপতিত্ব করেন শান্তি পরিষদের সভাপতি মোজাফফর হোসেন পল্টু। আলোচক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন- শিল্পকলা একাডেমির সাবেক মহাপরিচালক কামাল লোহানী, সাম্যবাদী দলের সভাপতি ও সাবেকমন্ত্রী দিলীপ বড়ুয়া, ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক আনিসুর রহমান মল্লিক, মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের ট্রাস্টি ডা. সারওয়ার আলী, ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির ভারপ্রাপ্ত সভাপতি শাহরিয়ার কবির, গণঐক্যর কেন্দ্রীয় কমিটির আহ্বায়ক পঙ্কজ ভট্টাচার্য, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জাসদ) সদস্য ও সংসদ সদস্য নাজমুল হক প্রধান, সংসদ সদস্য শিরীন আক্তার, বিএসএমএমইউ’র প্রোভিসি ডা. রফিকুল ইসলাম প্রমুখ।
আলোচনায় অংশ নিয়ে কামাল লোহানী বলেন, লংমার্চ কর্মসূচি দেওয়ার পর আজ ড্যান মজীনা কেন রংপুর যান, তা বুঝতে বাকি নেই। তারা চায়, এই দেশে ধর্মভিত্তিক মৌলবাদী শক্তি ক্ষমতায় আসুক। তিনি বলেন, আমাদের রাজনীতির সংস্কৃতিতে চরমভাবে পচন ধরেছে।
তিনি বলেন, একটি দল ইতিহাস বিকৃতি করছে। ইতিহাস বিকৃতিরও একটি সীমা থাকা দরকার। স্পর্ধা থাকা প্রয়োজন। তারা সেই সীমা ছাড়িয়ে গেছেন। সেই দলের নেত্রী প্রতিনিয়ত মুক্তিযদ্ধের পক্ষের শক্তিকে ক্ষমতা থেকে পতন দেখতে চান। বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়ার সমালোচনা করে কামালা লোহানী বলেন, তিনি (খালেদা) নিজেকে মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে ঘোষণা করে সন্মাননা নিয়েছেন। অন্য সব দলকে তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য করে বলেন, বিএনপিই নাকি মুক্তিযুদ্ধ করেছে।
হেফজতে ইসলামের আহমদ শফীর বক্তব্যের জবাবে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করে তিনি বলেন, আহমেদ শফী ‘নাস্তিক’ ‘মুরতাদের’ কতল করার হুঙ্কার দেন। একটি স্বাধীন দেশে এ ধরনের কথা বলার পর তার জেলে যাওয়ার কথা। সরকার তাদের কিছুই বলছে না। এটা ভালো লক্ষণ নয়। এ সব ষড়যন্ত্রের বিরুদ্ধে সব মুক্তিযুদ্ধের শক্তিকে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানান তিনি।
সম্প্রতি, আওয়ামী লীগের জামায়াতীকরণ নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির ভারপ্রাপ্ত সভাপতি শাহরিয়ার কবির বলেছেন, পরিস্থিতি এমন পর্যায়ে গেছে যে, এখন এ কথাটিই বলতে হয়- ভিক্ষা চাই না মা, কুত্তা ঠেকা। তিনি বলেন, হেফাজত আজ বলছে- আওয়ামী লীগ তাদের শত্রু নয়, বন্ধু। শত্রু হলো ‘নাস্তিক’ ‘মুরতাদ’। তাদের ভাষায় আমরা হলাম সেই নাস্তিক মুরতাদ। যে জামায়াত নিষিদ্ধের জন্য আন্দোলন করেছিলাম, তারাই আবার হুমকি দিচ্ছে।
তিনি বলেন, মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ধূলিসাৎ করতে দেশি-বিদেশি চক্রান্ত চলছে। দশম সংসদ নির্বাচনের আগে নির্বাচন না হওয়ার জন্য ড্যান মজীনা হিল্লি-দিল্লি বহুকিছু করেছেন। তাদের কান্না শুধুমাত্র জামায়াত না থাকাতেই। আমেরিকা বাংলাদেশে জামায়াত-বিএনপিকে ক্ষমতা দেখতে চায়। কেননা না তারা বুঝতে পেরেছে শেখ হাসিনা ক্ষমতায় থাকলে তাদের স্বার্থ অর্জন হবে না। প্রধানমন্ত্রীর প্রতি আহ্বান জানিয়ে শাহরিয়ার কবির বলেন, মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বাস্তবায়নে দৃঢ় হন। সারা দেশের মানুষ আপনার পাশে আছে। যদি আরেকটি যুদ্ধ করতে হয়, তাহলে আমরা প্রস্তুত আছি।
পঙ্কজ ভট্টাচার্য বলেন, হেফাজত-জামায়াত আজ নতুন কৌশল নিয়েছে। তারা আওয়ামী লীগে যোগ দিচ্ছে। এটা একটা গভীর ষড়যন্ত্র। মুক্তিযুদ্ধের শক্তিকে ধ্বংস করতেই তাদের এই কৌশল। ঐক্যবদ্ধভাবে তাদের মোকাবেলা করতে হবে। দিলীপ বড়ুয়া বলেন, জামায়াতকে বিশ্বাস করা ঠিক হবে না। আজ বিএনপিই জামায়াতকে বিশ্বাস করকে পারছে না। তাই, আওয়ামী লীগকে বলবো, জামায়াত নিয়ে বিশ্বাস করা যাবে না। সাপের ঘাড়ে পা দিয়ে বসে থাকলে চলবে না। তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হবে।
ডা. সারওয়ার আলী বলেন, যুদ্ধাপরাধী দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর ফাঁসির রায়কে কেন্দ্র করে আবার আক্রমণের প্রস্তুতি নিচ্ছে হেফাজত-জামায়াত। তাই, এখনই মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের যে শক্তি যুদ্ধাপরাধীদের বিচার তরান্বিত করতে চায়, তাদের সঙ্গে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করতে হবে। আনিসুর রহমান মল্লিক বলেন, গণজাগরণ মঞ্চের আন্দোলনকে ধ্বংস করার পরিকল্পনা চলছে। ফেব্রুয়ারি মাসে এই গণজাগরণ মঞ্চই সারাদেশের মুক্তিযুদ্ধের শক্তিকে ঐক্যবদ্ধ করেছিল। আজ সেই ঐক্যকে ভাঙার ষড়যন্ত্র চলছে।