শনিবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৫, ০৮:৫০

মিডিয়ায় তারেকের বক্তব্য প্রকাশ বা প্রচারে নিষেধাজ্ঞা

মিডিয়ায় তারেকের বক্তব্য প্রকাশ বা প্রচারে নিষেধাজ্ঞা

শীর্ষবিন্দু নিউজ ডেস্ক: বিএনপির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমান যতদিন আইনের দৃষ্টিতে পলাতক থাকবেন, ততদিন তার কোনো বক্তব্য বিবৃতি সংবাদমাধ্যম, সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যম বা অন্য কোনো মাধ্যমে প্রচার বা প্রকাশের ওপর নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে আদালত। একটি রিট আবেদনের শুনানি করে বিচারপতি কাজী রেজা-উল হক ও বিচারপতি আবু তাহের মো. সাইফুর রহমানের বেঞ্চ বুধবার এই আদেশ দেয়।

আদালত তথ্য সচিব ও স্বরাষ্ট্র সচিবকে এই অন্তর্বর্তীকালীন আদেশ বাস্তবায়ন করতে বলেছে। পাশাপাশি তারেক রহমানের বক্তব্য প্রচারে নিষেধাজ্ঞা দিতে কেন নির্দেশনা দেওয়া হবে না- তা জানতে চেয়ে একটি রুলও জারি করা হয়েছে। রুলের নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত এই নিষেধাজ্ঞা জারি থাকবে বলে ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল বিশ্বজিৎ রায় গণমাধ্যমকে জানান।

দুই সপ্তাহের মধ্যে তথ্য সচিব, স্বরাষ্ট্র সচিব, আইন সচিব, পুলিশ মহাপরিদর্শক, বিটিভির মহাপরিচালক, বিটিআরসির চেয়ারম্যান, একুশে টিভির প্রধান বার্তা সম্পাদক, কালের কণ্ঠের সম্পাদক ও তারেক রহমানকে রুলের জবাব দিতে বলা হয়েছে। একইসঙ্গে তারেক রহমানের বর্তমান অবস্থা ও তার পাসপোর্ট নবায়ন করা হয়েছে কি-না, এক মাসের মধ্যে তা জানাতে পররাষ্ট্র সচিবকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

সাম্প্রতিক সময়ে বাংলাদেশের ইতিহাস ও বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে বিভিন্ন মন্তব্য করে বিতর্কিত হওয়া বিএনপির জ্যেষ্ঠ ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানের বক্তব্য প্রচারে নিষেধাজ্ঞা চেয়ে মঙ্গলবার এই রিট আবেদনটি করেন নাসরিন সিদ্দিকী লিনা নামের এক আইনজীবী। তার পক্ষে আইনজীবী হিসাবে শুনানি করেন ইউসুফ হোসেন হুমায়ুন, সাহারা খাতুন, এসএম মুনীর, শ ম রেজাউল করিম ও সানজিদা খানমসহ কয়েকজন। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল বিশ্বজিৎ রায়।

নাসরিন সিদ্দিকী লিনা তার রিট আবেদনে বলেন, যেহেতু এই কালপ্রিটের অবস্থান চিহ্নিত করে তাকে এখনই ধরা সম্ভব না। সেই কারণে তার বক্তব্য প্রচারে তথ্য সচিবকে নির্দেশনা দিতে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে নির্দেশনা দেওয়া যেতে পারে।

আদেশের পর রেজাউল করিম বলেন, এই আদেশের ফলে পত্রিকা, ইলেকট্রনিক মাধ্যম, সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমের পাশাপাশি অনলাইনেও তারেকের কোনো বক্তব্য প্রচার করা যাবে না। সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে তারেকের বক্তব্য প্রচারে নিষেধাজ্ঞা কীভাবে বাস্তবায়ন হবে- এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, “আদালত বিবাদীদের প্রতি আদেশ দিয়েছেন। তারা এই আদেশ বাস্তবায়ন করবেন। নিশ্চয়ই তাদের কাছে বাস্তবায়নের কোনো ‍উপায় আছে।”

বিভিন্ন মামলার অন্য যে আসামিরা পলাতক, তাদের বক্তব্য প্রকাশ বা প্রচার করা যাবে কি-না, এমন প্রশ্নে রেজাউল করিম বলেন, রিটে শুধু পলাতক তারেক রহমানের বিষয়ে বলা হয়েছে, এ আদেশ তার ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য হবে। তারেক রহমানের সব বক্তব্য এই আদেশের আওতায় আসবে বলেও তিনি উল্লেখ করেন। শুনানিতে শ ম রেজাউল বলেন, সর্বোচ্চ আদালত বঙ্গবন্ধুকে জাতির জনক ও স্বাধীনতার ঘোষক বলে রায় দিয়েছেন। এরপরও বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে তারেক বিভিন্ন বক্তব্য দিচ্ছেন, পাক বন্ধু বলছেন। এটা সংবিধানের ৭(ক) এবং ৩৯ ধারার লঙ্ঘন। তিনি জনশান্তি বিনাশ করছেন।

এই রিট আবেদনের সঙ্গে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম ও জনকণ্ঠে প্রকাশিত দুটি প্রতিবেদন যুক্ত করা হয়। তা দেখে আদালত জনকণ্ঠ ও বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকেও এ মামলায় পক্ষভুক্ত করেন। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে বিবাদী করেন। শুনানিতে ইউসুফ হোসেন হুমায়ুন বলেন, তারেক রহমান স্বাধীনতার ঘোষণাপত্রেরও লঙ্ঘন করেছেন। বিশ্বের কোথাও কেউ জাতির পিতার অবমাননা করে না। ইন্দোনেশিয়ায় আমি গিয়েছি, সেখানে জাতির পিতার বিরুদ্ধে কেউ কথা বলে না। ভারতে বিজেপি সরকার ক্ষমতায় থাকার পরও মহাত্মা গান্ধীর বিরুদ্ধে কেউ বক্তব্য দেয় না।

আদালত এ সময় বলেন, তারেক নাগরিকদের মধ্যে অরাজকতা সৃষ্টি করছেন। এই রিট আবেদনে বলা হয়, ফেরারি আসামি তারেক রহমান সংবিধান লঙ্ঘন করে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সম্পর্কে নানা অপরাধমূলক কথা বলছেন, যা দণ্ডবিধি অনুসারেও অপরাধ। এর মাধ্যমে তিনি বাংলাদেশের ১৬ কোটি মানুষের অনুভূতিতে আঘাত দিচ্ছেন, যা তথ্য প্রযুক্তি আইন অনুসারে অপরাধ। এর মাধ্যমে তিনি শান্তিভঙ্গ ও আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি ঘটাচ্ছেন। পলাতক এই আসামির বক্তব্য গণমাধ্যমে প্রচার হওয়ায় পুনরাবৃত্তিতে উৎসাহ দেওয়া হচ্ছে। গণমাধ্যম পুনরুউৎপাদন না করলে এর পুনরাবৃত্তির সুযোগ থাকবে না।

২১ অগাস্টসহ বিভিন্ন মামলা মাথায় নিয়ে ছয় বছর ধরে লন্ডনে অবস্থান করা তারেক সাম্প্রতিক সময়ে কয়েকটি সভায় বাংলাদেশের ইতিহাসের নিজস্ব ব্যাখ্যা দাঁড় করিয়ে বিতর্কিত হয়েছেন। এসব বক্তব্যের জন্য ক্ষমতাসীন দলের নেতাদের তীব্র সমালোচনার মুখে পড়তে হয়েছে তারেককে। সেইসঙ্গে তাকে বাংলাদেশে ফিরিয়ে এনে বিচারের মুখোমুখি করার দাবিও উঠেছে। টানা কয়েকটি সভায় বিতর্কিত বক্তব্যের জন্য বাংলাদেশে তারেকের বিরুদ্ধে কয়েক ডজন মামলা হয়েছে, যাতে তার বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানাও জারি করেছে আদালত।




Comments are closed.



পুরানো সংবাদ সংগ্রহ

সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি রবি
 
১০১১১২১৩
১৪১৫১৬১৭১৮১৯২০
২১২২২৩২৪২৫২৬২৭
২৮২৯৩০  
All rights reserved © shirshobindu.com 2012-2025