মোহাম্মদ মহিউদ্দিন: সিলেট-ঢাকা ও চট্টগ্রাম রুটের হরষপুর রেলওয়ে স্টেশনে জনবল সংকটসহ দীর্ঘ দিন যাবত। এই স্টেশনটি নানা অনিয়মের অভিযোগও উঠেছে। যার ফলে যাত্রী সেবা বিঘ্নিত হওয়ার পাশাপাশি সরকার বঞ্চিত হচ্ছে লক্ষ লক্ষ টাকার রাজস্ব আয় থেকে।
জানা যায়, এ অঞ্চলে রেলওয়ের যোগাযোগের মূল কেন্দ্রস্থল হচ্ছে হরষপুর রেলওয়ে স্টেশন। ষাটের দশকের শুরুতে নির্মিত এই স্টেশনটি ঢাকা-সিলেট ও বন্দরনগরী চট্টগ্রামের সাথে প্রতিদিন রেল যোগাযোগের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ন ভূমিকা রাখছে। হরষপুর রেলস্টেশনের লোকবল সংকট নোংরা-অস্বাস্থ্যকর পরিবেশ, অবৈধ দোকান-পাট স্থাপনা নির্মাণ সহ বিভিন্ন দুর্নীতি কারণে এ স্টেশনটি তার ঐতিহ্য হারাতে বসেছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানা যায়, গত কয়েক বছর আগে এ স্টেশনে কর্মরত থাকা অবস্থায় স্টেশন মাস্টার (গ্রেড-৩) শাহাদাত হোসেন মৃত্যুবরণ করলে এখনও এ পদে কোন কর্মকর্তা নিয়োগ দেয়া হয়নি। এছাড়াও সহকারী স্টেশন মাস্টার (এসএমগ্রেড-৪) মোঃ আবুল খায়ের চৌধুরীকে মনতলা স্টেশনে বদলী করা হয়। একমাত্র কর্মকর্তা হিসেবে সহকারী স্টেশন মাস্টার (এসএম গ্রেড-৪) পরশ আলী সিকদার প্রতিদিন সকাল ৬টা থেকে ২টা পর্যন্ত দায়িত্ব পালন করতে হয়। এর ফলে বাকী ১৮ ঘন্টা স্টেশন মাস্টারের কক্ষ তালাবদ্ধ থাকে। রাতের বেলা স্টেশনে কোন কর্মকর্তা দায়িত্বে না থাকার কারণে প্রায়ই হরষপুর রেলওয়ে স্টেশনের অনেক মূল্যবান সম্পদ চুরি হচ্ছে।
এছাড়াও দায়িত্বপ্রাপ্ত কোন কর্মকর্তা না থাকার কারণে ঝুঁকিপূর্নভাবে ট্রেন চলাচল করায় যে কোন সময় বড় ধরনের দুর্ঘটনার আশংকা করছেন স্থানীয়রা। এমনকি হরষপুর স্টেশন মাস্টার জরুরী কোন কাজে বা অসুস্থার ছুটি নিতে হলে মনতলা রেলস্টেশন থেকে মোঃ আবুল খায়ের চৌধুরীকে হরষপুর ষ্টেশন ডিউটি করতে দেখা যায় এই পরিস্থিতি থেকে একজন কর্মকর্তা দিয়ে হরষপুর রেলস্টেশন পরিচালনা করানো হয়। তাই বর্তমান স্টেশন মাস্টার ইচ্ছাকৃত ভাবে কোন ছুটি কাটাতে পারে না বলে তাহার অভিযোগ।
ঢাকা অভিমুখী জয়ন্তিকা এক্সপ্রেস’র যাত্রীরা অভিযোগ করেন, এ স্টেশনে ট্রেন সিডিউল পরিবর্তন হলেই দায়িত্বরত কোন কর্মকর্তাই থাকে না এই কারণে যাত্রীরা ভোগান্তির শিকার হন। দুপুর ২টার পরে হরষপুর রেলস্টেশন মাস্টার রুমটি তালা ঝুঁলেতে দেখা যায়। কারণ ষ্টেশন মাস্টারের ডিউটি শেষ হলেই তিনি সিগ্যানেল রুমটি তালা ঝুলিয়ে দেন। হরষপুর রেলস্টেশনে অতি জরুরীভাবে জনবল বাড়ানো প্রয়োজন। দুপুরের পরে স্টেশনের দায়িত্বে কোন লোক না থাকায় এ সময় স্টেশনে ট্রেন আসলেও যাত্রীরা টিকেটসহ কাঙ্খিত সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন এবং যাত্রীরাও আতঙ্কিত থাকেন কখন যে দুর্ঘটনা স্বীকার হন।
চট্টগ্রাম অভিমুখী পাহাড়িকা এক্সপ্রেস’র যাত্রীরা জানান, আমাদের ট্রেনের সময় বেলা ২টা ২০ মিনিটে। ট্রেনের জন্য অপেক্ষা করছি কিন্তু স্টেশন মাস্টারের কক্ষে তালা ঝুলার কারনে আমরা টিকেট সংগ্রহ করতে পারছিনা তাহার ডিউটি শেষ হয়ে গেছে তাই তিনি বাসায় চলে গেছেন। এখন আমাদের যাত্রা অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে। কারণ স্টেশন মাস্টার ট্রেন না আসা পর্যন্ত কোন টিকেট অগ্রিম বিক্রি করেনা। কারণ সরকারের নিয়ম-নির্ধারনের কারণে ট্রেন না আসা পর্যন্ত টিকেট বিক্রয় করা সম্ভব নয়।
একই অভিযোগ করেছেন আরেক যাত্রী। তিনি জানান, সিলেট অভিমুখী জয়ন্তিকা ও পাহাড়িকা এক্সপ্রেস ২ ঘন্টা ব্যবধানে আসে কিন্তু ২টা ০৫ মিনিট পর্যন্ত অপেক্ষা করেও পাহাড়িকা এক্সপ্রেস স্টেশনে পৌঁছেনি। পাহাড়িকা আসা অনিশ্চিত থাকায় তিনি বাধ্য হয়ে ৩টা ২০ মিনিটে জয়ন্তিকায় যাবেন। পাহাড়িকা টিকেট ক্রয়ের কারণে তার ১শ’৬০ টাকা লোকসান হবে বলেও তিনি জানান। কারণ জয়ন্তিকা যখন আসে তখনও স্টেশন মাস্টার রুম তালাবদ্ধ থাকে। এ কারণে টিকেটের মূল্য ফেরত না পেয়ে ভিন্ন ব্যবস্থায় গন্তব্যে যেতে হবে।
এদিকে দায়িত্বে থাকা কর্মকর্তা পরশ আলী সিকদার ছুটিতে থাকার কারণে বদলী হওয়ার পরও আবুল খায়ের চৌধুরী এ স্টেশনে অবস্থান করে একই সময়ে সহকর্মীর দায়িত্ব পালন করছেন। তিনি জানান, একা একজন লোকের পক্ষে ৮ ঘন্টার বেশী দায়িত্ব পালন করা সম্ভব নয়। তারপরও মাঝে-মধ্যে বিকালের শিফটে ডিউটি করতে হয়। তাই জনবলের অভাবে যাত্রীরা সমস্যা হচ্ছে বলে তিনি স্বীকার করেন।
বাংলাদেশ রেলওয়ে উর্ধতন কর্মকর্তাদের সাথে যোগাযোগ করেও জনবল বাড়ানো সম্ভব হচ্ছে না। তাই সরকার যখন জনবল নিয়োগ দেবেন তখনই তাদের সস্তির নিশ্বাস ফেলবেন বলে আশাবাদী। তাই পরশ আলী সিকদার রেলওয়ের উর্ধতন কর্মকর্তার প্রতি একটু নজর দেওয়ার আহ্বান জানান।