মুহাম্মদ হাবীবুল্লাহ হেলালী, দোয়ারাবাজার (সুনামগঞ্জ) থেকে: দোয়ারাবাজার উপজেলার সোনালীচেলা নদীর নুড়িপাথর ফের অবাধে লুটপাট চলছে। আন্তঃমন্ত্রণালয়ের সিদ্ধান্তহীনতায় সরকারিভাবে কোয়ারি হিসেবে লিজ প্রদান না করায় সোনালীচেলা নদী হতে মূল্যবান নুড়িপাথর উধাও হয়ে যাচ্ছে। একই সঙ্গে যে যার ইচ্ছে মতো পাথর আহরণ করছে।

অন্যদিকে হাজার হাজার বারকী শ্রমিকরা চাঁদবাজ সিন্ডিকেটের হাতে জিম্মি হয়ে আছেন। প্রতিনিয়ত ওইসব চাঁদাবাজদের নৌকা প্রতি ২শ’ থেকে ১৩শ’ টাকা পর্যন্ত উৎকোচ দিতে হয় বারকী শ্রমিকদের। দিনরাত শ্রমিকরা নদীর তলদেশ থেকে কুড়িয়ে তোলা ওইসব নুড়িপাথর শেষ পর্যন্ত অসাধু ব্যবসায়ী প্রভাবশালী চক্রের কাছে বিক্রি করতে হয় পানির দরে।

শ্রমিকদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, বর্ষায় স্রোতের বিপরীতে চর এলাকায় এবং শুষ্ক মওসুমে আন্তর্জাতিক সীমানার দেড়শ গজ নিচে সোনাপুর, নাছিমপুর, শ্রীপুর গ্রামের উভয় তীরে পানির তলদেশ থেকে উত্তোলন করা হয় নুড়িপাথর। নদীর তলদেশ থেকে বার মাসই এখানকার বারকি শ্রমিকরা নুড়ি পাথর উত্তোলন করে জীবিকা নির্বাহ করে। কিন্তু সময়ের ব্যবধানে চাঁদাবাজদের দৌরাত্ম্য বেড়ে যায় এখানে। কখনও স্থানীয় প্রভাবশালী, কখনও অসাধু ব্যবসায়ী সিন্ডিকেট, আবার কখনও বালু ইজারাদার সিন্ডিকেটের নামে আদায় করা হয় নুড়িপাথর উত্তোলনকারী শ্রমিকদের কাছ থেকে উৎকোচ।

সোনালীচেলা বারকী শ্রমিক সমবায় সমিতি লিমিটেডের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মুক্তিযোদ্ধা নিজাম উদ্দিন জানিয়েছেন, তিন হাজার শ্রমিকদের সংগঠনের নামে লিজ প্রদান করার দাবি করা হয়েছে। কিন্তু নানা জটিলতার কারণে লিজ প্রদান না করায় শ্রমিকরা নিজেদের স্বার্থরক্ষা  করতে পারছে না। অন্যদিকে সরকার হারাচ্ছে রাজস্ব। নরসিংপুর ইউনিয়নের বিরেন্দ্রনগর গ্রামের বারকী শ্রমিক ইসলাম উদ্দিন বলেন, প্রতিদিন কয়েকশ’ শ্রমিক নদী থেকে নুড়িপাথর উত্তোলন করে।

কিন্তু কঠোর পরিশ্রমে তোলা নুড়িপাথরের জন্য উৎকোচ দিতে হয় নীরব চাঁদাবাজদের। কাজেই সরকারিভাবে নদীটি নুড়িপাথর কোয়ারি হিসেবে ঘোষণা করে লিজ দিলে শ্রমিকদের স্বার্থরক্ষা হবে। পূর্ব চাইরগাঁও গ্রামের বারকী শ্রমিক শফিকুল ইসলাম বলেন, সোনালী চেলার তলদেশে সারা বছরই মূল্যবান নুড়িপাথর থাকে। ইউএনও মো. কামরুজ্জামান জানান, সোনালীচেলা নদীটি কোয়ারি হিসেবে ঘোষিত না হওয়ায় সরকারিভাবে লিজ প্রদানের বিষয়টি ঊর্ধ্বতন সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের হাতে। আর চাঁদাবাজদের বিষয়ে শ্রমিকরা পুলিশের কাছে অভিযোগ করতে পারে বলেও জানান তিনি।