শুক্রবার, ১৬ মে ২০২৫, ০৫:০৮

পাখি আসতে না আসতেই হাকালুকিতে সক্রিয় পাখি শিকারিচক্র

পাখি আসতে না আসতেই হাকালুকিতে সক্রিয় পাখি শিকারিচক্র

জালাল আহমদ: দক্ষিণ এশিয়ার বৃহত্তম হাওর হাকালুকিতে সক্রিয় হয়ে ওঠছে বিষটোপে অতিথি পাখি শিকারিচক্র। শীত মৌসুম শুরু হতে না হতেই সাইবেরিয়া, চীনসহ অন্যান্য দেশ থেকে নিরাপদ আশ্রয়ের সন্ধানে কিছু অতিথি পাখি হাওরে আসতে শুরু করেছে। আর কিছুদিন পরেই ঝাঁকে ঝাঁকে আসা এসব অতিথি পাখির কলকাখলিতে মুখরিত হয়ে উঠবে হাওর এলাকার বিলগুলো।
বিভিন্ন দেশ থেকে আসা পাখি খাবারের সন্ধানে অন্যতম জলাশয় হাকালুকির বিলে নির্বিঘ্নে খাবার সংগ্রহে নামতে পারছে না। কিছু বিলে অতিথি পাখি নামলেও বিষটোপ দিয়ে নির্বিচারে চলছে পাখি শিকার। এসব দেখার যেনো কেউ নেই। যাদের দেখার কথা সেই প্রশাসনও নির্বিকার। দেশের যে কয়টি স্থানে অতিথি পাখির সমাগম ঘটে তার মধ্যে হাকালুকি হাওর অন্যতম। অতিথি পাখির সর্ববৃহৎ এই সমাগমস্থলে প্রতি বছর পুরো শীত মৌসুম হাওরে বিচরণ করে পাখিরা আবার গরমের শুরুতেই তারা ফিরে যায় স্ব-স্ব আবাসস্থলে।
এশিয়ার বৃহৎ হাকালুকি হাওর বাংলাদেশের একটি অন্যতম মিঠাপানির জলাভূমি। পশ্চিমে ভাটেরা পাহাড় ও পূর্বে পাথারিয়া মাধব পাহাড়বেষ্টিত এ হাওর সিলেট ও মৌলভীবাজার জেলার ৫টি উপজেলায় বিস্তৃত। ছোট-বড় প্রায় ২৩৮টিরও বেশি বিল ও ছোট-বড় ১০টি নদী নিয়ে গঠিত এ হাওর বর্ষাকালে প্রায় ১৮ হাজার হেক্টর এলাকায় পরিণত হয়। এই হাওরে বাংলাদেশের মোট জলজ উদ্ভিদের অর্ধেকেরও বেশি এবং দেশের গুরুত্বপূর্ণ ও সংকটাপন্ন উদ্ভিদ ও প্রাণী প্রজাতি পাওয়া যায়।
পৃথিবীর বিভিন্ন দেশ থেকে ছুটে আসে নানান প্রজাতির রঙ- বেরঙের লাখ লাখ অতিথি পাখি। পাখিগুলোর অবাধ বিচরণে অন্যরকম সৌন্দর্য ফুটে ওঠে হাওরের বিলগুলোতে। কিন্তু এক শ্রেণীর অসাধু পাখি শিকারি ও প্রভাবশালী ব্যক্তিদের ছিটানো বিষটোপ আর পাতানো ফাঁদে ধরা পড়ছে হাজার হাজার অতিথি পাখি।
ফলে প্রতি বছরই অতিথি পাখির সমাগম হ্রাস পাচ্ছে। বিপন্ন হয়ে যাচ্ছে নানা প্রজাতির দেশি-বিদেশি পাখি। পাখি শিকারিচক্র ধানের সাথে বিষ মিশিয়ে বিলের পারে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে দিয়ে ওৎপেতে বসে থাকে। আর এসব বিষাক্ত খাবার খেয়ে শত শত অতিথি পাখি চলৎশক্তি হারিয়ে ফেলে। তখন শিকারিরা এ সকল পাখি ধরে বিভিন্ন হাট-বাজারের হোটেল-রেঁস্তোরা ও বাসা-বাড়িতে বিক্রি করে মোটা অংকের অর্থ হাতিয়ে নিচ্ছে। হাওর এলাকার বিলগুলোতে অবাধে পাখি শিকার করা হলেও প্রশাসনের তেমন কোনো তৎপরতা লক্ষ্য করা যায় না।
এমনকি প্রশাসনিক অনেক কর্মকর্তার বাসা-বাড়িতেও শীতের এসব মারা পাখি উপঢৌকন হিসেবে যায় বলেও সূত্র জানিয়েছে। আরও অবাক হওয়ার মতো বিষয় হলো, বিশেষ কোনো প্রশাসনিক অনুষ্ঠান হলে হাওর এলাকার উপজেলাগুলোতে মধ্যাহ্নের ভুরিভোজে পাখির মাংস থাকার বিষয়টি যেনো এখন রেওয়াজে পরিণত হয়েছে। হাওর এলাকার লোকজন জানান, স্থানীয় একটি সংঘবদ্ধ শিকারি চক্র প্রতিদিন সন্ধ্যা থেকে হাওরখাল, চাতলা, তুরল, নাগুয়া, ফুয়ালা, চিনাউরা, পলোভাঙ্গা, ধলিয়া, পিংলাসহ বিভিন্ন বিলে বিষটোপ দিয়ে পাখি শিকারে নেমে পড়ে। ভোররাতের দিকে পাখি নিয়ে ফেরার সময় অতিরিক্ত পাখি বয়ে আনতে না পারায় কাঁদামাটির নিচে চাপা দিয়ে রাখে যাতে কেউ না দেখে। এক শ্রেণীর অসাধু শিকারি বিষটোপে অতিথি পাখি নিধনযজ্ঞ চালাচ্ছে প্রতিদিনই।
অভিযোগ রয়েছে, বিলের পাহারাদারের সাথে আঁতাত করে শিকারিরা অবাধে পাখি নিধন করছে। এ ব্যাপারে পাখি বিশেষজ্ঞ ইনাম আল হক এ প্রতিনিধিকে জানান, হাকালুকি হাওরটিতে আগের মতো পাখি আসে না। তারপরও বিলুপ্তপ্রায় পাখি থেকে শুরু করে দেশি জাতের অনেক পাখি সেখানে প্রতি শীতে নিরাপদ আশ্রয়ের খোঁজে যায়। সেগুলোকেও যদি রক্ষা না করা হয় তবে এ ব্যর্থতার দায় স্থানীয় প্রশাসনের।
মৌলভীবাজারের জেলা প্রশাসক কামরুল হাসান জানান, বিষয়টি আমার জানা নেই। সংশ্লিষ্ট সকল উপজেলার ইউএনওকে এ বিষয়ে পদক্ষেপ নিতে নির্দেশ দেয়া হবে।




Comments are closed.



পুরানো সংবাদ সংগ্রহ

সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি রবি
 
১০১১
১২১৩১৪১৫১৬১৭১৮
১৯২০২১২২২৩২৪২৫
২৬২৭২৮২৯৩০৩১  
All rights reserved © shirshobindu.com 2012-2025