সৈয়দ শাহ সেলিম আহমেদ: জাসদের উত্থান-পতনঃঅস্থির সময়ের রাজনীতি নামক বই লিখে যিনি আলোড়ন তুলেছেন, সেই গবেষক, এক সময়ের জাসদ রাজনীতির অন্ধর মহলের প্রত্যক্ষভাবে দেখেছেন, সিরাজুল আলম খানের সান্নিধ্যে এসেছেন- সেই গবেষক, লেখক মহীউদ্দিন আহমেদ আজ লন্ডনের বেতার বাংলার প্রবাসীর ভাবনা অনুষ্ঠানে সাক্ষাতকার দিতে গিয়ে ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্টের বঙ্গবন্ধুর হত্যাকান্ডের সাথে বিদেশী কোন শক্তি জড়িত ছিলো কিনা- এমন প্রশ্নের জবাবে একজন গবেষক হিসেবে তিনি বলেন, ঠিক বিদেশী শক্তি জড়িত ছিলো- এমনভাবে না দেখে আমি বরং গবেষক হিসেবে এটাকে এভাবেই দেখি, আওয়ামীলীগের তখনকার সময়ের ২/১ জন বাদ দিলে সকল নেতা কর্মীরা সকলেই দলের অভ্যন্তর থেকে শাসন ব্যবস্থার পরিবর্তন চাচ্ছিলো।
তিনি আরো বলেন, খন্দকার মোশতাকের নেতৃত্বে এই পরিবর্তনকে আওয়ামীলীগের সকল নেতা কর্মী (হাতে গোণা ২/১ জন বাদ দিলে) যোগ দেয়ার জন্য লাইন ধরেছিলেন এবং তারা তাকে সমর্থন দিয়েছিলেন।আওয়ামীলীগের ভেতরের রাজনীতি স্পষ্ঠত দুটি ধারায় বিভক্ত হয়ে পড়েছিলো- তবে দুটি ধারাই পরিবর্তনের পক্ষে ছিলো। কিন্তু শেখ মুজিবুর রহমানের হত্যাকান্ড হয়ে যাবে- এটা হয়তো তারা বুঝতে পারেনি। তারা চাইছিলো পরিবর্তন।
জাসদের ভুমিকার প্রশ্নে মহীউদ্দিন আহমেদ বলেন, বঙ্গবন্ধু হত্যাকান্ডের সময়ে জাসদের প্রথম সারির সকল নেতাই জেলে। আ স ম আবদুর রব, মেজর জলিল, শাজাহান সিরাজ, মোহাম্মদ শাহজাহান- তারা সকলেই জেলের মধ্যে ছিলেন। সিরাজুল আলম খান কোলকাতায় আশ্রয় নিয়েছিলেন। বঙ্গবন্ধুর হত্যাকান্ডের খবর শুনে সিরাজুল আলম খান হাউ-মাউ করে কেধে উঠেন।
ঐ সময় বাইরে ছিলেন হাসানুল হক ইনু, কর্ণেল আবু তাহের, শরীফ নূরুল আম্বিয়া আরো অনেকে। তাদের তখনকার ভুমিকা কি ছিলো সেটাই আসল। আজকে তারা যা বলছেন তা গুরুত্বপূর্ণ নয়। কারণ বঙ্গবন্ধু হত্যাকান্ডের পর হাসানুল হক ইনু, কর্ণেল তাহের রেডিও ষ্টেশনে গিয়েছিলেন, মোশতাকের সাথে দেখা করেছিলেন। তার মানে এরা জানতেন।কারণ ঐ সময়ে ইনু, তাহের যা করেছিলেন তা তাদের উদ্যোগে ভুমিকা নিয়েছিলেন, জাসদের নেতৃত্বের ভুমিকা ছিলোনা। কারণ জাসদ নেতারা সকলেই তখন জেলে। সিরাজুল আলম খানও দেশের বাইরে।
মহীউদ্দিন বজলুর রশীদ, কর্ণেল ফারুক এদের সাথে অন্যান্যদের কথোপকথনে প্রসঙ্গ এনে বলেন, ঐ সময় ওদের, মেজর ডালিমের বিভিন্ন লেখা, এবং আওয়ামীলীগের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাদের এমনকি কামরুজ্জামান সহ যাদের সাথে ফারুক রশীদ দেখা করেছিলো দুদিন আগেও, মোশতাকের সাথে আওয়ামীলীগের সকল পর্যায়ের নেতাদের যোগাযোগ ইত্যাদি উল্লেখ করে বলেন, এতে বুঝা যায় সবাই পরিবর্তন চাইছিলো। যারা হত্যাকান্ড ঘটায় বা এই ১৫ আগস্ট-এর সাথে জড়িয়ে পড়েছিলো- তারা কেউ ই পুরো প্ল্যান সম্পর্কে অবহিত ছিলোনা।
প্রত্যেকেই একেকটা এসাইনম্যান্ট সম্পর্কে অবগত ছিলো। এদের সবার বক্তব্যে পরিস্কার বঙ্গবন্ধু, শেখ ফজলুল হক মণি, সেরনিয়াবাত- এই তিনজন এদের টার্গেট ছিলো। তাহলে প্রশ্ন আসে- গোটা পরিবারের সবাইকে কেন হত্যা করা হলো ? তিনি নিজেই উত্তর দেন আবার।
তিনি বলেন আওয়ামীলীগ, হাসানুল হক ইনু, তাহের, তখনকার আর্মি নেতৃত্ব সবাই জানতো পরিবর্তন- কিন্তু হত্যাকান্ড সম্পর্কে কে কি জানতো সেটাই বিবেচ্য বিষয়। ঘটনার সময়ে তারা কিভাবে পুরো পরিবারকে হত্যা করেছে- সেটা হয়তো পরিস্থিতি বা যারা জড়িত ছিলো তারা করেছে। কিন্তু পরিকল্পনা ছিলো- মূলত এই তিন জনকে সরিয়ে দেয়ার।
জাসদের গণবাহিনী নিয়ে এক প্রশ্নের জবাবে মহীউদ্দিন বলেন, জাসদের উপর সরকারের অত্যাচার, নিপীড়ন, ডাকসু সহ সর্বত্র জোর পূর্বক নির্বাচন, ব্যালট ছিনতাই এর ফলে জাসদ ধরেই নিয়েছিলো- তাদের গণতান্ত্রিক রাজনীতি করা বা ফিরে আসার আর সুযোগ নেই। এটা তাদের মূল্যায়ন, তারা নিজেদেরকে বিপ্লবী দল মনে করতো- সেজন্যে বিপ্লবী বাহিনী গঠণ করেছিলো।
তবে এই বাহিনীকে কর্ণেল তাহের, ইনু নিজেদের উদ্যোগে ব্যবহার করেছেন জাসদ নেতৃত্ব যখন জেলে, এটা এদের উদ্যোগে। এটাকে সেভাবেই দেখতে হবে। আজকে তারা যে বক্তব্যই দেননা কেন, সেটা বিবেচ্য নয়। তিনি বলেন, আজকে হাসানুল হক ইনু বঙ্গবন্ধুর নাম নিয়ে দিনে রাতে তাসবিহ জপেন- সেটা আসল নয়। তখনকার সময়ের অর্থাৎ ১৫ই আগস্টের ভুমিকা বিবেচনায় নিতে হবে।