শীর্ষবিন্দু নিউজ: এমনিতেই ফ্লাইট শিডিউলের বেহাল অবস্থা। এর ওপর দেনা আর লোকসানে ডুবতে বসেছে ইউনাইটেড এয়ারওয়েজ। নিজেদের বাঁচাতে এবার তারা লাভজনক হজ যাত্রী পরিবহন কাজ পেতে চাইছে। এ লক্ষ্যেই সম্প্রতি প্রতিষ্ঠানটি থার্ড ক্যারিয়ারের দাবি নিয়ে উচ্চকিত হয়। বেসামরিক বিমান পরিবহন মন্ত্রণালয় ও ইউনাইটেড এয়ারওয়েজ সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।
হজ যাত্রী পরিবহনের কাজ দিতে বিভিন্ন সংস্থার মাধ্যমে ইতোমধ্যেই সরকারের বিভিন্ন মহলে চাপ সৃষ্টির চেষ্টা করছে তারা, আবার কোথাও টাকা দিয়ে সংশ্লিষ্টদের ম্যানেজ করার চেষ্টা করছে। প্রয়োজনে ঘুষ দিয়ে হলেও তারা কাজটি পেতে চাইছে কারণ হজ যাত্রী পরিবহনের মাধ্যমে ব্যাপক মুনাফা অর্জন সম্ভব। রাষ্ট্রীয় পতাকাবাহী এয়ারলাইন্স বিমান বিভিন্ন রুটে লোকসান দিলেও শুধু হজ যাত্রী পরিবহন করে কয়েকশ’ কোটি টাকা লাভ করে থাকে। তাই বিমানের এই লাভজনক কাজটি পেতে দীর্ঘদিন ধরেই দেশী-বিদেশি এয়ারলাইন্সগুলো চেষ্টা চালিয়ে আসছে। সরকারের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স ও সৌদি এয়ারলাইন্সই হজ যাত্রী পরিবহনের কাজ পেয়ে থাকে। এর বাইরে কাউকেই এই কাজ দেওয়া হয় না। তবে ২০০৯ ও ২০১১ সালে কয়েকবার বাংলাদেশি বেসরকারি এয়ারলাইন্সসমূহ ও সৌদি আরবের অন্য এয়ারলাইন্সকে হজ যাত্রী পরিবহনের কাজ দেওয়া হয়।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন এভিয়েশন বিশেষজ্ঞ বলেন, এর আগেও নিজেদের ডুবন্ত অবস্থা থেকে বাঁচাতে ইউনাইটেড এয়ারওয়েজ শেয়ার বাজার থেকে ৪০০ কোটি টাকা তুলে নিয়েছিল। এ ধরনের ছলচাতুরির আশ্রয় নেওয়ার রেকর্ড তাদের নতুন নয়। তিনি বলেন, ফ্লাইট বিলম্ব, একের পর এক রুট চালু করে পুনরায় তা বন্ধ করে দেওয়াসহ নানা সমস্যায় জর্জরিত ইউনাইটে এয়ারওয়েজের আর্থিক অবস্থা শোচনীয়। এ অবস্থায় শেয়ার বাজার থেকে তারা আবারও ২০০ কোটি টাকা উত্তোলনে তৎপরতা চালাচ্ছে। যদি কোনো কারণে তারা এই টাকা তুলতে ব্যর্থ হয় সেজন্য হজ যাত্রী পরিবহনের কাজটি বাগিয়ে নিতে চাইছে। তবে সত্যিকার অর্থে এ ধরনের কৌশল নিয়ে জিএমজি নিজেদের বাঁচাতে পারেনি। ইউনাইটেডও শেষ পর্যন্ত পারবে বলে মনে করেন না তিনি।
মন্ত্রণালয় একটি সূত্র বলছে, ইউনাইটেড এয়ারওয়েজ ও জিএমজি এয়ারওয়েজ তখন যাত্রী পরিবহনের কাজ পেয়েছিল। আগের সেই অভিজ্ঞতা তুলে ধরে এবার কাজ পেতে তদবির চালাচ্ছে ইউনাইটেড এয়ারওয়েজ। তারা বলছে, তাদের দু’টি এয়ারবাস এ ৩১০ উড়োজাহাজ বসে রয়েছে। সরকার চাইলে এই সময়ে তারা ২৫০ আসনের এই উড়োজাহাজ দিয়ে হাজীদের আনা নেওয়া করতে পারবেন। এজন্য বিভিন্ন সংস্থার মাধ্যমেও বেসামরিক বিমান মন্ত্রণালয়ে লবিং করছে ইউনাইটেড এয়ার।
এয়ারলাইন্সের নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ (বেবিচক) কাছে পাওনা ৫৭ কোটি টাকা দিতে না পারায় সম্প্রতি ইউনাইটেডের ওপর এয়ার অপারেটর সার্টিফিকেশন (এওসি) স্থগিতের খড়গ নেমে এসেছিল। এ অবস্থায় সম্প্রতি ইউনাইটেড এয়ারওয়েজ বেবিচকের কাছে পাওনা ৫৮ কোটি টাকার ২৮ কোটি টাকা মওকুফের আবেদনও করেছিল অর্থমন্ত্রীর কাছে। পরবর্তীতে বেবিচকের কাছে এক কোটি টাকা নগদ পরিশোধ ও আরো চার কোটি টাকা দ্রুততম সময়ে পরিশোধের অঙ্গীকারের বিনিময়ে এওসি পায় তারা। প্রথমে এক সপ্তাহের জন্য এওসি দেয় বেবিচক। পরবর্তীতে তিন মাসের জন্য এওসি মেলে ইউনাইটেডের।
সাধারণত এক বছরের জন্য বেবিচক এওসি দিয়ে থাকে। কিন্তু ইউনাইটেড এয়ারওয়েজ প্রায় এক বছর ধরে অ্যারোনটিক্যাল ও নন-অ্যারোনটিক্যাল চার্জ না দেওয়ায় বেবিচক তাদের মাত্র তিনমাসের জন্য এওসি প্রদান করে। এওসি ছাড়া ওই এয়ারলাইন্স আর ফ্লাইট পরিচালনা করতে পারে না। এ অবস্থায় বেবিচকের পরিচালক (ফ্লাইট সেফটি) উইং কমান্ডার নাজমুল আনাম পাওনা পরিশোধ না করলে প্রয়োজনে ইউনাইটেডের ফ্লাইট পরিচালনার অনুমতি (এওসি) নবায়ন স্থগিতের হুমকিও দিয়েছিলেন।