নিউজ ডেস্ক: কড়া নিরাপত্তার মধ্যেও বিমানযাত্রী ভাইয়ের সাথে সিলেট ওসমানী বিমানবন্দর ইমিগ্রেশনে ঢুকে পড়েন বিয়ানীবাজার উপজেলার আঙ্গুরা গ্রামের হাবিব আলী। এ অপরাধে পুলিশ তাকে আটক করে। তিনি নিজেকে বিমানবন্দরের প্রধান নিরাপত্তা কর্মকর্তা নজরুল ইসলামের লোক দাবি করেন। অবশ্য পরে মুসলেকা দিয়ে তিনি মুক্ত হন। গত শুক্রবার (২০ নভেম্বর) ভোর সাড়ে ৬টায় এ ঘটনাটি ঘটে।
বিমানবন্দরের কঠোর নিরাপত্তার মধ্যেও তার ঢোকে পড়ার বিষয়ে জানতে চান গোয়েন্দা সংস্থার লোকজনও। জবাবে হাবিব আলী জানান- বিদেশযাত্রী ভাইয়ের অতিরিক্ত মালামাল ছাড়িয়ে দিতে নিরাপত্তা কর্মকর্তা নজরুল ইসলামকে ম্যানেজ করে তিনি ইমিগ্রেশনে ঢুকেছিলেন। কর্মকর্তা নজরুল তার ভাইয়ের বন্ধু বলেও জানান তিনি। তাকে আটকের বিষয়টি সত্য বলে স্বীকার করেন সিটি স্পেশাল ব্রাঞ্চের কর্মকর্তা বেলায়েত হোসেন।
নিরাপত্তার স্বার্থে বিমানবন্দরগুলোতে দর্শনার্থী প্রবেশ নিষিদ্ধ থাকলেও কতিপয় কর্মকতার যোগসাজসে ওসমানী বিমানবন্দরে এমনটি হচ্ছে বলে জানা গেছে। আর এভাবে প্রতিনিয়ত নিরাপত্তার বিষয়টি উপেক্ষা করে কর্মকতারা দর্শনার্থী ঢোকানোর অবৈধ বাণিজ্য করছেন। এর জন্য এক/দুই হাজার টাকা আদায় করেন অসাধু কতিপয় কর্মকর্তারা।
অভিযোগ রয়েছে নজরুল ইসলাম বিমান কর্মকর্তাদের ম্যানেজ করে যাত্রীদের অতিরিক্ত মালামাল ছাড়িয়ে দেন। অনেক যাত্রী ভ্রমণের সময় কম মালামাল নিয়ে যান। এ ক্ষেত্রে বেশি মালামাল বহনকারী যাত্রীদের টিকিট, কম মালামাল বহনকারী যাত্রীর টিকিটের সঙ্গে যুক্ত দেখিয়ে অতিরিক্ত মালামাল ছাড়িয়ে দেন তিনি।
সম্প্রতি সিলেট ওসমানী আর্ন্তজাতিক বিমানবন্দরকে ঘিরে বেসামাল হয়ে ওঠেছে একটি অপরাধচক্র। এ চক্রের নিয়ন্ত্রণ করছেন বিমানবন্দরের কয়েকজন কর্মকর্তা। যাত্রীদের নিরাপত্তা দেওয়ার নামে খোদ নিরাপত্তাকর্মীদের হাতে হয়রানী হতে হয় প্রবাস ফেরত বাংলাদেশিদের।
সম্প্রতি সিলেট ওসমানী আর্ন্তজাতিক বিমানবন্দরের ভেতরে টিকিটের বিনিময়ে দর্শনার্থী যাতায়াত বন্ধ রাখা হয়েছে। এই সুযোগে বিমানবন্দরের ভেতরে-বাইরে গড়ে ওঠেছে একটি দালাল চক্র। অভিযোগ রয়েছে, এ চক্রের নিয়ন্ত্রণ করছেন সিকিউরিটি সুপারভাইজার নির্মল ও সিকিউরিটি কর্মকর্তা নজরুল ইসলাম।
গোয়েন্দা তথ্যে, ওসমানী বিমানবন্দরকে ঘিরে স্থানীয় দালালচক্রের সদস্যরা হলো- বিমানবন্দরের অভ্যন্তরে সিভিল এভিয়েশনের কোয়ার্টারে বসবাসকারী রুনু, মোংলীপাড়ার জাহাঙ্গির, কাকুয়ারপাড়ের মুকুল, বড়শালার ব্যাংগা সেলিম ও হেলাল, নয়াবাজারের শামীম মিয়া, লিটন, সমছ ও আরিফ, মোগলীপাড়ার ময়নাল, টিলাপাড়ার বাবুল, চৌকিদেখীর রাসেল ও ওসমান।
এসকল দালালদের মাধ্যমে দর্শনার্থী ঢোকানোর ক্ষেত্রে কৌশল অবলম্বন করা হয়। এসব দর্শনার্থীদের বাইরে দাঁড় করে রাখা হয়। বিমান আসার পর যাত্রী নেমে গেলে হুলোস্থুলের মধ্যে এদের ঢুকিয়ে নেওয়া হয়। দর্শনার্থীরাও গোয়েন্দাদের চোখ ফাঁকি দিয়ে যাত্রীদের সাথে মিশে যায়।
এছাড়া লাগেজে যাত্রীদের নির্ধারিত মালামালের চেয়ে অতিরিক্ত ১৫/২০ কেজি মালামাল হলে বিমান সংশ্লিষ্টদের সাথে আঁতাত করে তা ছাড়িয়ে দেন নজরুল। এতে অতিরিক্ত ১৫ কেজির স্থলে মিথ্যের আশ্রয়ে ১ কেজি বা ২০ কেজির স্থলে মাত্র ২ কেজির বাড়তি ফি আদায় করা হয়। ফলে অতিরিক্ত মালামাল বহনে বিমানের লোকসান গুণতে হয়।
সম্প্রতি যাত্রীর অতিরিক্ত মাল ছাড়িয়ে দিতে নজরুলের এহেন কর্মকান্ড গোয়েন্দাদের দৃষ্টিগোচরে আসলে তাকে ভৎসনা করা হয়।
বিমানবন্দরের কর্মকর্তা কর্মচারীদের সাথে আলাপ করে জানা গেছে, প্রায় ৯ মাস আগে চট্টগ্রাম শাহ আমানত (রহ.) বিমানবন্দর থেকে বদলী হয়ে সিলেটে ওসমানী বিমানবন্দরে আসেন নিরাপত্তা কর্মকর্তা নজরুল ইসলাম। তার বাড়ি সিলেটে। তিনি এসেই আঞ্চলিকতার দোহাই দিয়ে পুরো এয়ারপোর্ট এলাকায় প্রভাব বিস্তার করে নেন।
গোয়েন্দা সূত্রে জানা যায়, চট্টগ্রাম শাহ আমানত (রহ.) বিমানবন্দরে তিনি স্বর্ণ চোরাচালান চক্রের সাথে সম্পৃক্ত ছিলেন বলে তাকে বদলী করা হয়।
বিমানবন্দরের একটি সূত্র জানায়, সম্প্রতি সিলেট ওসমানী বিমানবন্দর দিয়ে সোনার চালান প্রবেশ নিয়ে বেশ আলোচিত হয়ে ওঠেছে। চোরকারবারিরা সিভিল এভিয়েশন ও বিমানবন্দরে কর্মরত কাস্টম কর্মকর্তাকে ম্যানেজ করে চোরাই পথে সোনার চালান বিমানবন্দর থেকে খালাস করে দেন। এমনই একটি ঘটনা ঘটেছে সম্প্রতি। বিমানবন্দরের এক কর্মচারি সোনার বারসহ আটক হন। এ ঘটনার সাথে সিকিউরিটি ইনচার্জ নজরুল ইসলামের যোগসাজসের অভিযোগ ওঠে।
এসব কারণে বিমানবন্দরের অধিকাংশ কর্মকর্তা-কর্মচারি নজরুলের উপর ক্ষুব্ধ। নিরাপত্তার দায়িত্ব ফেলে টাকা কামাইয়ে মনযোগি থাকায় বিমানবন্দর থেকে যাত্রীদের অনেক মালামাল হারিয়ে যায়। বড়লেখা উপজেলার আব্দুল হান্নান আবুদাবি থেকে দেশে আসেন রমজানের আগে। তার লাগেজটি হারিয়ে যায়। পরে অভিযোগ করেও লাগেজটি পাননি।
এদিকে, সিকিউরিটি সুপারভাইজার নির্মল ওসমানী বিমানবন্দরের অপরাধ নেটওয়ার্কের সাথে সরাসরি জড়িত বলে অভিযোগ রয়েছে। তার মাধ্যমেও দর্শনার্থী ঢোকানোর ব্যবসা চলে। এয়ারপোর্ট এলাকার ফ্রি শপের মদ ও পণ্য সামগ্রী বাইরে বিক্রির ক্ষেত্রেও তার সহযোগিতার অভিযোগ রয়েছে।
বিমানবন্দর সূত্রে জানা যায়, অবৈধ কর্মকান্ডে যুক্ত থাকার অভিযোগে প্রায় ৯ মাস আগে তার বদলী হয়েছিলো ঢাকায়। তিনি তদবির করে নিজের বদলী রহিত করণে তারই সহকর্মী বিকাশকে ঢাকায় বদলী করান। এ নিয়ে গত আগস্ট মাসে জাতীয় একটি দৈনিকে নজরুল-নির্মলকে জড়িয়ে সংবাদ প্রকাশিত হয়।
এসব অভিযোগ অস্বীকার করে করে নজরুল ইসলাম সাংবাদিকদের বলেন- ‘চট্টগ্রাম শাহ আমানত (রহ.) বিমানবন্দর থেকে আমাকে বিভিন্ন সংগঠন বিদায় সংবর্ধনা দিয়েছে। সেসব সার্টিফিকেট আমার কাছে আছে।’ নিরাপত্তা কর্মকর্তা নির্মল সাংবাদিকদের জানান- ‘অভিযোগ সত্য নয়, আমি কোনো অনিয়মের সাথে জড়িত নই।’