নিউজ ডেস্ক: বিএনপির চলমান আন্দোলন ঠেকাতে ও নিয়ন্ত্রণে রাখতে এই মুহুর্তে বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়াকে গ্রেপ্তার করলে আন্দোলনের গতি বাড়ার আশঙ্কা করছে সরকার। জনগণও মাঠে নেমে যেতে পারে। সেটা হলে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করা কঠিন হবে।
এই আশঙ্কার কারণেই সরকার তাকে গ্রেপ্তারের বিষয়ে দ্রুত চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিতে চাইছে না। তবে তাকে গুলশান কার্যালয় থেকে বের করতে আনতে চাইছে। সেই জন্য বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেয়া হয়েছিল। কিন্তু সুশীল সমাজসহ সর্বস্তরের জনগণের সমালোচনার মুখে শনিবার রাতে পুনরায় বিদ্যুৎ সংযোগ দেয়া হয় গুলশান কার্যালয়ে।
সরকারের নীতি নির্ধারক একজন মন্ত্রী বলেন, এই মুহুর্তে বিএনপি চেয়ারপারসনকে গ্রেপ্তার করার চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেয়া হয়নি। অনেক দিন ধরেই তার গ্রেপ্তারের দাবি করছিলেন সংসদ সদস্য থেকে শুরু করে অনেকেই। সেই হিসাবে চিন্তাভাবনাও ছিল। কিন্তু এখন সেটা করা হলে বিএনপি এর সুবিধা নিতে চাইবে। সেই সঙ্গে বিএনপি আরাফাত রহমান কোকোর মৃত্যুতে জানাজায় যে পরিমাণ লোক সমাগম হয়েছে তাকে একটা নীরব সমর্থনও বলেও ভাবছে জনগণ। কারণ সরকার বিবেচনা করছে কোকো কোন রাজনীতিবিদ ছিলেন না। তিনি কোন গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিও নন। এরপরও তার জানাজায় বিপুল সংখ্যক মানুষ শরিক হয়েছে। সেটা বিএনপির প্রতি মানুষের সমর্থনের কারণেই হয়েছে। সরকার এই পরিস্থতিতে কৌশলে এগুতে চাইছে।
সরকারের সংশ্লিষ্ট মন্ত্রী বলেন, বিএনপি চেয়ারপারসনকে গ্রেপ্তার করা যায় যে কোন সময়ে। তার বিরুদ্ধে একাধিক মামলা হয়েছে। তিনি হুকুমের আসামি। তাকে গ্রেপ্তার করা প্রয়োজন উল্লেখ্য করে বলেন, যেভাবে তারা আন্দোলনের নামে মানুষ পুড়িয়ে মারছেন এইভাবে আর সহ্য করা যায় না। তারপরও তার ছেলের মৃত্যুর বিষয়টিও বিবেচনা করা হচ্ছে। এখন তাকে গ্রেপ্তার করা হলে বলা হবে সরকার তাকে নিয়ে এমন করছে যে পুত্র শোকও পালন করতে দিচ্ছেন না। অথচ তিনি যে পুত্র শোকের মধ্যে সরকার পতনের আন্দোলন করছেন সেটাকে সমস্যা হিসাবে দেখবে না।
বিএনপি চেয়ারপারসনের গ্রেপ্তারের ব্যাপারে তিনি বলেন, এই ব্যাপারে আদালতের নির্দেশনাও প্রয়োজন। আদালত কি আদেশ দিবে সেটা আমরা দেখবো। আদালতের নির্দেশ অনুযায়ী ব্যবস্থা নিবো।
এদিকে সংশ্লিষ্ট একটি সূত্র জানায়, সরকার চাইছে খালেদা জিয়াকে গুলশান অফিস থেকে বের করে আনতে। তিনি অফিসে বাস করে সেখান থেকে আন্দোলন করছেন প্রায় একমাস ধরে। সরকার সেটা এখন আর মানতে পারছে না। সরকারের লক্ষ্য তাকে ওই ধরনের সুযোগ আর না দেওয়া। আন্দোলনের পথ থেকে সরিয়ে নেওয়ার জন্য তাকে তারা বাসায়ও ফেরত পাঠাতে চাইছে। এই অবস্থায় সরকার একে এক করে ব্যবস্থা নিচ্ছে।
সরকারের মন্ত্রীদের মধ্যে একটি অংশ এই সব কাজ সমর্থন করলেও একাংশ মনে করেন এটা করা ঠিক হয়নি। তাদের মত এই ভাবে বিদ্যুৎ, গ্যাস, পানি সংযোগ বন্ধ করে আন্দোলন দমন করা যাবে না। সরকার কঠোর অবস্থানে রয়েছে। তাই বলে এটা সাধারণ মানুষ ভালভাবে নিবে না। এটা নিয়েও রাজনীতিকরণ করবে।
স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেন, তিনি যেসব কাজ করছেন তা বেআইনী। আন্দোলনের নামে মানুষ পুড়িয়ে মাড়ছেন। পুরো দেশটা অচল করে দেওয়ার চেষ্টা করছেন। সরকার পতনের ষড়যন্ত্র করছেন। এরপরও সরকার এখনও তাকে কিছুই করেনি। সব সহ্য করে নিয়েছে। কিন্তু এই ভাবে এই সব চলতে দেওয়া যায় না। তাকে আইনের আওতায় আনা হবে।
তিনি গ্রেপ্তারের ব্যাপারে বলেন, তাকে কবে গ্রেপ্তার করা হবে এই ব্যাপারে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়নি। আরো অপেক্ষা করতে হবে। আমরা তাকে সময় দিচ্ছি আশা করি তিনি তার ভুল বুঝতে পেরে সেখান থেকে সরে আসবেন। না আসলে আমরা আরো কঠোর হবে। তিনি এতটাই অন্ধ হয়ে গেছেন যে পরীক্ষার্থীদের বিষয়টিও বিবেচনা করছেন না। পরীক্ষার্থীদের ভবিষ্যতের চাইতে তার সরকারে যাওয়া এখন বড় বিষয়।
এদিকে বিএনপি চেয়ারপারসনের একজন উপদেষ্টা বলেন, সরকার ম্যাডামকে গ্রেপ্তার করতে চায়। তবে সরকারের সেই সাহস নেই। মিথ্যে মামলা দেওয়া হয়েছে। এই সব রাজনীতির মামলা সরকার বিশ্বাস করছে না। সরকার মনে করছে তাকে এই সময়ে আটক করা হলে আন্দোলন আরো বেড়ে যাবে। যেটা সরকার সামাল দিতে পারবে না। সরকারকে পিছু হটতে হতে পারে। এখন সাধারণ মানুষ ভয়ে মাঠে নামছে না। তকে নিয়ে গেলে তখন মানুষ মাঠে নামবে। সেই জনশ্রুত সরকার সামলাতে পারবে না বলে গ্রেপ্তার করছে না।