শীর্ষবিন্দু আন্তর্জাতিক নিউজ: মিশরে আটকে পড়া হাজার হাজার বৃটিশ পর্যটক দেশে ফেরার জন্য অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছেন। বিমানবন্দরে বিরাজ করছে উত্তেজনাকর পরিস্থিতি।
এদিকে, মিশরের অবকাশ কেন্দ্র শার্ম আল শেখ থেকে হাজার হাজার ব্রিটিশ পর্যটককে দেশে ফিরিয়ে আনার কাজ শুরু হয়েছে। ব্রিটিশ পর্যটকবাহী প্রথম বিমানটি শার্ম আল শেখ থেকে ব্রিটেনের পথে রয়েছে। এখন বিভিন্ন এয়ারলাইন্সের মোট একুশটি ফ্লাইটে তাদেরকে দেশে ফিরিয়ে আনা হচ্ছে।
সিনাইতে বিধ্বস্ত রুশ বিমানটিতে বোমা পেতে রাখা হয়েছিল, গোয়েন্দা তথ্যে এমন ইঙ্গিতের পর ব্রিটেন র্শাম আল শেখে ব্রিটিশ বিমান চলাচল স্থগিত রাখে। কিন্তু মিশর এবং রাশিয়া, দুটি দেশই দাবি করছে, বোমা পেতে রুশ বিমানটি ধ্বংস করা হয়েছে- এমন কোন তথ্য-প্রমাণ এখনো পর্যন্ত তাদের কাছে নেই।
বিমানবন্দরে গিয়ে পর্যটকদের ক্ষোভের মুখে পড়েন বৃটিশ রাষ্ট্রদূত জন ক্যাসন। ক্ষুব্ধ বৃটিশরা রাষ্ট্রদূতের কাছে চিৎকার করে জানতে চান আমরা বাড়ি ফিরবো কখন? বার্তা সংস্থা এপির খবরে বলা হয়, শনিবার ২২৪ আরোহীবাহী রাশিয়ান বিমান বিধ্বস্ত হওয়ার পর বুধবার মিশরের সিনাই থেকে ও সিনাইয়ের উদ্দেশ্যে সব ফ্লাইট বাতিল করে বৃটেন।
ধারণা করা হয়, ১৯ হাজারের মতো ব্রিটিশ নাগরিক শার্ম আল শেখে ছুটি কাটাচ্ছিলেন। বিমানের ভেতরে বোমার বিস্ফোরণের কারণে রুশ বিমানটি বিধ্বস্ত হয়েছে- ব্রিটিশ গোয়েন্দাদের এই তথ্যের পর সরকার নিজেদের নিরাপত্তা ব্যবস্থাপনায় তাদের ফিরিয়ে আনার এই উদ্যোগ নেয়।
এয়ারলাইন্স ইজিজেট জানিয়েছে, গতকাল তাদের কয়েকটি ফ্লাইট আটকে দিয়েছে মিশর সরকার। ইজিজেট বলেছে, তাদের আটটি বিমানকে এয়ারপোর্টে নামতে দেওয়া হয়নি।
তবে অভিযোগ অস্বীকার করে মিশর বলছে, এয়ারপোর্টের সীমিত ক্ষমতার কারণেই এটা করতে হচ্ছে। গত শনিবার বিমানটি শার্ম আল শেখ থেকে রাশিয়ার সেন্ট পিটার্সবার্গের উদ্দেশ্যে যাত্রা শুরু করার পর সিনাই এর আকাশে ভেঙে পড়লে ২২৪ জন আরোহীর সবাই নিহত হয়। এদের সবাই রুশ নাগরিক।
মিশরের সিভিল এভিয়েশন মন্ত্রী হোসাম কামাল বলেন, শুক্রবার ইউকের উদ্দেশ্যে পূর্বপরিকল্পিত ২৯টি ফ্লাইটের পরিবর্তে সব মিলিয়ে ৮টি ফ্লাইট যাবে। তিনি আরও বলেন, বৃটিশ এয়ারলাইন্সগুলো যাত্রীদের লাগেজ ছাড়াই যাত্রা করছে। আর শার্ম আল শেখ বিমানবন্দরে ১২০ টনের বেশি লাগেজ ধারণ ক্ষমতা নেই। শার্ম আল শেখ এলাকায় আনুমানিক ২০ হাজার বৃটিশ নাগরিক আটকে আছেন।
গতকাল থেকেই অপর দুটি এয়ারলাইন্স মনার্ক ও বৃটিশ এয়ারওয়েজের ফিরতি ফ্লাইট চালু করার পরিকল্পনা ছিল। এ পরিস্থিতিতে নাগরিকদের দেশে ফিরিয়ে আনার পদক্ষেপ ব্যাহত হচ্ছে। এতে করে দুর্ভোগ বাড়ছে আটকে পড়া বৃটিশদের। রাষ্ট্রদূত ক্যাসন পর্যটকদের আশ্বস্ত করার চেষ্টা করে বলেন, সবাইকে দেশে ফেরত নেয়ার আগ পর্যন্ত কর্তৃপক্ষ কাজ করে যাবে। হাজার হাজার পর্যটকে ঠাসা বিমানবন্দরে বৃটিশ নাগরিকরা বলেন, তারা বাড়িতে ফিরে যাওয়ার জন্য অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছেন।
গতকাল থেকে ফিরতি ফ্লাইট পুনরায় চালু করার অনুমোদন দেয় বৃটিশ কর্তৃপক্ষ। তবে যাত্রীদের শুধুমাত্র তাদের হাতব্যাগ বহন করার অনুমতি দেয়া হয়। রেড সি রিসোর্ট থেকে ইজিজেটের ১০টি ফ্লাইট যাওয়ার কথা ছিল। কিন্তু তাদের দাবি, মিশরীয় কর্তৃপক্ষ ৮টি ফ্লাইট বাতিল করে দেয়।
অভিযোগ উঠেছে, উদ্ধারকারী এসব বিমানের ফ্লাইটে মিশর বাধা দেওয়ার চেষ্টা করছে। গত বুধবার থেকেই শার্ম আল শেখে যাওয়ার এবং সেখান থেকে আসার সব ফ্লাইট সরকার বাতিল করে দিয়েছে। তখন থেকেই ব্রিটিশ পর্যটকরা সেখানে আটকা পড়েছিলেন।
ব্রিটিশ গোয়েন্দারা ধারণা করছেন, উড়ান শুরু করার আগেই বিমানের ভেতরে বোমা রেখে দেওয়া হয়েছিলো। বলা হচ্ছে, প্রযুক্তির সাহায্যে সিনাই উপত্যকায় জঙ্গিদের নিজেদের মধ্যে কথাবার্তা শোনার পরই তারা এই ধারণা করছেন। তবে মিশর ও রাশিয়া বলছে, এবিষয়ে উপসংহারে পৌঁছানোর সময় এখনও আসেনি।