নিউজ ডেস্ক: রপ্তানি আয়ের কয়েকটি প্রধান খাতের আয় কমলেও চলতি অর্থবছরের প্রথমার্ধে অপ্রচলিত অর্থাৎ বাইসাইকেল, ফলমূল, শুকনো খাবার, মসলা, প্লাস্টিক, জাহাজ নির্মাণ, উল ও উলের তৈরি পণ্য বিক্রি বাড়ার পাশাপাশি সমপ্রসারিত হয়েছে বাংলাদেশী পণ্যের বাজার। এই অপ্রচলিত কিছু খাতে রপ্তানি আয়ও বেড়েছে উল্লেখযোগ্য হারে।
আর এর ওপর ভর করে জুলাই-ডিসেম্বর সময়ে রপ্তানি খাতে ইতিবাচক প্রবৃদ্ধি ধরে রেখেছে বাংলাদেশ। রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) তথ্য অনুযায়ী, এ সময়ে পণ্য রপ্তানি করে বাংলাদেশ ১,৪৯১ কোটি ৪০ লাখ (১৪.৯১ বিলিয়ন) ডলার আয় করেছে, যা গত অর্থবছরের একই সময়ের চেয়ে ১.৫৬% বেশি। ২০১৪-১৫ অর্থবছরে রপ্তানি আয়ের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৩,৩২০ কোটি (৩৩.২০ বিলিয়ন) ডলার। ইপিবির কর্মকর্তারা বলেন, এতদিন হাতেগোনা কয়েকটি দেশ ও পণ্যের মধ্যেই সীমাবদ্ধ ছিল আমাদের রপ্তানি বাজার।
কিন্তু এখন আর সে অবস্থা নেই। নতুন নতুন বাজারে আমাদের পণ্য যাচ্ছে। রপ্তানি তালিকায় যোগ হচ্ছে নতুন পণ্য। যার ফলে প্রধান কয়েকটি পণ্যের রপ্তানি কমার পরও অর্থবছরের প্রথমার্ধে মোট আয় বেড়েছে। ইপিবির তথ্যে দেখা যায়, দেশের রপ্তানি আয়ের বেশির ভাগটা আসে এমন কয়েকটি পণ্যের বিক্রি অর্থবছরের প্রথম ছয় মাসে কমেছে। এর মধ্যে উভেন পোশাকের রপ্তানি কমেছে ০.৩৫%; হিমায়িত খাদ্যের ৬%, চামড়া ১২%; কাঁচা পাট ৪.৩৯% ও টেরিটাওয়েলের রপ্তানি আয় কমেছে প্রায় ৪৭%।
অন্যদিকে ফলমূল, শুকনো খাবার, মসলা, প্লাস্টিক, জাহাজ নির্মাণ, উল ও উলের তৈরি পণ্যসহ অপ্রচলিত কিছু খাতে আয় বেড়েছে উল্লেখযোগ্য হারে। এর মধ্যে গত ছয় মাসে ফলমূল রপ্তানি থেকে আয় বেড়েছে ১৭৭%; মসলায় ৩৬%; শুকনো খাবারে ৭০%।
এই সময়ে প্লাস্টিক ও মেলামাইন পণ্যের রপ্তানি আয় বেড়েছে ৪০.৩৫%; রাবার ১২%; হস্তশিল্প ২১%; উল ও উলের তৈরি পেণ্যে ৯৪৩%,পাটের তৈরি বস্তা ও থলের ক্ষেত্রে ৩৪%। বছর দুয়েক আগে রপ্তানির তালিকায় যোগ হওয়া জাহাজ শিল্পে আয় বেড়েছে অভাবনীয় হারে। ২০১৪-১৫ অর্থবছরের জুলাই-ডিসেম্বর সময়ে জাহাজ রপ্তানি থেকে ৩৪ লাখ ১০ হাজার (৩.৪১ মিলিয়ন) ডলার আয় হয়েছে, গত অর্থবছরের একই সময়ে যার পরিমাণ ছিল ৬ হাজার (০.০৬ মিলিয়ন) ডলার। এই হিসাবে জাহাজ রপ্তানি থেকে আয় বেড়েছে ৫৫৮৩.৩৩%।
এ ছাড়া বাংলাদেশের জন্য অপ্রচলিত রপ্তানি পণ্য বাইসাইকেল থেকে এই ছয় মাসে আয় বেড়েছে ৩২%, গলফ সফটে ৩৫%। ইলেকট্রনিক পণ্যের রপ্তানি আয় বেড়েছে ১১৪%। পণ্যের বহুমুখীকরণে সাফল্যের পাশাপাশি অস্ট্রেলিয়া, জাপান, তুরস্ক, রাশিয়া, চীন, দক্ষিণ আফ্রিকাসহ কয়েকটি নতুন বাজারে নিট পোশাকের রপ্তানি বাড়ায় রপ্তানি খাতে ইতিবাচক প্রভাব পড়েছে বলে জানিয়েছেন মালিকরা। তারা জানান,অনেক দিন ধরেই রপ্তানি বাজার ও পণ্য বহুমুখীকরণের চেষ্টা করা হচ্ছিল। সরকারের পক্ষ থেকে কিছু প্রণোদনাও দেয়া হচ্ছে। যার ফল এখন পাওয়া যাচ্ছে।
অর্থবছরের প্রথম ৬ মাসে রপ্তানি খাতে যে আয় হয়েছে, তার প্রায় ৮১ শতাংশই এসেছে তৈরী পোশাক খাত (নিট ও উভেন) থেকে। এর মধ্যে নিট পোশাক রপ্তানি থেকে আয়ের পরিমাণই সবচেয়ে বেশি, ৬০৬ কোটি ১৬ লাখ ডলার। এই পরিমাণ গত বছরের একই সময়ের চেয়ে প্রায় ২% বেশি। তবে উভেন পোশাকে আয় হয়েছে ৫৯৬ কোটি ২৭ লাখ ডলার, যা গত বছরের জুলাই-ডিসেম্বরের চেয়ে ০.৩৫% কম। ২০১৩-১৪ অর্থবছরে রপ্তানি আয় বেড়েছিল ১১.৬৫%।
এর মধ্যে নিট পোশাক খাতে রপ্তানি বেড়েছিল ১৫%, উভেনে প্রবৃদ্ধি হয়েছিল ১২%। তাজরীন ও রানা প্লাজা দুর্ঘটনার রেশ এবং রাজনৈতিক সংঘাতের মধ্যেও ২০১৩-১৪ অর্থবছরে ৩০.১৯ বিলিয়ন ডলারের পণ্য রপ্তানি হয়, যা ছিল আগের বছরের চেয়ে প্রায় ১২% বেশি। ২০১৩ সালজুড়ে রাজনৈতিক সংঘাতের পর ২০১৪ সাল শান্ত গেলেও ২০১৫ সাল শুরু হয়েছে সংঘাত ও অবরোধের মধ্য দিয়ে।
সংশ্লিষ্টরা বলেন, নতুন বছরের শুরুতেই যে অস্থিতিশীল অবস্থা শুরু হয়েছে, তা অব্যাহত থাকলে শুধু রপ্তানি নয়, অর্থনীতির অন্য সূচকেও নেতিবাচক প্রভাব পড়বে। তবে পরিস্থিতি স্থিতিশীল থাকলে অর্থবছরের বাকি সময়ে নতুন বাজারের পাশপাশি পুরনো বাজারেও রপ্তানি বাড়বে বলে তিনি আশা করছেন। সবকিছু নির্ভর করছে রাজনৈতিক পরিবেশের ওপর। সহায়ক পরিবেশ থাকলে এবার ১০ শতাংশ প্রবৃদ্ধি হবে বলে বলে আশা করছেন তারা।