সোমবার, ১৪ জুলাই ২০২৫, ০৮:১৪

নূর প্রশ্নে নীরব কথিত বান্ধবী নীলা

নূর প্রশ্নে নীরব কথিত বান্ধবী নীলা

হোসেন রবিন: নূর হোসেন সম্পর্কে এখনও নীরব ওয়ার্ড কাউন্সিলর নীলা। সোমবার গ্রেপ্তারের পর তাকে ৩ দিনের রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করছে পুলিশ। নীলাকে অবশ্য মাদক ব্যবসায়ী জুয়েল হত্যায় রিমান্ডে নেয়া হয়েছে। সিদ্ধিরগঞ্জ থানার মহিলা হাজতে রেখে তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। গত বছর ২৬শে অক্টোবর জুয়েলকে গলা কেটে হত্যা করা হয়। আদালতে হত্যাকারীদের স্বীকারোক্তিতে জুয়েল হত্যার পরিকল্পনাকারী হিসেবে নীলার নাম উঠে আসে। কিন্তু ওয়ার্ড কাউন্সিলর এবং নূর হোসেনের বান্ধবী হওয়ায় এতদিন ধরাছোঁয়ার বাইরে ছিল জান্নাতুল ফেরদৌস নীলা।

নোয়াখালীর উত্তর মাসুদপুর গ্রামের ফিরোজ খানের ছেলে জুয়েল ছিল নীলার মাদক ব্যবসার প্রধান অংশীদার। তার মাধ্যমে নীলা ব্রাহ্মণবাড়িয়া থেকে ফেনসিডিল এবং চট্টগ্রাম থেকে ইয়াবা এনে সিদ্ধিরগঞ্জ নারায়ণগঞ্জের বিভিন্ন স্থানে সরবরাহ করতো। এভাবে ব্যবসা করতে গিয়ে নীলার কাছে জুয়েলের ৭০ লাখ টাকা পাওনা হয়। এ নিয়ে দু’জনের মধ্যে উত্তপ্ত বাক্যবিনিময় হয়। এরপরই নীলা তার খুচরা মাদক বিক্রেতা মনা ডাকাত, সোহেল, কালা সোহাগ ও সোয়েবকে নিয়ে জুয়েলকে হত্যার পরিকল্পনা করে। জুয়েলকে হত্যার জন্য তাদের লাখ টাকা দেয় নীলা। নীলার নির্দেশ এবং পরিকল্পনায় ঘাতকরা গত বছরের ২৬শে অক্টোবর রাতে জুয়েলকে সিদ্ধিরগঞ্জের আইয়ুবনগরে একটি পরিত্যক্ত বাড়ির বাউন্ডারির ভেতর নিয়ে গলা কেটে হত্যা করে। হত্যার পর দেহ থেকে মস্তক আলাদা করে পাশের পুকুরে ফেলে দেয় ঘাতকরা। পরদিন ২৭শে অক্টোবর পুলিশ সে মস্তকবিহীন দেহ ও পরে মাথা উদ্ধার করে। সেই দিনই সিদ্ধিরগঞ্জ থানার এসআই জিন্নাহ বাদী হয়ে একটি হত্যা মামলা করেন। বেশ কয়েক দিন পর নোয়াখালী জেলার সদর উপজেলার উত্তর মাসুদপুর গ্রামের ফিরোজ খান সিদ্ধিরগঞ্জ থানায় এসে লাশটি তার ছেলে জুয়েলের বলে সন্দেহ করেন।

পরে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা এসআই নজরুল ইসলাম ঘটনার সঙ্গে জড়িত সন্দেহে জান্নাতুল   ফেরদৌস নীলার মাদক ব্যবসার অপর চার সহযোগী মনা ডাকাত, সোহেল, কালা সোহাগ ও সাকিবকে গ্রেপ্তার করে। তাদের স্বীকারোক্তি থেকে পুলিশ নিশ্চিত হয় এটি জুয়েলের লাশ। আসামিরা জুয়েলকে হত্যার কথা স্বীকার করে গত ২রা মার্চ ১৬৪ ধারায় আদালতে হত্যাকা-ের বিশদ বর্ণনা দেয়। গ্রেপ্তারকৃতরা ঘটনার সঙ্গে কাউন্সিলর নীলার সম্পৃক্ততার কথা এবং মোট ৮ জন জুয়েল হত্যায় অংশ নেয় বলে পুলিশকে জানায়।

কিন্তু জুয়েল হত্যাকান্ডের সঙ্গে নীলার নাম এলে নূর হোসেনের কাছ থেকে সুবিধাভোগী সিদ্ধিরগঞ্জ থানা প্রশাসন তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার সাহস করেনি। এদিকে নারায়ণগঞ্জের সেভেন মার্ডারের ঘটনায় আদালতের নির্দেশ গঠিত তদন্ত কমিটির কাছে ১৮ই  মে সাক্ষ্য দিয়ে বাসায় ফেরার পথে ডিবি পুলিশ আটক করে নীলাকে। সূত্র জানায়, নীলাকে আটক নিয়ে আইনি জটিলতা দেখা দেয়। তদন্ত কমিটির চিঠি পেয়ে সাক্ষ্য দিতে এসে আটক হওয়ার বিষয়টি সুখকর হয়নি। ফলে অল্প সময়  নূর হোসেন সম্পর্কে নীলাকে জিজ্ঞাসাবাদ করেই ছেড়ে দিতে হয়।

তবে ডিবির একটি সূত্র জানায়, সে সময়ে নীলা পলাতক নূর হোসেনের সম্পর্কে তথ্য দেয়ার আশ্বাস দিলেও পরে পুলিশকে তথ্য দিয়ে সহযোগিতা করতে ব্যর্থ হয়। তবে নীলার বিরুদ্ধে থানার লিখিত কোন অভিযোগ আছে কিনা- যার ভিত্তিতে তাকে আটক করা যায় তা খুঁজতে থাকে পুলিশ। এক পর্যায়ে সেভেন মার্ডারের ঘটনায় প্রশাসনের বড় ধরনের রদবদলের পর নূর হোসেনের কাছ থেকে সুবিধাভোগী পুলিশ কর্মকর্তারা চলে যায়। নতুনরা যোগ দেয়ার পর গত সপ্তাহে মামলার ডকেট নাড়াচাড়া করতে গিয়ে নীলার বিরুদ্ধে জুয়েল মার্ডারের আসামিদের ১৬৪ ধারার জবানবন্দির সন্ধান পান। শনিবার গভীর রাতে তাকে গ্রেপ্তার করে আদালতে পাঠিয়ে ৭ দিনের রিমান্ড চাওয়া হয়। আদালত ৩ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করে। সূত্র জানায়, জুয়েল হত্যা মামলা রিমান্ডে থাকা নীলার কাছ থেকে নূর হোসেন সম্পর্কে তথ্য নেয়ার টার্গেট রয়েছে পুলিশের।




Comments are closed.



পুরানো সংবাদ সংগ্রহ

সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি রবি
 
১০১১১২১৩
১৪১৫১৬১৭১৮১৯২০
২১২২২৩২৪২৫২৬২৭
২৮২৯৩০৩১  
All rights reserved © shirshobindu.com 2012-2025