শীর্ষবিন্দু নিউজ ডেস্ক: সিটি নির্বাচনের প্রচারে নেমে বাধা পাওয়ার একদিন বাদে হামলার মুখে পড়েছেন খালেদা জিয়া। সোমবার বিকালে রাজধানীর কারওয়ান বাজারে লাঠিসোঁটা নিয়ে হামলার পাশাপাশি ব্যাপক ইট ছোড়া হয় বিএনপি চেয়ারপারসনের গাড়িবহরে।
বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার ওপর আওয়ামী লীগের হামলার প্রতিবাদে বুধবার সারাদেশে হরতাল ডেকেছে বিএনপি। তবে ঢাকা ও চট্টগ্রাম সিটি হরতালের আওতামুক্ত থাকবে। সোমবার রাতে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার মওদুদ আহমেদ দলের পল্টনের কেন্দ্রীয় কার্যালয় থেকে এই কর্মসূচি ঘোষণা করেন।
হামলায় খালেদা জিয়া অক্ষত থাকলেও তার গাড়ির কাচ ভেঙেছে। আহত হয়েছেন তার ব্যক্তিগত নিরাপত্তা রক্ষীরাসহ বেশ কয়েকজন সাংবাদিক। এই হামলার প্রতিবাদ জানিয়ে সন্ধ্যায় নয়া পল্টনে দলীয় কার্যালয়ে জরুরি সংবাদ সম্মেলন ডেকে বুধবার ঢাকা ও চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন এলাকা ছাড়া সারাদেশে হরতাল ডেকেছে বিএনপি।
আগের দুই দিনের মতো সোমবার বিকালেও নির্বাচনী প্রচারণায় বের হন খালেদা। তবে এদিন পুলিশ ছিল না তার সঙ্গে। এদিন সকালে তার নিরাপত্তায় থাকা পুলিশ প্রত্যাহার করা হয়। গাড়িবহর নিয়ে কারওয়ান বাজারে গিয়ে কারুপল্লী ভবনের সামনে ঢাকা উত্তরে দল সমর্থিত মেয়র প্রার্থী তাবিথ আউয়ালের পক্ষে পথসভার সময় হামলার মুখে পড়েন বিএনপি চেয়ারপারসন।
বিকাল ৬টার দিকে তিনি গাড়ির দরজা খুলে হ্যান্ড মাইকে বক্তব্য রাখছিলেন। তার বক্তব্যের মধ্যেই কাঁচা বাজারের দিক থেকে ‘ছি ছি খালেদা’ স্লোগান আসতে থাকে। এক পর্যায়ে আশপাশের বিভিন্ন ভবনের উপর থেকে ইট ছোড়া শুরু হয় খালেদার গাড়ি লক্ষ্য করে। এ সময় তিনি গাড়িতে খালেদা ঢুকে পড়লেও বৃষ্টির মতো ইট পড়তে থাকে। এরপর বহরের সব গাড়ি ঘুরে এফডিসির দিকে এগোনোর সময় এক দল লোক লাঠিসোঁটা নিয়ে হামলা চালায়। তাদের হামলায় বহরের প্রায় সব কটি গাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়।
ইটের আঘাতে খালেদার গাড়ির কাচ ভেঙে যায়। তার ব্যক্তিগত নিরাপত্তা বাহিনী ‘চেয়ারপারসনস সিকিউরিটি ফোর্সের (সিএসএফ)’ কয়েকজন সদস্যের মাথা থেকে রক্ত ঝরতে দেখা যায়। কয়েকজন সাংবাদিকও আহত হন। এই হামলাকারীদের শনাক্ত করা যায়নি বলে পুলিশ জানিয়েছে।
ডিএমপির তেজগাঁও বিভাগের অতিরিক্ত উপকমিশনার ওয়াহিদুল ইসলাম বলেন, অবরোধ-হরতালের জন্য ব্যবসায়ীদের ক্ষোভ ছিল। “তারা (কারওয়ান বাজারের ব্যবসায়ী) বিএনপি চেয়ারপারসনকে কালো পতাকা দেখানোর কর্মসূচি নিয়েছিল। এর মধ্যেই এই ঘটনা ঘটে। তবে ওই এলাকায় কর্তব্যরত এক পুলিশ কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, সরকার সমর্থক ছাত্রলীগ ও যুবলীগের কর্মীদের সেখানে তৎপর দেখা গেছে।
কারওয়ান বাজারে হামলার পর শাহজাহানপুরে গিয়ে ঢাকা দক্ষিণে বিএনপি সমর্থিত মেয়র প্রার্থী মির্জা আব্বাসের পক্ষে জনসংযোগ করছেন খালেদা। সরকারবিরোধী আন্দোলন শিথিল করে সিটি নির্বাচনে খালেদা জিয়া নামার পর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জনগণের প্রতি আহ্বান রেখেছিলেন, বিএনপি চেয়ারপারসন যেখানেই যাবেন, সেখানেই যেন তাকে নাশকতার জন্য প্রশ্ন করা হয়।
রোববার খালেদা রাজধানীর উত্তরায় গণসংযোগে গেলে তাকে কালো পতাকা দেখানো হয়। সেখানে লাঠি হাতে হামলার চেষ্টা হলেও তা ঠেকায় পুলিশ। উত্তরায় বাধার পর খালেদা জিয়া বলেছিলেন, কোনো বাধায় কাজ হবে না। গণজোয়ারে সব বাধা উড়ে যাবে। প্রচারে ব্যাপক সাড়া পাচ্ছেন দাবি করে তিনি বলেন, আগামী ২৮ এপ্রিল তিন সিটিতেই ভোট বিপ্লব ঘটবে।
মওদুদ আহমেদ বলেন, সিটি নির্বাচনে হেরে যাবে বুঝতে পেরেই খালেদা জিয়ার গাড়িবহরে পরিকল্পিতভাবে সশস্ত্র হামলা চালিয়েছে আওয়ামী লীগ। মওদুদ বলেন, নির্বাচনী প্রচারণার সময় কাওরান বাজারে বিএনপি চেয়ারপার্সনকে পরিকল্পিতভাবে হত্যার উদ্দেশ্যে তার গাড়ি বহরে ভাঙচুর ও সশস্ত্র হামলার তীব্র নিন্দা জানাই। এমনকি তারা অ্যাম্বুলেন্স ভাঙচুর করেছে। এটি সরকারের ফ্যাসিবাদী ও অগণতান্ত্রিক মানসিকতার বহিঃপ্রকাশ। আওয়ামী লীগের সন্ত্রাসীরা পুলিশের সহযোগিতায় বেগম খালেদা জিয়ার নির্বাচনী প্রচার অভিযানের প্রতিটি স্থানে বাধা দেয়া সত্ত্বেও তিনি তার প্রচার অভিযান অব্যাহত রেখেছেন।
তিনি বলেন, বিএনপি চেয়ারপার্সনের বাসার সামনে থেকে এবং তার গাড়ি বহর থেকে পুলিশি নিরাপত্তা প্রত্যাহার করা থেকেই বুঝা যায় চেয়ারপার্সনের ওপর হামলা সরকারের পূর্ব পরিকল্পনার অংশ। তিনি বলেন, আসন্ন সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে পরাজয় নিশ্চিত জেনেই সরকার এ ধরণের ফ্যাসিবাদী ও সন্ত্রাসী তান্ডবের আশ্রয় গ্রহণ করেছে। এটি সরকারের দুর্বলতারই প্রতিফলন।
মওদুদ অভিযোগ করেন, প্রধানমন্ত্রী ও তার মন্ত্রীরা অতি সম্প্রতি বিএনপি চেয়ারপার্সনকে নির্বাচনী প্রচারণায় বেরোলে প্রতিহত করার যে বক্তব্য দিয়েছেন সেটাই তাদের সশস্ত্র গুন্ডাদের আজকের সন্ত্রাসী হামলায় উস্কানি দিয়েছে। পুলিশের আইজিপিও নির্বাচন কমিশনে অনুষ্ঠিত আইনশৃঙ্খলা সংক্রান্ত সভায় তার বক্তব্যে বিএনপি চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়াকে প্রতিহত করতে প্রয়োজনে আইন প্রণয়নের জন্য ওপেন বক্তব্য দিয়েছে। এসবই উস্কানি দিয়েছে আওয়ামী গুন্ডা বাহিনীকে বেগম খালেদা জিয়ার ওপর হামলা করার জন্য।
তিনি বলেন, আগামীকাল মঙ্গলবার ঢাকা ও চট্টগ্রাম ব্যতীত সারাদেশে ২০ দলীয় জোটের উদ্যোগে প্রতিবাদ ও বিক্ষোভ মিছিল এবং সারাদেশে আগামী ২২ এপ্রিল বুধবার সকাল-সন্ধ্যা হরতাল পালিত হবে। মওদুদ বলেন, আমরা সরকারকে স্পষ্টভাবে বলে দিতে চাই এ ধরণের সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড অব্যাহত রেখে আমাদের ভিন্ন চিন্তা করতে বাধ্য করবেন না।