শীর্ষবিন্দু নিউজ ডেস্ক: তৃতীয় দিনের মতো গুলশানের রাজনৈতিক কার্যালয়ে অবরুদ্ধ রয়েছেন বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া। এখনো কার্যালয়ের মূল গেটের বাইরে পুলিশের দেওয়া তালা ঝুলছে। গেটের আশপাশে বিপুল সংখ্যক পুলিশ মোতায়েন রয়েছে। সোমবার দুপুরে খালেদা জিয়া কার্যালয় থেকে বের হওয়ার চেষ্টা করলেও পুলিশের তালার কারণে বের হতে পারেননি।
ওইসময় পুলিশ পিপার স্প্রে নিক্ষেপ করে। এতে খালেদা জিয়া কিছুটা অসুস্থ বোধ করেন। শনিবার রাত থেকে গুলশান কার্যালয়ে ‘বন্দি’ রয়েছেন সাবেক এই প্রধানমন্ত্রী। ওইদিন রাতে তিনি কার্যালয় থেকে বেরুতে চাইলে পুলিশ প্রথম বাধা দেয়। গুলশান ২-এর ৮৬ নম্বর সড়কের ৬ নম্বর বাড়ি। বিরোধী জোটের শীর্ষ নেতা ও বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার রাজনৈতিক কার্যালয়। শনিবার রাত ৮টা ২০ মিনিটে দলীয় কাজকর্ম সারতে কার্যালয়ে আসেন খালেদা জিয়া।
এরপর থেকেই কার্যালয়ের সামনে তিন স্তরের নিরাপত্তা বলয়। বাড়ানো হয় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের। অর্ধশতাধিক নারী পুলিশ সদস্যকে মোতায়েন করা হয় কার্যালয়ের সামনে। কার্যালয়ের সামনের রাস্তার দক্ষিণ পাশে একটি জলকামান ও পুলিশ ভ্যান ও উত্তর পাশে আরেকটি জলকামান ও পুলিশ ভ্যান দিয়ে ব্যারিকেড। সাড়ে রাত সাড়ে ১১টার দিকে নয়াপল্টন কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে দলের যুগ্ম মহাসচিব রিজভী আহমেদ হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়েন। এমন খবর পেয়ে রিজভী আহমেদকে দেখতে যাওয়ার জন্য গুলশান কার্যালয় থেকে বের হওয়ার প্রস্তুতি নেন তিনি। এসময় বিএনপি চেয়ারপারসনের পথরোধ করে পুলিশ। প্রায় আধাঘণ্টা গাড়িতে বসে থেকে ফের কার্যালয়ে ঢুকে পড়েন তিনি।
পূর্ব ঘোষিত ৫ই জানুয়ারির সমাবেশে যাওয়া ঠেকাতে শনিবার রাত ১২টার পর থেকেই একে একে কার্যালয়ের সামনের রাস্তার দুইপাশে এনে রাখা হয় ১১টি ইট ও বালুভর্তি ট্রাক। এরপর থেকেই অবরুদ্ধ হয়ে পড়েন তিনবারের এই সাবেক প্রধানমন্ত্রী। এর আগে ২০১৪ সালের ৫ই জানুয়ারির একতরফা নির্বাচনকে কেন্দ্র করে গুলশানের নিজ বাসভবনে দীর্ঘ ১৫ দিন অবরুদ্ধ ছিলেন খালেদা জিয়া। এদিকে গত রাত ১২টা পর্যন্ত গুলশান কার্যালয়ে অবরুদ্ধ অবস্থায় দীর্ঘ ৫০ ঘণ্টা পার করেছেন তিনি। বিনিদ্র রাত কাটাচ্ছেন। ফলমূল, রুটি-সবজি ও স্যুপ খেয়ে দিন পার করছেন। মহিলা নেত্রীদের সঙ্গে কথা বলে সময় যাচ্ছে তার। টেলিফোনে দলের নেতাদের সঙ্গে সামগ্রিক পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা করেছেন সময়ে সময়ে।
বিএনপি অফিসের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, ওই কার্যালয়ে ঘুমানোর কোন ব্যবস্থা না থাকায় শনিবার রাতেই লেপ, কম্বল, তোষক ও খাবারসহ বিভিন্ন সামগ্রী আনা হয়। তবে মহিলা দলের কয়েকজন নেত্রীর সঙ্গে আলাপ-আলোচনা করেই রাত পার করে দেন খালেদা জিয়া। টেলিফোনে কয়েক দফা কথাও বলেন। শেষে ফজরের নামাজ পড়ে দোতলায় নিজের চেম্বারে সোফায় হেলাল দিয়ে কিছু সময়ের জন্য ঘুমান। এছাড়া শনিবার রাতে পিকআপের করে একটি খাটও আনা হয়েছিল। আকারে বড় হওয়ায় শেষ পর্যন্ত সেটি আর পাতা যায়নি।
তবে রোববার দিনে স্থায়ী কমিটির সভাকক্ষে সেটি পাতা হয়। রোববার দুপুর তার জ্যেষ্ঠ ছেলে ও দলের সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানের শ্বশুরবাড়ি থেকে খাবার পাঠানো হয়। এছাড়া তার ছোট ভাইয়ের স্ত্রীও খাবার নিয়ে এসেছিলেন। সেই খাবার কিছু খেয়েছেন তিনি। এদিকে বিএনপি চেয়ারপারসনের প্রেস সচিব মারুফ কামাল খান সোহেল মানবজমিনকে জানিয়েছেন, চেয়ারপারসন এমনিতেই কম খাবার খান। রোববার রাতে কিছু ফলমূল খেয়েছেন। কিছুক্ষণ পরপর রং চা খেয়েছেন। সকালে একটি রুটি ও সবজি এবং একটু স্যুপ খেয়েছেন।
এদিকে গতকাল বিকাল পৌনে ৪টায় কার্যালয়ের দোতলা থেকে নিচে নামেন খালেদা জিয়া। ৫ই জানুয়ারি গণতন্ত্র হত্যা দিবস উপলক্ষে পূর্বঘোষিত সমাবেশে যোগ দিতে বের হওয়ার চেষ্টা করেন তিনি। এসময় পুলিশ পিপার সেপ্র ছোড়ে। এতে সন্ধ্যার পর তিনি কিছুটা অসুস্থ হয়ে পড়েন। এ ব্যাপারে মারুফ খান কামাল সোহেল বলেন, বিকালে পুলিশের ছোড়া পিপার সেপ্রতে ম্যাডাম (খালেদা জিয়া) কিছুটা অসুস্থ হয়ে পড়ায় তার বক্তিগত চিকিৎসক ডা. শামীম এসে চিকিৎসা দিয়েছেন। ওদিকে অবরুদ্ধ অবস্থায় রোববার খালেদা জিয়া বিবিসি বাংলাকে একটি টেলিফোন সাক্ষাৎকার দিয়েছেন।