বুধবার, ২৩ এপ্রিল ২০২৫, ০৫:৩৯

যুক্তরাজ্য জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরাম আয়োজিত সংবাদ সম্মেলন

যুক্তরাজ্য জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরাম আয়োজিত সংবাদ সম্মেলন

বিএনপি চেয়ারপার্সন দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে অবরুদ্ধ করে রাখা, দেশজুড়ে রাজনৈতিক নেতাকর্মী হত্যা এবং সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান দেশনায়ক তারেক রহমানের বক্তব্য প্রচার/প্রকাশে নিষেধাজ্ঞার প্রতিবাদে যুক্তরাজ্য জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরাম আয়োজিত

সংবাদ সম্মেলন

স্থান: সোনারগাঁও রেস্টুরেন্ট,  সময়: ১৩ জানুয়ারী ২০১৫

উপস্থিত সম্মানিত সাংবাদিকবৃন্দ,

আসসালামুআলাইকুম। যুক্তরাজ্য জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামের আমন্ত্রণে এই সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত হওয়ার জন্য আপনাদের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি। আমাদের মাঝে উপস্থিত আছেন যুক্তরাজ্য জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরাম এবং যুক্তরাজ্য বিএনপির নেতৃবৃন্দ।

সাংবাদিক বন্ধুরা,

আজকের এই সংবাদ সম্মেলনের শুরুতেই  গণতন্ত্রের নেত্রী, সাবেক তিনবারের প্রধানমন্ত্রী ও বিএনপি চেয়ারপার্সন দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে অবরুদ্ধ করে রাখার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি। বিএনপির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান দেশনায়ক তারেক রহমানের বক্তব্য প্রচার-প্রকাশে হাই কোর্টের সাম্প্রতিক দেয়া নিষেধাজ্ঞায় গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করছি। বাংলাদেশে গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের দাবিতে রাজপথে লড়াইরত গণমানুষের গণআন্দোলনের প্রতি সমর্থন এবং আন্দোলনে নেতৃত্ব দিতে গিয়ে পুলিশ এবং আওয়ামী সন্ত্রাসীদের গুলিতে যারা শহীদ হয়েছেন তাদের আত্মার মাগফেরাত কামনা করছি। এই সাহসী বাংলা মায়ের দামাল ছেলেদের রক্ত বৃথা যাবে না। মহান আইন সেবা পেশার অভিজ্ঞতা এবং নৈতিক দায় থেকে আমরা অবৈধ আওয়ামী লীগ সরকারের এহেন ন্যাক্কারজনক কর্মকান্ডের আইনগত ও মানবাধিকারের আলোকে পর্যবেক্ষণ তুলে ধরছি।

বিশেষ করে একজন সাবেক প্রধানমন্ত্রী, যিনি বাংলাদেশের জনগণের কাছে Mother of Democracy (গণতন্ত্রের মা) হিসেবে বিবেচিত, সেই জননন্দিত দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে গত ১১ দিন ধরে স্বৈরাচারিনী শেখ হাসিনার অবৈধ সরকার অবরুদ্ধ করে রেখেছে। তাঁর রাজনৈতিক মত প্রকাশ এবং স্বাধীনভাবে চলাফেরার অধিকার কেড়ে নিয়েছে নব্য বাকশালী দখলদার সরকার। যখন এই গণতন্ত্রের নেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে বাংলার জনগণ গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের লড়াই করছে, ঠিক সেই সময় তাকে অবরুদ্ধ করে দেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব বিনষ্টের নতুন চক্রান্তে মেতে উঠেছে দালাল চক্র। তারা দেশনেত্রীকে বিষাক্ত পিপার স্প্রে করে মানবাধিকারের চরম লঙ্ঘণ করেছে।

প্রিয় সাংবাদিক ভাইয়েরা,

আওয়ামী ফ্যাসিবাদী শক্তি সেখানেই থেমে থাকেনি। দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের চলমান আন্দোলনে নেতাকর্মী এবং দেশবাসীকে দিকনির্দেশনা দিতে শুরু করেন বিএনপির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান দেশনায়ক তারেক রহমান। সারাদেশে যখন আন্দোলনের অগ্নিস্ফুলিঙ্গ ছড়িয়ে পড়ে, রাজপথে নেমে আসে গণমানুষ, ঠিক সেই মুহূর্তে দেশনায়ক তারেক রহমানের ফ্রিডম অব স্পীস কেড়ে নেয় বাকশালী সরকার। আদালতের কাঁধে বন্দুক রেখে আওয়ামী লীগ তাদের এই দলীয় জঘন্য এজেন্ডা বাস্তবায়ন করেছে। দেশের হাইকোর্টও ন্যাক্কারজনক এই এজেন্ডা বাস্তবায়ন করতে বাংলাদেশের ভবিষ্যত প্রধানমন্ত্রী দেশনায়ক তারেক রহমানের বক্তব্য প্রচার/প্রকাশে মিডিয়ার ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করে। যা ইতিহাসে আর কখনো ঘটেছে বলে আমাদের জানা নেই। এমনকি এক্ষেত্রে আইনের যথাযথ প্রক্রিয়াও অনুসরণ করা হয়নি। কেননা আদালতে রিট দায়েরের পর শুনানির প্রথম দিনেই যার বিরুদ্ধে অভিযোগ আনা হয়েছে, তাকে কোনো ধরণের আত্মপক্ষ সমর্থন বা যুক্তি তুলে ধরার সুযোগ দেয়ার আগেই তার বক্তব্য প্রচার/প্রকাশে নিষেধাজ্ঞা দেয়া হলো। এটি যথাযথ আইনী প্রকিয়ায় পরিচালিত হলে প্রথমেই কারণ দর্শানো নোটিশ দেয়ার সুযোগ ছিল। কিন্তু আদালত সম্পূর্ণভাবে সরকারের ইচ্ছার প্রতিফলন ঘটাতে প্রথমে বিএনপির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানের বক্তব্য প্রচার/প্রকাশে নিষেধাজ্ঞা এবং সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে কারণ দর্শাতে বলেছেন। এ ধরণের আদেশ আইনের দৃষ্টিতেই উদ্দেশ্যমূলক হিসেবে বিবেচিত।

বিশ্ব ইতিহাসে নজিরবিহীন আদালতের এই রুলিং বাংলাদেশের সংবিধানেরও স্পিরিট বিরোধী। সংবিধানের ৩৯ নং ধারায় প্রতিটি নাগরিকের ফ্রিডম অফ স্পীচ এন্ড এক্সপ্রেশন (কথা বলা এবং মত প্রকাশ) এবং ফ্রিডম অফ প্রেস (প্রচার) এর নিশ্চয়তা দেয়া হয়েছে। আর এই আদেশের মাধ্যমে একজন নাগরিকের ফ্রিডম অব এক্সপ্রেশন লঙ্ঘণ করা হয়েছে। ফ্রিডম অব প্রেস-এর ওপরও নিষেধাজ্ঞা জারি করেছেন আদালত। এই আদেশ জাতিসংঘের আর্টিকেল ১৯-এর ইউনিভার্সাল ডিক্লারেশন অব হিউম্যান রাইটস্-এ দেয়া ব্যক্তি অধিকারের বিরোধী। ইউরোপিয়ান কনভেনশনের হিউম্যান রাইটস্-এর আর্টিকেল-১০ এ স্বীকৃত মৌলিক অধিকারও আদালতের আদেশে ক্ষুন্ন হয়েছে। জাতিসংঘের The International Covenant on Civil and Political Rights (ICCPR) চুক্তিতে স্বাক্ষরকারী দেশ হিসেবে বাংলাদেশের কোনো কর্তৃপক্ষ একজন নাগরিকের ফ্রিডম অব স্পীস কেড়ে নিতে পারে না। কেননা আইসিসিপিআর-এর ঘোষণা মতে, নাগরিক এবং রাজনৈতিক স্বাধীনতার ওপর কোনো হস্তক্ষেপ চলবে না।

সম্মানিত সাংবাদিকবৃন্দ,

আপনারা জানেন, বর্তমান অনির্বাচিত অবৈধ সরকার বিএনপির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানের বিরুদ্ধে অসংখ্য মিথ্যা মামলা দিয়ে হয়রাণি করে চলেছে। কেবল একটি বক্তব্যের জের ধরে তাঁর বিরুদ্ধে আওয়ামী লীগ ৪৭টি মামলা দিয়েছে। এমনকি সরকার প্রভাব খাটিয়ে কিছু মামলায় আদালতের মাধ্যমে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করিয়েছে।

সর্বশেষ গত ৮ জানুয়ারি দেশনায়ক তারেক রহমানের বিরুদ্ধে সম্পুর্ণ রাজনৈতিক উদ্দেশ্যমূলকভাবে ভিত্তিহীন অভিযোগ এনে রাষ্ট্রদ্রোহ মামলা দায়ের করেছে। রাষ্ট্রদ্রোহ মামলায় যে অভিযোগ আনা হয়েছে আইনের দৃষ্টিতে এটা হাস্যকর। একজন রাজনৈতিক নেতা, জননেতা তাঁর দলের কর্মী-সমর্থক এবং দেশবাসীর উদ্দেশ্যে বক্তৃতা দিয়েছেন, তা গণমাধ্যমে প্রচারিত হয়েছে। এতে কোনো রাষ্ট্রদ্রোহ মামলা হওয়ার সুযোগই নাই। এমন হাস্যকর রাষ্ট্রদ্রোহ মামলা দায়েরের মাধ্যমে অবৈধ সরকার বাংলাদেশ রাষ্ট্রকেই হাস্যকর বানাতে চাইছেন।

আপনারা জানেন, তারেক রহমানের বিরুদ্ধে করা সব রাজনৈতিক মামলাই বিচারাধীন রয়েছে। সরকার বহু চেষ্টা করেও আইনের মধ্যে থেকে তাঁর বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নিতে পারেন নি। সেজন্য অনেক ধরণের চক্রান্ত-ষড়যন্ত চলছে। এরই মধ্যে ২০১৩ সালের ১৭ নভেম্বর একটি মামলায় আদালতের রায়ে তারেক রহমান সম্পূর্ণ নির্দোষ প্রমাণিত হয়েছেন এবং বেকসুর খালাস পেয়েছেন। তাই এমন একজন রাজনীতিক এবং জননন্দিত জননেতার বিরুদ্ধে এ ধরণের নিষেধাজ্ঞা সত্যিই দুঃখজনক। দেশবাসী এমন আদেশ কোনোভাবেই মানবে না।

সম্মানিত সাংবাদিকবৃন্দ,

আওয়ামী বাকশালী সরকার জনগণের ভোটাধিকার কেড়ে নিয়ে ক্ষমতা দখল করে বসে আছে। গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারে দেশনত্রী বেগম খালেদা জিয়া এবং দেশনায়ক তারেক রহমানের নেতৃত্বে যে গণলড়াই গড়ে উঠেছে – তা দমনে রাজপথে হত্যা, গুম এবং মামলা-হামলা অব্যাহত রেখেছে। গত ১২ দিনে ১৪ জন নাগরিককে হত্যা করে প্রমাণ করেছে রক্তখেকো শেখ হাসিনা খুব সহজে বিদায় নেবে না। বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, ভাইস চেয়ারম্যান শমসের মবিন চৌধুরী, চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা শামসুজ্জামান দুদু, যুগ্ম মহাসচিব মোহাম্মদ শাহজাহানসহ রাজপথের আন্দোলনে নেতৃত্বদানকারী জননেতাদের গণহারে গ্রেফতার করে চলেছে। আপনারা দেখেছেন, বিএনপি চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা রিয়াজ রহমানকে প্রকাশ্য রাজপথে পুলিশের সামনে গুলি করে হত্যা চেষ্টা করা হয়। গণদুশমন জাসদের নেতা মঈন উদ্দিন খান বাদলের ‘আন্দোলনকারীদের বুকে গুলি’ করার নির্দেশের কয়েকঘন্টার মধ্যে সাবেক এই পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রীকে গুলি করা হলো। এসব প্রমাণ করে অবৈধ শেখ হাসিনার গদি নড়বড়ে হয়ে গেছে।  জনতার লড়াইয়ের মুখেই তাকে বিদায় নিতে হবে।

তাই আমরা আজকে এই সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে দেশবাসীকে আহ্বান জানাতে চাই, দেশ রক্ষার আন্দোলনে বিজয় অর্জনই আমাদের গন্তব্য। শেখ হাসিনার বিদায় না হওয়া পর্যন্ত লড়াই চলবে।

যুক্তরাজ্য জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরাম সুদূর প্রবাসে বসে বাংলাদেশের রাজপথে গণতন্ত্র পনুরদ্ধারের সৈনিকদের আকুন্ঠ সমর্থন দিচ্ছে। একইসঙ্গে আমরা এ ঘোষণা দিচ্ছি যে, রাজপথের লড়াইয়ে শাহাদতবরণকারী গণতন্ত্রের সৈনিকদের হত্যার দায়ে শেখ হাসিনাকে অচিরেই আন্তর্জাতিক আদালতে বিচারের মুখোমুখি করতে যুক্তরাজ্য জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরাম যথাযথ পদক্ষেপ নেবে।

চলমান আন্দোলনে দেশনায়ক তারেক রহমানের দিকনির্দেশনা আন্দোলনরত দেশবাসীর কাছে পৌঁছাতে যুক্তরাজ্য জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরাম সারাদেশে জেলা-উপজেলার আইনজীবীদের সঙ্গে নেটওয়ার্ক গড়ে তুলে যথাযথ ভূমিকা রাখবে।

সবশেষে আজকের এই সংবাদ সম্মেলন থেকে বাংলাদেশের হাইকোর্টের প্রিত আহ্বান জানাবো, বাংলাদেশের মানুষের সাংবিধানিক মৌলিক অধিকার রক্ষার্থে, জাতিসংঘ সহ বিশ্বের অন্য সব আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠানে বাংলাদেশের স্বাক্ষর করা হিউমান রাইটস চুক্তিগুলোর প্রতি সম্মান দেখিয়ে, বাংলাদেশে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠায় রাজনৈতিক নেতাদের বাকস্বাধীনতার গুরুত্ব অনুধাবন করে অবিলেম্ব নিজেদের দেয়া আদেশকে স্বপ্রণোদিত হয়ে প্রত্যাহারে করে নিবেন।

আগামী ২৫ জানুয়ারি কালো দিবসের আগেই ৫ জানুয়ারি গণতন্ত্র হত্যাকারী শেখ হাসিনার বিদায় নিশ্চিত হবে। জনগণের বিজয় অবশ্যাম্ভাবী। ‌

শুভেচ্ছাসহ

(ব্যারিস্টার তারেক বিন আজিজ)                                              (সলিসিটর বিপ্লব পোদ্দার)

আহ্বায়ক                                                                              সদস্য সচিব

যুক্তরাজ্য জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরাম




Comments are closed.



পুরানো সংবাদ সংগ্রহ

সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি রবি
 
১০১১১২১৩
১৪১৫১৬১৭১৮১৯২০
২১২২২৩২৪২৫২৬২৭
২৮২৯৩০  
All rights reserved © shirshobindu.com 2012-2025