নিউজ ডেস্ক: জঙ্গি হামলার কারণে ইরাকের রাজধানী বাগদাদ থেকে ২৭ বাংলাদেশি শ্রমিক দেশে ফিরেছেন। মঙ্গলবার সকাল সাতটায় কাতার এয়ারওয়েজের একটি ফ্লাইটে তারা হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে পৌঁছান। গত ১১ জুন থেকে ইরাকে শিয়া-সুন্নী গৃহযুদ্ধ প্রকট আকার ধারণ করে। সেদিন থেকেই এসব বাংলাদেশি শ্রমিকরা সেখানে আটকে পড়েন। দীর্ঘদিনের ব্যবধানে খাদ্য, পানি, বিদ্যুৎ না থাকায় বেশ মানবেতর জীবন যাপন করছেন তারা।
এদিকে, ইরাকে তিকরিতে একটি ভবনের গ্রাউন্ড ফ্লোরে ২০ দিন ধরে আটকে আছে আরো ৩০ জন বাংলাদেশি শ্রমিক। এছাড়াও একই শহরের সামারা মার্কেট সিবলাশে আছেন ১৪ জন। ইরাক থেকে দেশে ফেরত মনিরুল ইসলাম জানান, দেশটিতে দক্ষিণ কোরীয় কোম্পানি হানওয়া ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড কন্সট্রাকশনের হয়ে দক্ষিণ বাগদাদে বিসমায়া নিউ সিটি প্রজেক্ট নামে একটি প্রকল্পে কাজ করতেন তারা। ইরাকের যুদ্ধাবস্থার কারণে নিজেদের উদ্যোগে দেশে ফেরার আগে তারা পদত্যাগ করেন। কোম্পানি তাদের পদত্যাগপত্র গ্রহণ করে।
তিনি বলেন, নিরাপত্তাহীনতা, হয়রানি ও হামলার আশঙ্কার এবং মধ্যে ইরাকে বাংলাদেশিরা কাজ করছেন। বিসমায়া নিউ সিটি প্রজেক্টে কর্মরত একজন বাংলাদেশি শ্রমিক ইরাকি পুলিশের হাতে গ্রেফতার হওয়ার প্রতিবাদে গত ২৮ জুন কয়েকশ বাংলাদেশি কর্মবিরতি পালন করেন। তিনি আরো বলেন, প্রায় চার হাজার বাংলাদেশি সুন্নি বিদ্রোহীদের হামলার আশঙ্কায় আছেন। প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের হিসাব অনুযায়ী, ইরাকে ২০ হাজারেরও বেশি বাংলাদেশি কর্মী আছে।
এদিকে, তিকরি শহরটি প্রথমদিকে সুন্নি বিদ্রোহীরা দখলে নিলেও এখন সরকারি বাহিনী তা নিয়ন্ত্রণে নেওয়ার চেষ্টা চালাচ্ছে। সরকারি বাহিনী হেলিকপ্টার থেকে অনবরত বোমা নিক্ষেপসহ রাস্তায় সুন্নিদের মোকাবেলা করছে। আর দুই গ্রুপের এই সংঘর্ষের ঠিক মাঝখানে অবস্থান করছেন বাংলাদেশি কর্মীরা। তাদের আশপাশের বিল্ডিংয়ে নার্সসহ প্রায় ৪০ জন ভারতীয় নাগরিকও রয়েছেন। ভারত ইতিমধ্যে তাদের কর্মীদের দেশে ফিরিয়ে নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেন, ইরাকে আটকে পড়া বাংলাদেশিদের বিষয়ে আমাদের দূতাবাস সার্বক্ষণিক নজর রাখছে। কোনো বাংলাদেশি আটকে পড়ার খবর পেলে তাদেরকে উদ্ধারের চেষ্টা করা হচ্ছে।
আটকে পড়া বাংলাদেশিদের একজন হবিগঞ্জ জেলার কেশবপুর থানার শায়েস্তাগঞ্জ গ্রামের শেখ বেলাল বলেন, আমরা একটি হাসপাতালের পাশে একটি ভবনের আটকা পড়েছি। ইরানের বাংলাদেশ দূতাবাসের হটলাইনে আশ্রয় চেয়ে যোগাযোগ করেছিলাম। পরিস্থিতি কিছুটা স্বাভাবিক হলে আমাদেরকে উদ্ধার করার কথা। কিন্তু আজও কেউ আসেনি। এতদিন আমরা ২৭ জন ছিলাম। শনিবার অন্য জায়গা থেকে আরও তিনজন আসায় এখন ৩০ জন আছি। প্রায় ১৪ দিন ধরে পর্যাপ্ত খাবার নেই, মালিকের পাঠানো তরমুজ খেয়ে আছি। তাদেরকে দ্রুত উদ্ধার করে নিরাপদ জায়গায় নেওয়ার ব্যবস্থা করতে দূতাবাস এবং বাংলাদেশ সরকারকে অনুরোধ জানান তারা।
একইভাবে তিকরিত শহরের সামারা মার্কেট সিবলাশ এলাকার ফ্রেন্ডস মাতামে নামের এক ফাস্টফুডের দোকানে আটকা পড়েছেন ১৪ বাংলাদেশি কর্মী। তাদের সবাই বাংলাদেশে ফেরার জন্য সরকারের প্রতি আকুতি জানিয়েছেন। ফ্রেন্ডস মাতাম নামে ফাস্টফুডের দোকানে আটকে পড়া ১৪ বাংলাদেশিরা হলেন- মেহেরপুরের গাংনী উপজেলার মো. পিন্টু, জাহারুল ইসলাম, বগুড়ার কাহালু উপজেলার আবু হাসান, মানিকগঞ্জের পংকজ ঘোষ, চাঁপাইনবাবগঞ্জের আব্দুল্লাহ আল মামুন, নোয়াখালীর লোকমান হোসেন, রংপুরের হাসান আলী, নওগাঁর মান্দা উপজেলার আবুল কালাম, চাঁদপুরের সুমন মিয়া, কুমিল্লার নুর আলম ও মো. ওসমান, মাগুড়ার সেলিম মিয়া ও জিহাদ হোসেন এবং জামালপুরের মো. মিন্টু।