শীর্ষবিন্দু নিউজ ডেস্ক: কর্মসংস্থান না হওয়ার কারণেই মানুষ ঝুঁকি নিয়ে দেশান্তরী হচ্ছে। বিনিয়োগে খরার মধ্যে ৭ শতাংশ প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা নিয়ে প্রশ্ন তোলার পাশাপাশি বিরোধী দলীয় নেতা রওশন এরশাদ বলেছেন, আগামী অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটের কিছু দিক হতাশাজনক। সব দিক থেকে এই বাজেট জনকল্যাণে ভূমিকা রাখতে পারবে বলে তিনি মনে করেন না। অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত জাতীয় সংসদে বাজেট প্রস্তাব দেওয়ার চারদিন পর মঙ্গলবার বিরোধী দল জাতীয় পার্টির আনুষ্ঠানিক প্রতিক্রিয়া নিয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে আসেন রওশন।
অন্যদের মধ্যে বিরোধী দলীয় প্রধান হুইপ তাজুল ইসলাম চৌধুরী, কাজী ফিরোজ রশীদ, রুহুল আমিন হাওলদার, ফখরুল ইমাম ও সেলিম উদ্দিন এমপি সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন। এ সময় তিনি বলেন, এই বাজেটের কিছু কিছু দিক ভালো, কিছু কিছু দিক দেখে মানুষ হতাশ হয়েছে। সবদিক থেকে এই বাজেট জনকল্যাণে ভূমিকা রাখবে না বলে আমি মনে করছি। বিনিয়োগ না বাড়ার পেছনে বিনিয়োগ বোর্ডের আমলাতান্ত্রিক জটিলতার পাশাপাশি অবকাঠামোগত উন্নয়ন না হওয়াকে কারণ বলে মনে করেন বিরোধী দলীয় নেতা।
তিনি বলেন, প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা ৭ শতাংশ ধরা হয়েছে। এর জন্য দরকার বিনিয়োগ, বিদেশি বিনিয়োগ। বিদেশি বিনিয়োগ আছে কি? বিনিয়োগ না থাকলে কীভাবে প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হবে? দেশের যে পরিস্থিতি, তাতে বিনিয়োগ হচ্ছে না। ৭ শতাংশ কীভাবে হবে? রওশন বলছেন, প্রস্তাবিত বাজেটে কর্মসংস্থানের বিষয়ে স্পষ্ট করে কিছু বলা হয়নি। দেশের চার কোটি লোক দারিদ্র্য সীমার নিচে থাকলেও বাজেটে এ বিষয়ে কিছু নেই; কর্মসংস্থানেরও নির্দেশনা নেই।
কর্মসংস্থান না হলে মানুষতো সমুদ্র পার হওয়ার ঝুঁকি নিয়ে বিদেশে যাবেই। কর্মসংস্থান নেই বলেই ওমরা ভিসা নিয়ে দেশ ছেড়ে আর ফেরে না। অবৈধভাবে থাকছে। অর্থমন্ত্রী ২০১৫-১৬ অর্থবছরের যে বাজেট প্রস্তাব করেছেন, তাতে প্রায় তিন লাখ কোটি টাকা ব্যয়ের বিপরীতে আয় ধরা হয়েছে ২ লাখ ১৪ হাজার ২৪৩ কোটি টাকা। এই হিসেবে বাজেটে ঘাটতি থাকছে ৮৬ হাজার ৬৫৭ কোটি টাকা। বাজেটের দুই তৃতীয়াংশের বেশি অর্থমন্ত্রী আদায় করতে চান কর ও রাজস্ব থেকে।
জাতীয় সংসদের মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে জাতীয় পার্টির সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য রওশন বলেন, বাজেটে যে ঘাটতি রয়েছে। সেটা কীভাবে থেকে পূরণ হবে? এ নিয়ে কিছু বলা হয়নি। ঢাকা-চট্টগ্রাম ও ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক সম্প্রসারণের কাজ পাঁচ বছরেও শেষ না হওয়ার কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, এ কাজে যে খরচ হয়েছে তার কোনো হিসাবও বাজেটে নেই। বিনিয়োগ বোর্ডে ফাইল গেলে পড়ে থাকে, নড়ে না। এজন্য বিনিয়োগকারীরা হতাশ হয়ে চলে যায়। বিদ্যুৎ-গ্যাসের উন্নয়ন হয়নি। বিনিয়োগ কীভাবে আসবে?
মোবাইল ফোনের সেবায় ৫ শতাংশ শুল্ক আরোপের যৌক্তিকতা নিয়েও প্রশ্ন তোলেন বিরোধী দলীয় নেতা, যার দলের তিন নেতা সরকারের মন্ত্রিসভায় দায়িত্ব পালন করছেন। মোবাইলে কর ধরা হয়েছে। দেশের সাধারণ মানুষ মোবাইলে যোগাযোগ করে। করটা না ধরলে কী হতো?
সরকারি কর্মচারীদের নতুন বেতন স্কেল প্রসঙ্গে রওশন বলেন, বেতন বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে জিনিসপত্রের দাম বেড়ে যাবে। ভুক্তভোগী হবে জনগণ। এ বিষয়েও বাজেটে নির্দেশনা নেই। সরকার অনেক স্বপ্ন দেখায়, সব কি বাস্তবায়ন হয়, প্রশ্ন রাখেন বিএনপিবিহীন দশম সংসদের বিরোধীদলীয় নেতা রওশন।
তার মতে, প্রস্তাবিত বাজেটে শিক্ষা ও স্বাস্থ্য খাতে প্রয়োজনের তুলনায় বরাদ্দ কম। ২০১৪-১৫ অর্থবছরে বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির অনেক প্রকল্প বাস্তবায়ন না হওয়ায় প্রস্তাবিত বাজেটে সেই প্রকল্পগুলো ফিরে এসেছে। বাজেটের প্রতিক্রিয়া জানাতে বিলম্বের কারণ হিসাবে ভারতের অর্থমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর ঢাকা সফরের কথা তুলে ধরে রওশন।
বাজেট প্রতিক্রিয়া দিতে দেরি হয়ে গেল। বিভিন্ন কারণ ছিল। ভারতের প্রধানমন্ত্রীর সফরের কারণে একটু দেরি হয়ে গেল। সংসদে বাজেটের ওপর সাধারণ আলোচনায় বাজেট নিয়ে মতামতগুলো তুলে ধরবেন কিনা জানতে চাইলে রওশন বলেন, আপনাদের (সাংবাদিক) সামনে যখন বলছি তখন ওখানেও (সংসদে) নিশ্চয়ই বলব। আমাদের আগের বিরোধীদলের সঙ্গে তুলনা করবেন না। আমরা গঠনমূলক রাজনীতি করতে চাই। সংসদ বর্জন করব না।