আন্তর্জাতিক নিউজ ডেস্ক: দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় নাৎসিবাহিনীর ধ্বংসযজ্ঞের ক্ষতিপূরণ বাবদ জার্মানির কাছ থেকে তিনশ বিলিয়ন ডলার পাওয়া উচিত বলে মনে করে গ্রিস সরকার। অবশ্য জার্মানি এর আগে দেওয়া ক্ষতিপূরণের কথা তুলে ধরে নতুন এই দাবি নাকচ করে দিয়েছে বলে সিএনএন মানির এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে।
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ শুরুর পর ১৯৪১ সালে গ্রিস দখল করে নেয় এডলফ হিটলারের নাৎসি বাহিনী। ১৯৪৫ সালে যুদ্ধের শেষ পর্যন্ত সেখানে হত্যা, ধ্বংস, লুটপাট চালানো হয়। এর ক্ষতিপূরণ হিসাবে জার্মানি ১৯৬০ সালে ১১৫ মিলিয়ন ডয়েস মার্ক ক্ষতিপূরণ দেয়। এছাড়া ক্ষতিগ্রস্ত গ্রিকদের সরাসরি ক্ষতিপূরণ দেওয়া হয়।
তবে আর্থিক মন্দার মধ্যে ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও আর্ন্তজাতিক মুদ্রা তহবিলের কাছ থেকে ২৬০ বিলিয়ন ডলার ঋণ নিয়ে দরকষাকষির সময় ২০১০ ও ২০১২ সালে নতুন করে ক্ষতিপূরণের প্রসঙ্গটি তোলে গ্রিস সরকার। কঠিন শর্তে ওই ঋণের বিরোধিতাকারী বামপন্থি সিরিজা পার্টি সম্প্রতি গ্রিসের ক্ষমতায় আসার পর ক্ষতিপূরণের বিষয়টি নতুন করে আলোচনায় আসে।
যুদ্ধের সময় জার্মান বাহিনীর তাণ্ডবে ক্ষতির পরিমাণ হিসাব করতে গত মাসে একটি কমিশন গঠন করে গ্রিসের প্রধানমন্ত্রী অ্যালেক্সিস সিপরাস বলেন, ১৯৬০ সালে দেওয়া টাকা দেওয়া হয়েছিল কেবল নাৎসি বাহিনীর হাতে ক্ষতির শিকার গ্রিক নাগরিকদের। কিন্তু ওই সময় গ্রিসের অর্থনীতির যে বিপুল ক্ষতি হয়েছে, তা এর মধ্যে আসেনি।
এছাড়া ১৯৪২ সালে অধিকৃত গ্রিস নাৎসি চাপে জার্মানিকে বিনা সুদে যে ঋণ দিতে বাধ্য হয়েছিল, তাও ক্ষতিপূরণের আওতায় আসেনি বলে মনে করিয়ে দিয়েছে দেশটির সরকার। গ্রিসের এ দাবি নাকচ করে জার্মানির অর্থমন্ত্রী ভুলফগ্যাং শয়েবলে মার্চে বলেন, ১৯৯০ সালে দুই জার্মানির একীভূত হওয়ার সময় আন্তর্জাতিক চুক্তির মাধ্যমে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সব ক্ষতিপূরণের হিসাব মিটিয়ে ফেলা হয়েছে। গ্রিস এখন নতুন করে কোনো ক্ষতিপূরণ চাইতে পারে না।
সিএনএন এর প্রতিবেদনে বলা হয়, অর্থনীতি নিয়ে বিপাকে থাকা গ্রিস সরকার এখনো আনুষ্ঠানিকভাবে জার্মানির কাছে ক্ষতিপূরণের বিষয়টি তোলেনি। তবে জনমত জরিপ বলছে, সরকার তেমন কোনো উদ্যোগ নিলে তা বিপুল জনসমর্থন পাবে।
গ্রিক প্রধানমন্ত্রী অবশ্য এরইমধ্যে তার পরিকল্পনাকে আরেক ধাপ এগিয়ে রেখেছেন। বার্লিন ক্ষতিপূরণ দিতে অস্বীকার করলে গ্রিসে জার্মানির সম্পদ বাজেয়াপ্ত করা যেতে পারে বলেও তিনি ইংগিত দিয়ে রেখেছেন। ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের সময় চালানো হত্যা ও ধ্বংসযজ্ঞের কারণে পাকিস্তানের কাছে ক্ষতিপূরণ চাওয়ার দাবি রয়েছে বাংলাদেশেও।
২০১০ সালে পররাষ্ট্রসচিব পর্যায়ের এক বৈঠকে পাকিস্তানের সামনে ক্ষতিপূরণসহ দুই দেশের অমীমাংসিত বিষয়গুলো তোলা হয়। আটকে পড়া পাকিস্তানিদের প্রত্যাবাসন, সেই সময়ের অখণ্ড পাকিস্তানের সম্পদের হিস্যা, সত্তরের ঘূর্ণিঝড়ে পূর্ব পাকিস্তানের (বর্তমান বাংলাদেশ) মানুষের জন্য আসা বিদেশি সাহায্যের অর্থ ফেরত দেওয়া এবং পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর গণহত্যার জন্য নিঃশর্ত ক্ষমা চাওয়ার প্রসঙ্গও ওই বৈঠকে তোলা হয় বলে গণমাধ্যমের খবর।
তবে গত বছর এক সংবাদ সম্মেলনে এ বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, একাত্তরে পরাজিত পাকিস্তানের কাছে চাওয়ার কিছু নেই বলে তিনি মনে করেন।