জাহাঙ্গীর আলম ভুঁইয়া: অতিথি পাখির গুঞ্জনে মুখরিত হয়ে উঠছে সুনামগঞ্জের তাহিরপুর উপজেলার মাদার ফিসারীজ খ্যাত টাংগুয়ার হাওর। সেই সাথে আশে পাশের ছোট বড় হাওর গুলোতে বাদ পড়েনি অতিথি পাখিদের বিচরন। তবে আগের তুলনায় অনেকা কম দেখা যাচ্ছে এবার অতিথি পাখি।
টাংগুয়ার হাওর সুনামগঞ্জের সীমান্তবর্তী তাহিরপুর উপজেলার প্রায় ১০০ কিলোমিটার এলাকা জুড়ে বিস্তৃত ভারতের মেঘালয় পাহড়ের পাদদেশে অবস্তিত। সূদুর পরবাসী বিহঙ্গকুল তুষার পাত ও শৈত্য প্রবাহ থেকে নিজেদের রক্ষার তাগিদে প্রতি বছর শীত মৌসুমে শীত প্রধান দেশ সূদুর সাইবেরিয়া, চীন, মঙ্গোলিয়া, নেপাল সহ পৃথিবীর বিভিন্ন দেশ থেকে এরা ঝাঁেক ঝাঁকে ছুটে আসে বিশাল জল রাশির টাংগুয়ায় হাজার হাজার মাইল পথ পাড়ি দিয়ে শুধু ডানায় ভর করেই। একটানা ডানা মেলে আকাশের উড়ার ক্লান্তিতে এরা প্রথমে কিছুটা ঝিমিয়ে পড়লেও প্রচুর খাবার সমৃদ্ধ টাংগুয়ার হাওরে বিচরন করে তারা যেন সজিবতা ফিরে পায়।
টাংগুয়ার হাওরে অতিথি পাখির কলকাকলীতে মুখরিত হাওর পাড়ের গোট এলাকা জুড়ে বিরাজ করছে নয়ানাবিরাম চোখ জুরানো দৃশ্য। পৃথিবীতে প্রায় ১০হাজার প্রজাতির পাখির মধ্যে ১হাজার ৮শত ৫৫ প্রজাতির পাখিই পরিযায়ী। শীতের এই সময় পূর্নিমা আর গোর আধার আলোতে রাতের আকাশে অতিথি পাখির ডাকে এক বিভিন্ন রখম অনুভুতির জন্ম দিয়েছে টাংগুয়ার হাওড় পাড়ে বসবাকারী মানুষের মনে। কুয়াশাচন্ন ভোর থেকেই টাংগুয়ার হাওর জুড়ে দলবদ্ধ ভাবে অতিথি পাখির বিচরন করা,জলে ডুব দিয়ে মাছ শিকার করা, সামুক খাওয়া, জলকেলি, খুনটুশি আর কিচিরমিচির কলতানে সৃষ্টি হওয়া আবহ পাখি প্রেমিদের সহজেই নিয়ে যায় অন্য এক ভুবনে। ভোরে অতিথি পাখির কিচিরমিচির ডাকে হাওর পাড়ের মানুষের সকালেই ঘুম ভেঙ্গে যায়।
হাওর পাড়ের কুয়াশাচন্ন সকালের সোনালী রোধে সূর্য¯স্নান সেরে পাখির দল চষে বেড়ায় হাওরের এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে ছোট শামুক, ঘাস,শস্যদানা আর পোকামাকড়ের সন্দ্বানে। পরবাসী বিঙ্গগকুল আর দেশীয় পাখিদের মিলন-অভিসারে যেন র্স্বগীয় পরিবেশ তৈরি হয়েছে তাহিরপুরের টাংগুয়ার হাওরে। টাংগুয়ার হাওরে প্রায় ৫১ প্রজাতির পাখি বিচরন করে আগত পাখির মধ্যে উল্লেখ্য যোগ্য হল-বিরল প্রজাতির প্যালাসেস ঈগল,মৌলভীহাঁস,পিয়ারী,কাইম,রামকুড়া,মাথারাঙ্গা,বালি হাঁস,লেঞ্জা,চোখা চোখি প্রভৃতি। আর অতিথি পাখিদের সঙ্গে মিলে মিশে আছে আমাদের দেশীয় পাখিরাও।
জানা যায়, ২০১১ সালে পাখি শুমারীতে এই হাওরে চটাইন্নার বিল, তারখাল, রোয়া বিল, লেচুয়ামারা বিল, রুপাবই, হাতিরগাতা বিল, বেরবেরিয়া বিল, বাইল্লার ডুবি,তেকুন্না ও আন্না বিল প্রায় ৪৭ প্রজাতির জলচর পাখি বা ওয়াটারফাউলের মোট ২৮ হাজার ৮শত ৭৬ টি পাখি গনণা করা হয়। এছারাও এই শুমারিতে অন্যান্য পাখির পাশাপাশি ছোখে পড়ে-মরিচা ভুতিহাঁস,পিয়াংহাস,নীলশির,পাতিহাঁস ইত্যাদি।
কিন্তু বর্তমানে দিন দিন এই পাখির আগমনের সংখ্যা কমে যাচেছ এক শ্রেনীর অসাধু পাখি শিকারী ও পাখি ব্যবসায়ীদের কারনে। তারা রাতের আধারে মাছ ধরার জাল দিয়ে অতিথি পাখি শিকার করে। রাষ্ট্রীয় ভাবে অতিথি পাখি শিকার করা দন্ডনীয় হলেও এলাকার স্থানীয় কিছু পাখি শিকারী,ব্যবসায়ী-পুলিশ,আনসার বাহিনীদের সহযোগীতার অতিথি পাখি শিকার করে যার জন্য পাখির সংখ্যা দিন দিন কমে যাচেছ বলে স্থানীয় এলাকাবাসীর অভিযোগ। তাহিরপুর বাজারের ব্যবসায়ী রফিকুল ইসলাম জানান- এ হাওরে বন্য প্রানী সংরক্ষন ও নিরাপত্তা আইন কর্যকর করা না হলে বিপন্ন হবে টাংগুয়ার হাওরের স্বাভাবিক জীববৈচিত্র্য।
অন্য দিকে যোগাযোগ ব্যবস্থা,থাকা-খাওয়ার সু-ব্যবস্থা না থাকার কারনে পর্যটকদের টাংগুয়ার হাওরে বেড়াতে আসা কমে গেছে। উপজেলা চেয়ারম্যান কামরুজ্জামান কামরুল জানান- ঐতিয্যবাহী টাংগুয়ার হাওরের জীববৈচিত্র রক্ষা করা ও পর্যটকদের আকৃষ্ট করার জন্য যুগপোযোগী কার্যকর প্রদক্ষেপ গ্রহন করা খুবেই প্রয়োজন। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ইকবার হোসেন জানান-টাংগুয়ার হাওর রক্ষনাবেক্ষনের জন্য সর্বাত্মক চেষ্টা অব্যাহত রয়েছে এবং কোন প্রকার অনিয়ম ছাড় দেওয়া হবে না।