দীন ইসলাম: পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব এ এল এম আবদুর রহমান। রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (রাজউক) পূর্বাচল নতুন শহর প্রকল্পে পাঁচ কাঠা আয়তনের প্লট বরাদ্দ পেয়েছেন। নিয়ম অনুযায়ী তাকে ১০নং সেক্টরের ৩১০নং রাস্তার ৩৯নং প্লটটি বরাদ্দ
দেয়া হয়। ২০০৭ সালের ১৭ই এপ্রিল থেকে এটাই জেনে আসছিলেন সরকারের এ শীর্ষ কর্মকর্তা। কিন্তু ২০১৫ সালের মাঝামাঝি সময়ে পূর্বাচল সেলে নিজের প্লট লিজ ডিড (রেজিস্ট্রি) করে নেয়ার জন্য আবেদন করেন। নিয়ম অনুযায়ী স্টোর রুম থেকে তার ফাইল বের হয়।
এরপর দখলপত্র নেয়ার পর দেড় হাজার টাকা ব্যাংকে জমা দিয়ে সাইট ম্যাপ ও লিজ ডিড বই নেন। প্রয়োজনীয় আনুষ্ঠানিকতা শেষে লিজ ডিডের আবেদন জমা দেয়ার পর জানতে পারেন তার প্লটটি মোসা. বাহারুন ও মোসা. তাহারুনের নিযুক্ত আম-মোক্তার সামিয়া রহমানকে ২০১৩ সালে বরাদ্দ দেয়া হয়েছে।
এরপর হতবিহবল হয়ে পড়েন এ কর্মকর্তা। তিনি মানবজমিনের এ প্রতিবেদককে বলেন, সারা জীবন সৎভাবে জীবনযাপনের চেষ্টা করেছি। ২০০৭ সালে আমার নামে বরাদ্দকৃত প্লট অন্যের নামে কীভাবে বরাদ্দ দেয়া হয়ে যায়। এটা চিন্তা করে ভেবে পাই না। তবে আমার প্লটটির জটিলতা নিরসনে রাজউক উদ্যোগ নিয়েছে বলে জানতে পেরেছি। সমাধান হলেই বেঁচে যাই। তার মতো অনেক বরাদ্দ গ্রহীতা ডুপ্লিকেট প্লটের কারণে রাজউক কর্মকর্তাদের দ্বারে দ্বারে ঘুরছেন। কোনো প্রতিকার পাচ্ছেন না।
রাজউক কর্মকর্তাদের কাছে গেলে বলা হচ্ছে, বরখাস্তকৃত পরিচালক এ কে এম আহসান ইকবাল ভূঁইয়া আমাদের কাছে কোনো প্লট আইডি বুঝিয়ে দিয়ে যাননি। তাই কোনো কিছুই আন্দাজ করে বলতে পারছি না। একটু ওয়েট করুন, দেখছি। রাজউকে অনুসন্ধানে জানা গেছে, পূর্বাচলে প্লট বরাদ্দের ক্ষেত্রে ডুপ্লিকেটের (দ্বৈত) ছড়াছড়ি চলছে। এ নিয়ে রীতিমতো আতঙ্কিত হয়ে পড়েছেন পূর্বাচল সেলের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। বিব্রত রাজউকের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা। প্রায় প্রতিদিনই ডুপ্লিকেট প্লট বরাদ্দ নিয়ে গৃহায়ন ও গণপূর্তমন্ত্রী এবং একই মন্ত্রণালয়ের সচিবের কৈফিয়তের মুখে পড়ছেন রাজউক চেয়ারম্যান ও সদস্য (এস্টেট)। এর কোনো সমাধান খুঁজে পাচ্ছেন না তারা।
বিষয়টি সম্পর্কে জানতে চাইলে পূর্বাচল সেলের দায়িত্বপ্রাপ্ত পরিচালক শেখ শাহীনুল ইসলাম মানবজমিনকে বলেন, আমার কথা খুব স্পষ্ট, মানুষকে কোনোভাবেই ভোগান্তির মধ্যে ফেলা যাবে না। এটা আমি আমার কর্মচারীদের বলে দিয়েছি। কিন্তু ডুপ্লিকেট প্লট নামক জঞ্জালের কারণে কাজ করে আরাম পাচ্ছি না।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, ১০, সাড়ে সাত, পাঁচ ও তিন কাঠার দুই শতাধিক প্লট ডুপ্লিকেট বরাদ্দ হয়েছে। এর মধ্যে অনেক ভিআইপি ব্যক্তির প্লট ডুপ্লিকেট হয়েছে। সবচেয়ে বেশি ডুপ্লিকেট প্লট বরাদ্দ দেয়া হয়েছে ২০১২ ও ২০১৩ সালে। ওই সময়ে বরাদ্দকৃত ছয় শ প্লটের মধ্যে ২৮টি প্লট আইডি ডুপ্লিকেট হয়েছে। ওই সময়ে দায়িত্বপ্রাপ্ত উপপরিচালক বিষয়টি সম্পর্কে চেয়ারম্যানের কাছে লেখা নোটে উল্লেখ করেন, ৬০০টি প্লটের বরাদ্দ প্রাপকদের মধ্যে ২৮টি প্লট আইডি ডুপ্লিকেট হয়েছে।
অর্থাৎ একই প্লট আইডি দুজনকে বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। দ্রুত সেবা দিতে যাওয়ার কারণেই এমন ভুলভ্রান্তি হয়েছে। তাই ডুপ্লিকেট প্লট জটিলতা নিরসনে ৫৬ জনের একটি প্রস্তাব পাঠান। যাতে ২৮ জনকে নতুন প্লট আইডি দেয়ার জন্য অনুরোধ করা হয়। এর ভিত্তিতে বিষয়টি অনুমোদন দেন রাজউক চেয়ারম্যান। এদিকে এ তালিকার বাইরেও অনেক ডুপ্লিকেট প্লট রয়ে গেছে।
লোভনীয় বলে পরিচিত ১০, ১১, ১৩, ০৯, ০৭, ০১, ০২ ও ০৩নং সেক্টরে অনেক দ্বৈত বরাদ্দের কারণে অনেকেই নানা সমস্যার মুখে পড়বেন। রাজউকের এক কর্মকর্তা জানান, দ্বৈত বরাদ্দের কারণে রূপগঞ্জ অংশে কেউ আর প্লট পাবেন না। তাদের এখন গাজীপুর অংশে প্লট নিয়ে সন্তুষ্ট থাকতে হবে।