শুক্রবার, ১৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৪:৫২

স্বামীর নির্যাতনে অন্ধ রুমানার চ্যালেঞ্জ

স্বামীর নির্যাতনে অন্ধ রুমানার চ্যালেঞ্জ

শীর্ষবিন্দু নিউজ: কিভাবে আমি জীবন পরিচালিত করবো সে বিষয়ে অন্য কাউকে মাথা ঘামানোর সুযোগ দিতে চাই না। জীবন আমার। একে পরিচালিত করবো আমি। কানাডার ভ্যানকুভার সান-কে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে এ কথা বলেছেন স্বামীর নির্যাতনে অন্ধ রুমানা মনজুর। তিন বছর আগে তিনি বাংলাদেশে তার স্বামীর হাতে প্রহৃত হন। ওই সময় তাকে অন্ধ করে দেয়া হয়। সেই অবস্থায় তিনি ফিরে যান কানাডা। সেখানে ইউনিভার্সিটি অব বৃটিশ কলম্বিয়াতে (ইউবিসি) আইন বিষয়ে পড়াশোনা করেন।

সম্প্রতি তিনি আইন স্কুলের প্রথম বছরের পড়াশোনা শেষ করেছেন। গত সেশনে তিনি ইউবিসি থেকে পলিটিক্যাল সায়েন্সে অর্জন করেছেন মাস্টার্স ডিগ্রি। একদিকে তিনি অন্ধ, অন্যদিকে স্বামীহারা। এ অবস্থায় তিনি কিভাবে পড়াশোনা শেষ করছেন, এক্ষেত্রে তাকে কি কি চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে হয়েছে তা নিয়ে কথা বলেছেন সাক্ষাৎকারে। তার কাছে প্রশ্ন করা হয়েছিল- মাস্টার্স ডিগ্রি তো একটি বড় অর্জন, বিশেষ করে তার জন্য যাকে নতুন করে শিখতে হয়েছে পড়াশোনা। তো আপনার বড় চ্যালেঞ্জ কি?

রুমানা মনজুর বলেন, আমার প্রথম চ্যালেঞ্জ নিজের সঙ্গে লড়াই করা। আমি অন্ধ, এ কথা কখনও মেনে নিতে পারি না। আমি হতাশায় ডুবে গিয়েছিলাম। কিছুই করতে পারতাম না। কিন্তু তারপরে আমি নিজেকে বললাম, অন্যরা তোমাকে দেখছে। আমি আমার জীবন সম্পর্কে অন্য কাউকে সিদ্ধান্ত নেয়ার সুযোগ দিতে চাই না। এটাই হলো বাস্তবতা। আমার একটি মেয়ে আছে। তার জীবনের লক্ষ্য আছে। কারও যদি আট বছর বয়সী একটি সন্তান থাকে তার তো দুঃখে ভারাক্রান্ত হওয়ার সময় থাকার কথা নয়। তার জন্য ও আমার পিতা-মাতার জন্য ভাল কিছু করতে হবে আমাকে। দ্বিতীয়ত, এখন আমাকে শুনে পড়াশোনা করতে হয়। এর আগে ঘুমানোর আগে আমি গান শুনতাম। এখন আমাকে পড়ার কথা শুনতে হয়।

কারণ, এটা আমার কাছে আরেকটি চ্যালেঞ্জ। আমার এ ক্ষেত্রে অতটা দক্ষতা নেই। আমি অন্ধ হয়ে জন্ম নিই নি। তাই আমাকে এ বিষয়ে দক্ষতা অর্জনের জন্য শিক্ষা নিতে হয়েছে। এ জন্য আমি আগে থেকে প্রস্তুত ছিলাম না। সারা জীবন আমার মস্তিষ্ক পুরোপুরি সক্রিয় ছিল। ফলে যখন আমি পড়া শুনতে পেতাম না আমার মনে হতো আমার মস্তিষ্ক মরে গেছে। তাই আমার মনে হলো আমাকে পড়াশোনায় ফিরতে হবে। এটাই আমার জন্য স্বস্তির জায়গা। এ জন্যই আমাকে পড়াশোনা শিখতে বাধ্য করেছে। মেয়ের সঙ্গে যোগাযোগের ক্ষেত্রে আমাকে বিকল্প ব্যবস্থা করতে হয়েছে। স্পর্শ করে ও বর্ণনা দিয়ে তাকে বোঝাই। তার কাছে প্রশ্ন করা হয়- আপনাকে নতুন করে কি দক্ষতা অর্জন করতে হয়েছে?

রুমানা মনজুর বলেন, প্রথম দিকে আমি যখন হাঁটি, বিশেষ করে দাঁড়াই তখনও আমি সমস্যায় ছিলাম। আমি বুঝতে পারতাম না বিছানার কোন অংশে বসেছি। আমার মনে হয় তখন আমার অন্য অঙ্গগুলোও যথেষ্ট শক্তিশালী ছিল না। তারপরে ধরেন কম্পিউটারে দক্ষতার বিষয়টি। আমাকে সেটা শিখতে হয়েছে। আমি শুরু করেছিলাম। কিন্তু ল’ স্কুলে পড়াশোনা করতে গিয়ে অন্য কিছুতে সময় দিতে পারি নি। অন্যদিকে বাইরে কোথাও যাওয়ার জন্য আমাকে বন্ধুদের সহায়তা নিতে হয়েছে।

কেন আইনজীবী হতে চান এমন প্রশ্নে রুমানা মনজুর বলেন, যখন আমি দেশে আইনি ব্যবস্থা নিয়ে পড়াশোনা করেছি তখন দেখতে পাই আমি আইনগত অনেক চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করছি। তখনই অনুধাবন করি যে, দেশে নারীরা যে সব সমস্যা মোকাবিলা করছে তা আর হতে দিতে পারি না। সেই সব চ্যালেঞ্জকে আমি মোকাবিলা করতে চাই। যেসব নারীর অর্থ নেই, শক্তি নেই, কিছুই নেই, কোন উৎসই নেই, তাদের কথা ভাবুন। তাই তাদের জন্য আমাকে কিছু করতেই হবে। আমি মনে করি আইন একটি শক্তিশালী অস্ত্র।




Comments are closed.



পুরানো সংবাদ সংগ্রহ

সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি রবি
 
১০১১১২১৩১৪১৫
১৬১৭১৮১৯২০২১২২
২৩২৪২৫২৬২৭২৮২৯
৩০৩১  
All rights reserved © shirshobindu.com 2012-2024