পিয়ারুল ইসলাম, গাইবান্ধা: এককালের খর¯্রােতা তিস্তা নদী পলি জমে এখন নালায় পরিণত হয়েছে। বন্ধ হয়ে গেছে নৌ যোগাযোগ। ফলে চরাঞ্চলের কয়েক হাজার মাঝি ও মৎস্যজীবী চরম বিপাকে পড়েছেন। তাদের অনেকে পৈত্রিক পেশা ছেড়ে দিয়ে বিভিন্ন শহরবন্দরে রিকশা-ভ্যান চালিয়ে এবং গার্মেন্টে কাজ করে বা অন্য কোনো ভাবে জীবিকা নির্বাহ করছেন। গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জ উপজেলার মধ্য দিয়ে প্রবাহিত এ নদীর বুকজুড়ে জেগে ওঠা চরে শতশত নৌকা পড়ে আছে।
এ বিষয়ে হরিপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. মোজাহারুল ইসলাম জানান, সুন্দরগঞ্জ উপজেলার তারাপুর, দহবন্দ, বেলকা, হরিপুর, চন্ডীপুর, কাপাশিয়া ও শ্রীপুর ইউনিয়নের ওপর দিয়ে তিস্তা নদী প্রবাহিত। ইতোপূর্বে এ সব ইউনিয়নের ১২০টি চরাঞ্চলের হাজার হাজার মানুষের যাতায়াতের একমাত্র অবলম্বন ছিল এই নদী। নদী শুকিয়ে যাওয়ায় তা এখন মরা খালে পরিণত হয়েছে। ফলে যাতায়াতে সমস্যা দেখা দিয়েছে। এছাড়াও তিস্তা নদীর নাব্য হ্রাস পাওয়ায় উপজেলার ৭টি ইউনিয়নের ১২০টি চরাঞ্চলের দেড় হাজার নৌ শ্রমিক ও শত শত জেলে বেকার হয়ে পড়েছেন।
হরিপুর গ্রামের জয়নাল আবেদীন বলেন, ‘এক সময় আমরা মাছ ধরে হাট-বাজারে বিক্রি করে জীবিকা নির্বাহ করতাম। নদী শুকিয়ে যাওয়ায় মাছ না থাকায় আমরা এখন চরম দুর্ভোগে পড়েছি।’ চরাঞ্চলে বসবাসরতদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, অনেকেই এখন দাদন ব্যবসায়ী ও এনজিও থেকে চড়া সুদে ঋণ নিয়ে বিভিন্ন শহরে পাড়ি জমাচ্ছেন। সেখানে তারা রিকশা-ভ্যান চালান, পোশাক কারখানা ও স্থাপনা প্রভৃতি ক্ষেত্রে কাজ করছেন।
হরিপুর গ্রামের নৌ শ্রমিক আমজাদ মিয়া বলেন, ‘আজ থেকে ১০ বছর আগে সারা বছরই নৌকা চালিয়ে জীবিকা নির্বাহ করতাম। এখন নদীতে নৌকা চালানোর মতো কোনো জায়গা নেই। তাই এটা-ওটা করে সংসার চালাচ্ছি।’
চন্ডীপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান গোলাম মোস্তফা নদীর নাব্যতা সঙ্কটের বিষয়ে জানান, নদী খনন করে নাব্য ফিরিয়ে আনলে চরাঞ্চলের নৌ শ্রমিক ও জেলেরা তাদের পরিবার-পরিজন নিয়ে বাঁচার উপায় খুঁজে পাবেন। এ জন্য তিনি নদী ডেজিং ও খননের জন্য সরকারের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।