শুক্রবার, ১৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৬:০৩

এপ্রিল এলেই কদর বাড়ে রানা প্লাজার শ্রমিকদের

এপ্রিল এলেই কদর বাড়ে রানা প্লাজার শ্রমিকদের

ঊর্মি মাহবুব: দিনটির কথা আজও ভুলতে পারেন না রানা প্লাজার ছয় তলার ইথার টেক্স-এর আয়রনম্যান শহিদুল। সাড়ে নয় ঘন্টার দুঃসহ স্মৃতি নিয়ে আজও বেঁচে আছেন। কেউ খোঁজ নেন না শহীদুলদের। কিন্তু এপ্রিল মাস এলেই ‘কদর’ বেড়ে যায় শহীদুলের মতো রানা প্লাজার আহত হাজারো শ্রমিকের। নিজের করুণ অবস্থা এভাবেই তুলে ধরলেন রানা প্লাজার হতভাগ্য এই শ্রমিক।

শহীদুল ২০১৩ সালের ২৪ এপ্রিল রানা প্লাজা ধসের সাড়ে ঘন্টা পর ধ্বংসস্তূপ থেকে উদ্ধার পান। কোমর ও ঘাড়ে গুরুতর আঘাত নিয়ে এখন আর ভারী কাজ করতে পারেন না শহীদুল। পেয়েছিলেন প্রাইমার্কের দেওয়া সহায়তার মাত্র ৯৫ হাজার টাকা। এ-টাকার বেশিরভাগই খরচ হয়ে গেছে চিকিৎসার কাজে। এরপর অর্থের অভাবে বন্ধ হয়ে গেছে চিকিৎসাও। এদিকে এক শহীদুলের ওপর নির্ভরশীল আরো পাঁচ জন মানুষের জীবন। দুই সন্তান, স্ত্রী, ছোট ভাই, বাবাকে নিয়ে শহীদুলের সংসার। প্রাইমার্কের দেয়া টাকার ২০ হাজার টাকা বাকি থাকতে চিকিৎসা বন্ধ করে মুদি দোকান দেন শহীদুল।

শহীদুল বাংলানিউজে বলেন, আফা (আপা) ছয় জন মানুষের ঘর। নিজেরা না খায়া থাকতে পারি কিন্তু বাচ্চাগুলার মুখের দিকে তাকাইলে আর বাঁচতে ইচ্ছা করে না। এই মুদি দোকানে মাসে দোকানের খরচ বাদ দিয়া থাকে হাজার তিনেক টাকা। কোনো রকমে দুই বেলার আধপেটা খাওন জোটে। শরীরের অবস্থা ভালো না। তাই আর কোনো কারখানায় কাজও নিতে পারি নাই। এই এপ্রিল মাস আইলেই সবাই আমাগো খোঁজ নেয়। অনেক কিছু দিবো বলে আশা দেয়।

কিন্তু মাস ফুরাইয়া গেলে সারাবছর কেউ খবরই নেয় না। আমরা যদি মালিকগো কাছে একটু সহায়তার জন্য বিজিএমইএ‘তে যাই তাহলে ‘ধুর্ ধুর্’ কইরা খেদায়া (তাড়িয়ে) দেয়। শহীদুলের মতো এমন অনেক শ্রমিকই প্রাইমার্কের যৎসামান্য টাকা ছাড়া আর কোনো সহায়তাই পাননি। অনেক নিহত শ্রমিকের পরিবার সাকুল্যে পেয়েছে মাত্র ১ লাখ ৩০ হাজার টাকা করে।

পটুয়াখালি জেলার বাউফল গ্রামের সাথী আক্তার হেলপার হিসেবে কাজ করতেন রানা প্লাজার ফ্যানটম অ্যাপারেলস-এ। মেয়ে ফারজানার বয়স যখন মাত্র দুই তখনই রানা প্লাজা ট্র্যাজেডিতে নিহত হন। মেয়েকে ডাক্তার বানানোর স্বপ্ন রানা প্লাজার নিচে চাপা পড়ে। সরকারের পক্ষ থেকে এক লাখ ৩০ হাজার টাকা তুলে দেওয়া হয় স্বামী খোকনের হাতে।

শহীদুল, সাথীদের সন্তানরা আজ হাঁটছে অনিশ্চিত ভবিষ্যতের পথে। বছরের ১২ মাসের ১১ মাস মুখ ফিরিয়ে থাকলেও কেবল এপ্রিল মাস এলেই এই হতভাগ্যদের সঙ্গে সবাই যোগাযোগ করে, খোঁজ নেবার ভাণ করে। ‘শহীদুল ও সাথীদের সংখ্যা নেহায়েত কম নয়?— মন্তব্য করেন টেক্সটাইল গার্মেন্টস ওয়ার্কার্স ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক তপন সাহা।

তপন সাহা বাংলানিউজকে বলেন, রানা প্লাজা ধসের যেসব শ্রমিক আহত হয়েছিলেন তাদের ক্ষতিপূরণ দেওয়া নিয়ে অনেক কথা হয়েছে আগে। এই বাবদ বেশ কয়েকটি ফান্ড তৈরি হয়েছে সরকারি বেসরকারি পর্যায়ে। কিন্তু সেসব ফান্ডে কি পরিমাণ অর্থ এসেছে সে সম্পর্কে আমরা এখনো ওয়াকিবহাল নই। তখনকার সময় বেশিরভাগ আহত শ্রমিক প্রাইমার্কের ৯৫ হাজার টাকা ছাড়া আর কোনো সহায়তা পাননি। বছরে ঘুরে এপ্রিল মাস এলেই রানা প্লাজার আহত-নিহত শ্রমিক ও ক্ষতিগ্রস্তদের নিয়ে আলোচনা হয়। এপ্রিল শেষ তো, আলোচনাও শেষ।

এসব বিষয়ে ভিন্নমত পোষণ করেন বাংলাদেশ পোশাক প্রস্তুত ও রফতানিকারক সমিতির(বিজিএমইএ) সহ-সভাপতি মোঃ শহীদুল্লাহ আজীম। মোঃ শহীদুল্লাহ আজীম বাংলানিউজকে বলেন, বিজিএমইএ রানা প্লাজার শ্রমিকদের প্রতি দায়িত্ব সঠিকভাবে পালন করছে। নিহত শ্রমিকদের ২৫ জন ছেলে সন্তানকে চট্টগ্রাম ও গাইবান্ধা অর্কা হোমস-এ রাখা হয়েছে। তাছাড়া ২০ জন মেয়ে সন্তানকে আঞ্জুমান এতিমখানায় রেখে বিজিএমইএ দেখাশোনা করছে। তাদের পেছনে প্রতি মাসে বিজিএমইএ ২ লাখ টাকা করে ব্যয় করছে। ২০১৪ সালে রানা প্লাজায় আহত এমন প্রায় ১৮০ জন শ্রমিকের চিকিৎসা করা হয়েছে। এতে খরচ হয়েছে এক লাখ ৩৩ হাজার ৪৯৩ টাকা। তাছাড়াও প্রতি মুহূর্তেই বিজিএমইএতে যারা আসছেন ক্ষতিপূরণের জন্য তাদের আমরা সহায়তা করছি। যারা বলছে আমরা সাহায্য করি না তারা সত্য বলছে না।

উল্লেখ্য, ২০১৩ সালের ২৪ এপ্রিল সাভারের রানা প্লাজা ধসে নিহত হন ১১৩৮ জন শ্রমিক। আহত হন আরো প্রায় দুই হাজার। অনেকেই এখনো নিখোঁজ রয়েছেন।




Comments are closed.



পুরানো সংবাদ সংগ্রহ

সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি রবি
 
১০১১১২১৩১৪১৫
১৬১৭১৮১৯২০২১২২
২৩২৪২৫২৬২৭২৮২৯
৩০৩১  
All rights reserved © shirshobindu.com 2012-2024