শীর্ষবিন্দু নিউজ: বিএনপির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমান বলেছেন, শেখ মুজিব রাজনীতিক হিসেবে ব্যর্থ ছিলেন এবং জিয়া ছিলেন একজন সফল রাজনীতিক। গতকাল বুধবার সন্ধ্যায় পূর্ব লন্ডনের ইলফোর্ডে এক আলোচনা সভায় এ দাবি করেন তারেক রহমান। বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমানের ৩৩তম মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে এ আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়।

বুধবার সন্ধ্যা ৬টা ৪৫ মিনিটে পূর্ব লন্ডনের ইলফোর্ডস্থ প্রভা বানকুয়েটিং হলে অনুষ্ঠিত হলো শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের ৩৩তম শাহাদত বার্ষিকী উপলক্ষে যুক্তরাজ্য বিএনপির ঐতিহাসিক আলোচনা সভায় বিএনপির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান উপরোক্ত বক্তব্য রাখেন।সভায় সভাপতিত্ব করেন যুক্তরাজ্য বিএনপির সভাপতি শাইস্তা চৌধুরী কুদ্দুছ। আর যথারীতি সভা পরিচালনা করেন সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক কয়সর এম আহমেদ।

বর্তমান সরকারকে অবৈধ মন্তব্য করে বিএনপির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমান বলেছেন, মুক্তিযুদ্ধের নয় মাস পর শেখ মুজিবুর রহমান পাকিস্তানের পাসপোর্ট পকেটে করে দেশে ফিরেছিলেন। বিমান বন্দরে যারা তাকে স্বাগত জানাতে গিয়েছিলো তারা এ ঘটনায় মর্মাহত হয়েছে। পাকিস্তানের পাসপোর্ট পকেটে করে দেশে আসার মাধ্যম শেখ মুজিব দেশের জনগণের আবেগ অনুভূতির সাথে বিশ্বাসঘাতকতা করেছেন। শেখ মুজিবুর রহমান দীর্ঘদিন রাজনীতি করার পরও মাত্র ১১ মিনিটের মাথায় দেশে বাকশাল কায়েম করেছিলেন। দেশে গণতন্ত্রের অধিকার হরণ করেছিলেন। তারই ধারাবাহিকতায় তার কন্যা শেখ হাসিনা সম্পূর্ণ অবৈধভাবে দেশ ও বিশ্বের জনমত উপেক্ষা করে ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হয়েছেন। তিনি দেশকে এখন গুম-খুনের রাজত্বে পরিণত করেছেন।

বিএনপির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান দাবি করেন, শেখ মুজিব ৩০ বছর রাজনীতি করার পরও রাজনীতিক হিসেবে ছিলেন ব্যর্থ। অন্যদিকে, জিয়াউর রহমান সেনাবাহিনী থেকে রাজনীতিতে এসে মাত্র পাঁচ বছর রাজনীতি করে সফল রাজনীতিক ছিলেন বলে মন্তব্য করেন তিনি। জিয়াউর রহমান দেশে বহুদলীয় গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা এবং অর্থনীতিকে দৃঢ় বুনিয়াদের ওপর দাঁড় করিয়েছিলেন বলে দাবি করেন তারেক রহমান।

শেখ হাসিনা তাঁর পিতার পথ অনুসরণ করে র‌্যাবকে রক্ষীবাহিনীতে রূপান্তরিত করে দেশে আতঙ্কের জনপদ তৈরি করেছেন। দেশে যেসব গুম-খুন হচ্ছে, তার দায় শেখ হাসিনা এড়াতে পারেন না বলেও মন্তব্য করেন বিএনপির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান।

জিয়াউর রহমান স্বাধীনতার ঘোষক উল্লেখ করে তারেক রহমান বলেন, ১৯৭১ সালে শেখ মুজিবুর রহমানসহ দেশের রাজনীতিবিদরা স্বাধীনতার ঘোষণা দিতে ব্যর্থ হয়েছিলেন। জিয়াউর রহমান জনগণের ভাষা বুঝতে পেরেছিলেন। তিনি সামরিক অফিসার হয়েও দেশের মুক্তির জন্য স্বাধীনতার ঘোষণা দিয়েছিলেন। নিজে প্রত্যক্ষভাবে যুদ্ধে অংশ নিয়ে দেশের স্বাধীনতা অর্জন করেন। কর্মীদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন তারেক রহমান। দলীয় নেতা-কর্মীরা তারেক রহমানকে দেশে ফিরে দল ও আন্দোলনে নেতৃত্ব দেওয়ার আহ্বান জানালে এ বিষয়ে স্পষ্ট করে কোনো কথা বলেননি বিএনপির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান। তিনি বলেন, আমরা সবাই স্বাভাবিক অবস্থায় দেশে ফিরতে চাই। দেশে স্বাভাবিক মৃত্যুর নিশ্চয়তা চাই।

শুরুতে সভার প্রধান অতিথি বিএনপির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমান সভায় উপস্থিতি নেতা কর্মীদের মধ্যে ব্যাপক উৎসাহ ও প্রাণচাঞ্চল্য ছড়িয়ে দেয়। কিন্তু সবাইকে অবাক করে দিয়ে অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি তারেক রহমান মঞ্চে আসন গ্রহণ না করে দর্শকদের সারিতে বসে অনুষ্ঠান উপভোগ করেন। এতে অনুষ্ঠানে আগত অতিথি ও নেতা কর্মীদের মধ্যে ব্যাপক কৌতুহল দেখা দেয়। সকলেই আশা করেছিলো তারেক রহমান হয়তো আজ নতুন কোন রাজনৈতিক বক্তব্য প্রদান করবেন। বিশেষত: ভারতের নির্বাচনে সরকার পরিবর্তন ও নরেন্দ্র মোদির ক্ষমতায় আরোহণের প্রেক্ষিতে সাংবাদিক ও সুধী-জনদের মধ্যে ব্যাপক সাড়া পড়েছিলো তারেক রহমান আজ কি বক্তব্য প্রদান করেন।

কিন্তু সকলকে অবাক করে দিয়ে তিনি অনুষ্ঠানে এসে বললেন, আজ কোন বক্তৃতা নয়, বরং তিনি দর্শক সারিতে বসে নেতা কর্মীদের বক্তব্য শুনবেন, শুনেছেনও তাই।ফাকে ফাকে নেতা কর্মীদের সাথে কুশল বিনিময় করেছেন, যা কর্মীদের দারুণ উজ্জীবিত করেছে।তবে শেষ পর্যন্ত তারেক রহমান বক্তব্য প্রদান করেন ।সভা মঞ্চে যারা উপস্থিত ছিলেন তাদের মধ্যে বিএনপির আন্তর্জাতিক সম্পাদক মাহিদুর রহমান, প্রফেসর ড. কে এম এ মালিক, যুক্তরাজ্য বিএনপির সাবেক আহবায়ক এম এ মালেক, সাবেক ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মিয়া মনিরুল আলম, সাবেক সাধারণ সম্পাদক ব্যারিস্টার এম এ সালাম, বগুড়া জেলা বিএনপি সভাপতি সাইফুল ইসলাম, যুক্তরাজ্য বিএনপির সিনিয়র সহসভাপতি আব্দুল হামিদ চৌধুরী, আবুল কালাম আজাদ ও তৈমুছ আলী, যুগ্ম সম্পাদক নাসিম আহমদ চৌধুরী, তরুণ দলের আহবায়ক আব্দুল বাসেত খান, যুক্তরাজ্য বিএনপির সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট আব্দুল হামিদ চৌধুরী, সাংগঠনিক সম্পাদক আজমল হোসেন জাবেদ প্রমুখ। সভায় কোরআন তেলাওয়াত করেন বিএনপির ভাইস প্রেসিডেন্ট গোলাম রব্বানী। শহীদ জিয়াউর রহমানের শাহাদত বার্ষিকী উপলক্ষে দোয়া মাহফিল পরিচালনা করেন মাওলানা বাকী বিল্লাহ।