আন্তর্জাতিক নিউজ ডেস্ক: সম্প্রতি যুক্তরাজ্যের তিন মুসলিম কিশোরী গোপনে সিরিয়ার উদ্দেশে রওনা হয়েছে। তারা ইসলামপন্থী জঙ্গি সংগঠন ইসলামিক স্টেটে (আইএস) যোগ দিতে দেশ ছেড়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। এ ঘটনায় শুধু যুক্তরাজ্য নয়, পশ্চিমা বিশ্ব খানিকটা নড়েচড়ে বসেছে। এর আগেও ইউরোপ থেকে আইএসে মেয়েদের যোগ দেওয়ার ঘটনা ঘটেছে। সংবাদমাধ্যমের তথ্যমতে, সারা পৃথিবী থেকে এ পর্যন্ত মোট ৫৫০ জন নারী আইএসে যোগ দিয়েছে।
প্রশ্ন উঠেছে, নারী, বিশেষ করে অল্পবয়সী মুসলিম মেয়েদের আইএস কেন টানছে? কীসের মোহে তারা আইএসে যোগ দিচ্ছে?
সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমগুলো আইএস কর্মী সংগ্রহের কাজে অত্যন্ত সক্রিয়। মেয়েদের প্রলুব্ধ করতে জোরা ফাউন্ডেশন নামে তাদের একটি প্ল্যাটফর্ম রয়েছে। এর মাধ্যমে নারীদের বিভিন্ন টিপস, ভ্রমণবিষয়ক পরামর্শ, এমনকি রান্না রেসিপি দিয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হয়। কোনো কোনো মেয়ে ইন্টারনেটে আইএসের বর্বরতার চিত্র দেখে ‘রোমাঞ্চ’ অনুভব করে। আবার ১৯ বছর বয়সী মার্কিন কন্যা শ্যানন কনলি ইন্টারনেটে এক পুরুষ আইএস সদস্যের প্রেমে পড়ে তাঁকে বিয়ে করতে সিরিয়ায় পাড়ি দিতে চেয়েছিলেন। কিন্তু আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর হাতে ধরা পড়ে যান। তাঁকে চার বছরের কারাদণ্ড দিয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের একটি আদালত।
যুক্তরাষ্ট্রের ডিউক বিশ্ববিদ্যালয়ের ইন্টারন্যাশনাল হিউম্যান রাইটস ক্লিনিকের পরিচালক জেন হুকারবাই বলেন, মেয়েরা নানা কারণে আইএসে যোগ দিচ্ছেন। এর মধ্যে রয়েছে সামাজিক বিচ্ছিন্নতা বোধ ও অসমতার অনুভূতি ও দুঃসাহসিক কিছু করার উচ্চাকাঙ্ক্ষা। কিছু ক্ষেত্রে প্রেম-সংক্রান্ত কারণে কোনো কোনো মেয়ে আইএসে যোগ দেন। তবে বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই নতুন ধরনের রাষ্ট্র গঠনের আহ্বান ও সেখানে নিজেদের ধর্মচর্চার সুযোগ তৈরি—আইএসের এমন ডাকে সাড়া দিয়ে এসব নারী আইএসে যোগ দিচ্ছেন বলে জেন হুকারবাই মন্তব্য করেন।
জেন বলেন, আইএসে যোগ দেওয়া নারীরা অল্পবয়সী মেয়েদের কর্মী হিসেবে সংগ্রাহকের কাজে যুক্ত হন। ফলে আইএসের প্রচারযন্ত্রের গুরুত্বপূর্ণ অংশ হিসেবে তাঁরা কাজ করেন।
লন্ডনের কিংস কলেজের ডিফেন্স স্টাডিজের প্রভাষক ক্যাথেরিন ব্রাউনের মতে, নারীরা আইএসে যোগ দিচ্ছেন, কারণ তাঁদের সামনে নতুন ধরনের ‘কাল্পনিক রাজনীতি’ উপস্থাপন করা হচ্ছে। তাঁদের জিহাদে অংশ নিয়ে নতুন ইসলামিক রাষ্ট্র গঠনের অংশীদার হতে আহ্বান জানানো হচ্ছে। তিনি বলেন, পশ্চিমা বিশ্ব মুসলমান ও নাগরিক হিসেবে এসব নারীর মধ্যে একাত্মতা, লক্ষ্য ও গুরুত্বপূর্ণ হওয়ার বোধ তৈরি করতে ব্যর্থ হয়েছে। এ কারণে ইন্টারনেটে সক্রিয় মুসলিম নারীরা জিহাদে আগ্রহী হয়ে উঠছেন।
দ্য ইউনিভার্সিটি অব ম্যাসাচুসেটস লোয়েলের সেন্টার ফর টেররিজম অ্যান্ড সিকিউরিটি স্টাডিজের অধ্যাপক মিয়া ব্লুম বলেন, আইএস এসব মেয়ের কাছে ‘আকাশকুসুম কল্পনা’ বিক্রি করছে। আইএসে যুক্ত হলে ক্ষমতায়ন ঘটবে, একটি অসাধারণ জীবন পাওয়া যাবে এবং জীবনে অর্থবহ কিছু করা সম্ভব হবে—কল্পনা ও অনুভূতির এমন মিশেল থেকে মেয়েরা আইএসে যোগ দেন।