সোমবার, ১৪ জুলাই ২০২৫, ০৬:৪৬

ইজিবাইকের বৈধতা দিয়েও পাশে নেই সিলেট সিটি করপোরেশন

ইজিবাইকের বৈধতা দিয়েও পাশে নেই সিলেট সিটি করপোরেশন

নাসির উদ্দিন: ইজিবাইক চলাচল নিয়ে টানাপড়েনের মধ্যে সিলেট সিটি করপোরেশন। নগরীতে এই বাহনটির চলাচলে নিষেধাজ্ঞা দেওয়ার পর মুখ খুলেছেন ইজিবাইক মালিক শ্রমিকরা।

তারা বলেছেন, বৈধতার জন্য সিটি করপোরেশন কোটি টাকার ওপরে আদায় করে নিলেও দুঃসময়ে পাশে থাকেনি। এ ব্যাপারে মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী ও সাবেক মেয়র বদর উদ্দিন কামরানের দ্বারস্থ হলেও তারা উভয়েই আশ্বাসের বাণী শুনিয়েছেন। মালিক ও শ্রমিক নেতাদের অভিযোগ, বৈধতা দেওয়ার জন্য প্রতিটি ইজিবাইক থেকে ১০ হাজার টাকা করে নিয়েছে সিটি করপোরেশন। এভাবে সাবেক মেয়রের সময়ে ১ হাজার ১শ’৫০টি গাড়ি মালিকের কাছ থেকে ১ কোটি ১৫ লাখ টাকা নেওয়া হয়েছে। তবে বর্তমান মেয়রের সময়ে কতটা ইজিবাইকের অনুমোদন দেওয়া হয়েছে, এ সংক্রান্ত কোনো তথ্য নিতে অনীহা প্রকাশ করেন সিটি করপোরেশনের সংশ্লিষ্টরা।

সিলেট ব্যাটারি চালিত অটোরিকশা ইজিবাইক চালক শ্রমিক কল্যাণ সংস্থার সভাপতি সৈয়দ গোলাম রহমান বাংলানিউজকে বলেন, ২০১০-১১ সালে সাবেক মেয়র বদর উদ্দিন আহমদ কামরান ১ হাজার ১শ’৫০টি ইজিবাইকের বৈধতা দিয়েছিলেন। এ ক্ষেত্রে গাড়ি প্রতি ১০ হাজার টাকা করে নিয়েছে সিটি কর্তৃপক্ষ। পরে আইনি জটিলতা দেখিয়ে আর কোনো অনুমোদন দেওয়া হয়নি।

তবে, শ্রমিক কল্যাণ সংস্থার সভাপতির এই বক্তব্যের সাথে দ্বিমত পোষণ করে সিলেট ইজিবাইক শ্রমিক কল্যাণ সোসাইটির সভাপতি ও শ্রমিক লীগ নেতা নিয়াজ খান বাংলানিউজকে বলেন, সাবেক মেয়রের সময়ে প্রতিটি ইজিবাইকের অনুমোদনের জন্য ৫ হাজার ৫শ’২৭ টাকা করে নেওয়া হয়েছে। আবার তারাই শ্রমিকদের পেটে লাথি মেরেছেন। ইজিবাইক বন্ধে সময় দেওয়া প্রয়োজন ছিল বলে মন্তব্য করেন তিনি।

ইজিবাইক মহানগর মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক মো. শাহজাহান বাংলানিউজকে বলেন, নগরীতে প্রায় ৫ সহস্রাধিক ইজিবাইক রয়েছে। এর মধ্যে সিটি করপোরেশনে ১হাজার ৫শ’টি বাহন অনুমোদনের জন্য প্রক্রিয়াধীন ছিল। যার মধ্য থেকে ১ হাজার ১শ’৫০টি বাহনের অনুমোদন দেয়া হয়। তবে অনুমোদনের ক্ষেত্রে সিসিক কর্মকর্তারা অতিরিক্ত টাকা আদায় করেছেন বলে দাবি করেন তিনি।

সিলেট সিটি করপোরেশনের লাইসেন্স শাখার কর্মকর্তা চন্দন কুমার দাশ বাংলানিউজকে বলেন, ‘আমি জানি প্রতিটি ইজিবাইকে ৫ হাজার ৫শ’২৭ টাকা করে নেওয়া হয়েছে। ১০ হাজার টাকা করে আদায়ের বিষয়টি আমার আগে দায়িত্বরত হেলাল আহমদ বলতে পারবেন।’ এ ব্যাপারে সিলেট সিটি করপোরেশনের ট্যাক্সেশন অফিসার হেলাল আহমদ বৈধতার নামে টাকা নেওয়ার কথা অস্বীকার করেন এবং ‘এ ব্যাপারে আর কোনো কথা বলতে চাই না বলে’ মুঠোফোনের সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেন।

সিলেট মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত উপ কমিশনার (মিডিয়া) রহমত উল্লাহ বলেন, মহানগর এলাকায় যানজট নিরসনে ইজিবাইক চলাচল বন্ধ করা হয়েছে। তবে, নিষিদ্ধ এই বাহন নগরীতে চলাচলের অনুমোদন দিয়ে থাকলে এর দায় সিটি করপোরেশনের। সিলেট বিআরটিএ’র সহকারী পরিচালক মো. শহীদউল্লাহ বাংলানিউজকে বলেন, ব্যাটারি চালিত অটোরিকশা (ইজিবাইক) বিআরটিএ আইনের আওতায় পড়ে না। সরকারিভাবে এই বাহন আগে থেকেই নিষিদ্ধ। তাই বিআরটিএ অবৈধ এ বাহনের অনুমোদন কখনোই দেবে না।

সিলেট সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র বদর উদ্দিন আহমদ কামরান বাংলানিউজকে বলেন, তার সময়ে ২ হাজার টাকা ফি আদায়ক্রমে ১১ শতাধিক বাহনের অনুমোদন দেওয়া হয়। ফি বাবদ কেউ বেশি টাকা দিয়ে থাকলে তার তাৎক্ষণিক অভিযোগ করা উচিত ছিল। মাসিক সভায় কাউন্সিলরদের নিয়ে আলোচনাক্রমে ইজিবাইক অনুমোদনের বিষয়টি পাশ করা হয়েছিল উল্লেখ করে তিনি বলেন, পরবর্তীতে মন্ত্রণালয়ের সিদ্ধান্তে  ইজিবাইকের অনুমোদন বন্ধ করে দেওয়া হয়।

সিলেট সিটি করপোরেশনের মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী বলেন, ইজিবাইকের আর কোনো অনুমোদন দেওয়া হবে না। আগে যেগুলোর অনুমোদন দেওয়া হয়েছে সেগুলোও বাতিল করা হবে। এদিকে, নগরীতে ইজিবাইক চলাচল বন্ধের প্রতিবাদে সোমবার বেলা ১ টার দিকে পাঁচ শতাধিক ইজিবাইক মালিক-শ্রমিক সিটি করপোরেশনে সামনে অবস্থান নেন। এসময় শ্রমিকদের উদ্দেশ্যে মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী বলেন, অর্থমন্ত্রী সিলেট সফরে আসার পর আলোচনা সাপেক্ষে সিদ্ধান্ত জানানো হবে।




Comments are closed.



পুরানো সংবাদ সংগ্রহ

সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি রবি
 
১০১১১২১৩
১৪১৫১৬১৭১৮১৯২০
২১২২২৩২৪২৫২৬২৭
২৮২৯৩০৩১  
All rights reserved © shirshobindu.com 2012-2025