সোমবার, ০৭ জুলাই ২০২৫, ১১:৪৭

ঐতিহাসিক ৬ দফা দিবস আজ

ঐতিহাসিক ৬ দফা দিবস আজ

বাঙালির মুক্তির সনদ ৬ দফা। ১৯৬৬ সালের ৭ জুন বাঙালির এ মুক্তির সনদ ঘোষিত হয়। আইয়ুব খানের মার্শাল ল’ শাসন, ৬২-এর শিক্ষানীতিসহ সব অগণতান্ত্রিক সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে এবং পূর্ব বাংলার জনগণের অধিকার প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এই দিনে ৬ দফা ঘোষণা করেন।

পরবর্তীতে এই ৬ দফার প্রতিটি দফা বাংলার আনাচে-কানাচে প্রত্যন্ত অঞ্চলে গিয়ে বাংলার জনগণের সামনে তুলে ধরা হয়। বাংলার সর্বস্তরের জনগণ এই ৬ দফা সম্পর্কে যখন সম্যক ধারণা অর্জন করলো, তখনই ৬ দফাকে বাঙালির মুক্তির সনদ হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়।
6_Points
ছয় দফা ছিল পাকিস্তানি ঔপনিবেশিক শাসন ব্যবস্থা থেকে মুক্তির একটি বিস্তৃত অর্থনৈতিক সনদ। এই ছয়টি দফা হলো-

প্রথম দফা – পাকিস্তানের সরকার হবে যুক্তরাষ্ট্রীয় এবং সংসদীয়। কেন্দ্রীয় ও প্রাদেশিক আইনসভা প্রত্যক্ষ ও সর্বজনীন ভোটাধিকারের ভিত্তিতে নির্বাচিত হবে। জনসংখ্যার ভিত্তিতে কেন্দ্রীয় আইনসভার প্রতিনিধি নির্বাচিত হবে।

দ্বিতীয় দফা – যুক্তরাষ্ট্রীয় সরকারের হাতে থাকবে কেবলমাত্র দেশরক্ষা ও পররাষ্ট্র সংক্রান্ত বিষয়াদি।

তৃতীয় দফা – দেশের দুটি অঞ্চলের জন্য দুটি পৃথক অথচ সহজেই বিনিময়যোগ্য মুদ্রা থাকবে। এক্ষেত্রে দুই অঞ্চলে একক মুদ্রাও থাকতে পারে। তবে সেক্ষেত্রে ফেডারেল ব্যাংককে পূর্ব পাকিস্তান থেকে পশ্চিম পাকিস্তানে মূলধন পাচার রোধে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।

চতুর্থ দফা – রাজস্ব সংক্রান্ত নীতি-নির্ধারণের দায়িত্ব এবং কর ধার্যের ক্ষমতা প্রাদেশিক সরকারগুলোর থাকবে। দেশরক্ষা ও পররাষ্ট্র বিষয় পরিচালনার জন্য আদায় করা রাজস্বের অংশবিশেষ কেন্দ্রীয় সরকারকে দেওয়া হবে।

পঞ্চম দফা – বৈদেশিক বাণিজ্যের ক্ষেত্রে দুই অঞ্চলের জন্য পৃথক হিসাব রাখতে হবে। প্রাদেশিক সরকারগুলো বিদেশের সঙ্গে বৈদেশিক নীতির সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে বাণিজ্যিক চুক্তি করতে পারবে।

ষষ্ঠ দফা – কার্যকরভাবে জাতীয় নিরাপত্তায় অংশগ্রহণের জন্য প্রদেশগুলোকে প্যারামিলিশিয়া বা আধা-সামরিক বাহিনী গঠনের ক্ষমতা দেওয়া হবে।

১৯৪০ সালে লাহোর প্রস্তাব পেশের মাধ্যমে যেমনি পাক-ভারত উপমহাদেশের জনগণ ব্রিটিশ শোষকদের এদেশ থেকে তাড়ানোর জন্য ঐক্যবদ্ধ হয়েছিল, ঠিক তেমনি জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ১৯৬৬ সালের এইদিনে ঘোষিত ৬ দফাকে তৎকালীন পূর্ববাংলার জনগণ পশ্চিমাদের এ দেশ থেকে তাড়ানোর হাতিয়ার হিসেবে গ্রহণ করেছিল। আইয়ুব খানের পতন, ১৯৬৯-এর আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা থেকে বঙ্গবন্ধুসহ সব রাজবন্দির মুক্তি আন্দোলনের প্রধান মনোবল ছিল এই ৬দফা।
6_points_2
সর্বোপরি, ১৯৭০-এর সাধারণ নির্বাচনে পূর্ববাংলার জনগণ আওয়ামী লীগ তথা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের মনোনীত প্রার্থীদের একচেটিয়া রায় প্রদান করে বাঙালির মুক্তির সনদ ৬ দফা বাস্তবায়নের লক্ষ্যে। ১৯৭১ সালের ঐতিহাসিক ৭ মার্চের ভাষণেও ৬ দফার প্রতিটি দফার পর্যালোচনা ছিল।

পরবর্তীতে, মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন মুজিবনগর সরকার বিভিন্ন সেক্টরের মাধ্যমে যুদ্ধ পরিচালনা করার পাশাপাশি দেশের ভেতরে সব সরকারি প্রতিষ্ঠান পরিচালিত হয়েছিল ৬ দফার ভিত্তিতে। স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশ সৃষ্টিতে ৬ দফার ভূমিকা অপরিসীম। সে কারণে প্রতি বছর বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ ৭ জুন ৬ দফা দিবস হিসেবে যথাযোগ্য মর্যাদার সঙ্গে পালন করে থাকে। তারই ধারাবাহিকতায় প্রতি বছরের মতো এবারও সমগ্র জাতির সঙ্গে বিভিন্ন কর্মসূচির মধ্য দিয়ে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ এ দিনটিকে যথাযোগ্য মর্যাদায় স্মরণ ও পালন করবে।

৬ দফা দিবসে আওয়ামী লীগের কর্মসূচি: 

৭ জুন (শনিবার) সূর্যোদয়ের সময় বঙ্গবন্ধু ভবন, আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয় ও দেশব্যাপী দলীয় কার্যালয়ে জাতীয় ও দলীয় পতাকা উত্তোলন; সকাল সাতটায় বঙ্গবন্ধু ভবনে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধাঞ্জলি নিবেদন; বিকেল তিনটায় আলোচনা সভা; ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউট অডিটরিয়ামে।

এতে সভাপতিত্ব করবেন- আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ও সংসদ উপনেতা সৈয়দা সাজেদা চৌধুরী, এমপি। আলোচনা করবেন- জাতীয় নেতৃত্ব ও দেশের বিশিষ্ট বুদ্ধিজীবীরা। আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম, এমপি এক বিবৃতিতে ৭ জুন ঐতিহাসিক ‘৬ দফা দিবস’ যথাযোগ্য মর্যাদায় উদযাপন করতে আওয়ামী লীগ, সহযোগী ও ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠনগুলোর সব শাখাসহ সর্বস্তরের নেতাকর্মী, সমর্থক ও জনগণের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন।




Comments are closed.



পুরানো সংবাদ সংগ্রহ

সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি রবি
 
১০১১১২১৩
১৪১৫১৬১৭১৮১৯২০
২১২২২৩২৪২৫২৬২৭
২৮২৯৩০৩১  
All rights reserved © shirshobindu.com 2012-2025