শীর্ষবিন্দু নিউজ ডেস্ক: আসন্ন ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনের আগে সিলেটে দলীয় এক জনসভায় নৌকা প্রতীকে ভোট চাইলেন আওয়ামী লীগ সভানেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বৃহস্পতিবার বিকেলে সিলেট আলীয়া মাদ্রাসা মাঠে স্থানীয় আওয়ামী লীগ আয়োজিত জনসভায় বক্তব্য দেন শেখ হাসিনা।
আওয়ামী লীগ সরকার আমলে সিলেটে আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর এবং শিক্ষাসহ নানা খাতে উন্নয়নের কথা বক্তব্যে তুলে ধরেন প্রধানমন্ত্রী। উন্নয়ন কর্মকাণ্ড অব্যাহত রাখার প্রতিশ্রুতি দিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, আমি সিলেটবাসীকে একটি কথাই বলতে চাই যে, আমার কাছে দাবি করা লাগবে না। আমি বাংলাদেশের আনাচে-কানাচে ঘুরেছি। এদেশের মানুষের সমস্যা কী আমাদের জানা। এদেশের মানুষের সমস্যার সমাধান কীভাবে করতে হবে, উন্নতি কীভাবে করতে হবে সেটাও আমরা জানি। আর সেভাবেই আমরা কাজ করে যাচ্ছি।
বক্তব্যের মাঝে প্রধানমন্ত্রী হঠাৎ উপস্থিত জনতাকে প্রশ্ন করেন: আমাদের ওপর এই ভরসা কি আছে আপনাদের? তখন সবাই সমস্বরে হাত তুলে বলেন, হ্যাঁ, আছে। শেখ হাসিনা বলেন, নিশ্চয়ই, এই ভরসাটুকু আমাদের ওপর আপনারা রাখবেন।
আওয়ামী লীগ সভানেত্রী বলেন, নৌকা মার্কায় ভোট দিয়েছেন বলেই দেশের স্বাধীনতা পেয়েছেন, নৌকা মার্কায় ভোট দিয়েছেন বলেই আজকে দেশের উন্নতি হচ্ছে। তাই আগামীতেও কখনো নৌকা মার্কাকে ভুলবেন না। আগামীতেও নৌকা মার্কায় ভোট দেবেন তো? হাত তুলে ওয়াদা করেন। উপস্থিতরা হাত তুলে বলেন, দেব। নৌকাই দেবে শান্তি, সমৃদ্ধি, উন্নতি, বলেন শেখ হাসিনা।
গত ডিসেম্বরে পৌরসভা নির্বাচনের মধ্য দিয়ে দেশে প্রথমবারের মতো দলীয় প্রতীকে স্থানীয় সরকার নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনও একইভাবে অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। আগামী মার্চে প্রথম ধাপে পাঁচ শতাধিক ইউনিয়ন পরিষদে নির্বাচন অনুষ্ঠানের পরিকল্পনার কথা নির্বাচন কমিশনের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন।
জনসভায় বক্তব্যে সরকারবিরোধী আন্দোলনের নামে নাশকতাকারীদের বিচারের কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী। যারা পেট্রোল বোমা, আগুন দিয়ে মানুষ পুড়িয়েছে, তাদের কোনো ক্ষমা নাই। যেখানে যেখানে পোড়ানো হয়েছে সেখানেই মামলা হয়েছে এবং প্রত্যেকের বিচার হবে।
গত বছরের প্রথম তিন মাস বিএনপি নেতৃত্বাধীন জোটের আন্দোলনের প্রসঙ্গ তুলে শেখ হাসিনা বলেন, বিএনপি-জামায়াত জোট এক হয়ে ২০১৫ সালের জানুয়ারি থেকে মার্চ পর্যন্ত যেভাবে হামলা চালায় আর ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি নির্বাচন বানচালের নামে একই কায়দায় তারা মানুষ হত্যা করে। ওই সময়ে সহিংসতায় নারী ও শিশুসহ কেউ খালেদা জিয়ার হাত থেকে রেহাই পায়নি।
আওয়ামী লীগ সভানেত্রী বলেন, আমরা চাই, এদেশের মানুষের জীবনের শান্তি। আর ওরা চায় অশান্তি। কয়েকটি প্রকল্পের উদ্বোধন, ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন ও মদনমোহন কলেজের হীরক জয়ন্তি অনুষ্ঠানে যোগ দিতে বৃহস্পতিবার দুপুর ১২টার দিকে সিলেট পৌঁছান প্রধানমন্ত্রী।
প্রথমে হযরত শাহজালাল ও হযরত শাহপরানের মাজার জিয়ারত করে মদনমোহন কলেজের হীরকজয়ন্তি অনুষ্ঠানে যোগ দেন তিনি। এরপর ৪টার দিকে জনসভা মাঠে আসেন। কারও নাম উল্লেখ না করে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার দিকে ইঙ্গিত করে শেখ হাসিনা বলেন, দেশ যখন উন্নতির দিকে এগিয়ে যায়, মানুষ যখন সুখে-শান্তিতে থাকে মানুষের জীবনে যখন শান্তি ফিরে আসে, আমরা দেখি একজনের মনে খুব অশান্তি দেখা দেয়।
বাংলাদেশের মাটিতে জঙ্গিবাদ-সন্ত্রাসের স্থান হবে না মন্তব্য করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, কাজেই আপনারা সজাগ থাকবেন। আপানাদেরকেও লক্ষ রাখতে হবে যেন কোনও ছেলে-মেয়ে, কেউ যেন জঙ্গিবাদীর কাছে যেন না যেতে পারে। আওয়ামী লীগ ক্ষমতার রাজনীতিতে বিশ্বাস করে না মন্তব্য করে শেখ হাসিনা বলেন, আওয়ামী লীগ চায় এদেশে ন্যায় প্রতিষ্ঠা হোক।
যুদ্ধাপরাধের বিচারের রায় কার্যকরের প্রসঙ্গ তুলে তিনি বলেন, বিচার অব্যাহত থাকবে। বাংলাদেশে কলুষমুক্ত হবে। মানুষের জীবনে শান্তি ফিরে আসবে। বক্তব্যে দেশের শিক্ষা, স্বাস্থ্য, তথ্য-প্রযুক্তি, বিদ্যুৎ, অবকাঠামো, দারিদ্র্য বিমোচন ও অর্থনৈতিক খাতসহ বিভিন্ন খাতের উন্নয়ন চিত্র তুলে ধরেন প্রধানমন্ত্রী।
বাঙালি জাতিকে কেউ দাবায়ে রাখতে পারবে না। বাঙালি জাতির যে অগ্রযাত্রা শুরু হয়েছে তা অব্যাহত থাকবে। ২০০১ থেকে ২০০৬ সালে বিএনপি-জামায়াত জোট ক্ষমতায় থাকাকালে সিলেট বিভাগের বিভিন্ন জায়গায় বোমা হামলার কথা মনে করিয়ে দেন শেখ হাসিনা।
তিনি বলেন, বিএনপির আমল ছিল সন্ত্রাস, জঙ্গিবাদ, সন্ত্রাসের আমল। এই দেশের মানুষের ভাগ্য নিয়ে ছিনিমিনি খেলা, দুর্নীতি করা, দুঃশাসন করা, অর্থপাচার করা। আর আওয়ামী লীগের আমল হচ্ছে শান্তি, নিরাপত্তা আর উন্নয়নের সময়। বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে, এগিয়ে যাবে মন্তব্য করে শেখ হাসিনা বলেন, “বাংলাদেশকে উন্নত-সমৃদ্ধ দেশ হিসেবে গড়ে তুলব আমরা।
আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এলে দেশের উন্নয়ন হয়। কারণ আওয়ামী লীগ স্বাধীনতা এনেছে। আর যারা উড়ে এসে জুড়ে ক্ষমতায় বসে তারা লুটপাট করে, জঙ্গিবাদ-সন্ত্রাসবাদ সৃষ্টি করে। তাদের স্থান বাংলার মাটিতে হবে না। জনসভা শুরুর বেশ আগেই জনসমাগমে আলিয়া মাদ্রাসা মাঠ পূর্ণ হয়ে ওঠে। শেখ হাসিনার বক্তব্য শোনার জন্য আশপাশের রাস্তা ও বাড়িঘরের ছাদেও ভিড় দেখা যায়।
প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভানেত্রীর এই সফর ঘিরে পুরো সিলেট নগরীকে সাজানো হয় মনোরম সাজে। নগরীর বিভিন্ন সড়কে সংস্কার কাজ হয়েছে। বিভিন্ন এলাকার সড়কদ্বীপে হয়েছে সৌন্দর্যবর্ধন। গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টগুলোতে লাগানো হয়েছে শোভাবর্ধনকারী ফুল গাছ।
সিলেট মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি বদরউদ্দিন আহমেদ কামরানের সভাপতিত্বে জনসভায় অন্যদের মধ্যে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত, আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত, শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ, আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মিজবাহ উদ্দিন সিরাজ, সাবেক প্রধান হুইপ আব্দুস শহীদ, অর্থ প্রতিমন্ত্রী এমএ মান্নান, তথ্য-প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক বক্তব্য রাখেন।
বিকালে জনসভাস্থলে এসে প্রধানমন্ত্রী ফলক উন্মোচনের মাধ্যমে শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ড. এম এ ওয়াজেদ মিয়া আইসিটি ভবন, আবুল মাল আবদুল মুহিত ক্রীড়া কমপ্লেক্স, জৈন্তাপুর উপজেলা ফায়ার সার্ভিস স্টেশন, এপিবিএন ব্যারাক ভবন, ওসমানীনগর থানা ভবন, দৃষ্টি প্রতিবন্ধী শিশুদের জন্য নির্মিত হোস্টেল ভবন, ৩০ শয্যাবিশিষ্ট খাদিমপাড়া হাসপাতাল, বিভাগীয় পাসপোর্ট ও ভিসা অফিস, সিলেট শহীদ শামসুদ্দিন আহমদ হাসপাতালকে ১০০ শয্যাবিশিষ্ট শিশু হাসপাতালে রূপান্তর, সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় লাইব্রেরি ভবন নির্মাণ প্রকল্পের উদ্বোধন করেন।
এছাড়া সিলেট আউটার স্টেডিয়াম, খসরুপুর বাজার জিসি-পৈলনপুর-বালাগঞ্জ জিসি সড়ক উন্নয়ন, হরিপুর জিসি-গাছবাড়ী জিসি সড়ক (কানাইঘাট অংশ) উন্নয়ন, মৈয়াখালী বাজার-আর অ্যান্ড সুইচ (বারোহাল ইউপি অফিস) ভায়া হাটুবিল মাদ্রাসা সড়ক উন্নয়ন, নারী পুলিশ ডরমেটরি ভবনের ঊর্ধ্বমুখী সম্প্রসারণ কাজ, শাহপরাণ থানা ভবন নির্মাণ, মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের বিভাগীয় ও জেলা অফিস নির্মাণ, সিলেট বিভাগীয় ও জেলা এনএসআই কার্যালয় ভবন নির্মাণ, তামাবিল স্থলবন্দর নির্মাণ, হযরত গাজী বোরহান উদ্দিন মাজার, তিন তলা ভিত্তি বিশিষ্ট মসজিদ, মহিলা এবাদতখানা ও সংযোগ সড়ক নির্মাণ কাজ, বিভাগীয় পরিচালক (স্বাস্থ্য) সিলেট বিভাগ এবং সিভিল সার্জন সিলেট এর কার্যালয় ভবন নির্মাণ ও সিলেট ইলেকট্রনিক সিটির ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন তিনি।
সিলেটে প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যে নির্বাচনের ইঙ্গিত
বৃহস্পতিবার বিকেলে সিলেট আলিয়া মাদরাসা মাঠে জেলা ও মহানগর আওয়ামী লীগ আয়োজিত জনসভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নির্বাচনের ইঙ্গিত দিয়েছেন। প্রধানমন্ত্রী বলেন, আওয়ামী লীগ এদেশের স্বাধীনতা এনেছে, তাই আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসলে দেশে উন্নতি হয়।
নৌকা হচ্ছে স্বাধীনতার প্রতীক। নৌকায় ভোট দেয়ায় দেশের উন্নতি হচ্ছে। তাই নৌকাকে ভুলবেন না। নৌকা উন্নতি শান্তি সমৃদ্ধি দেবে। তিনি উপস্থিত জনতাকে উদ্দেশ্য করে নৌকা মার্কায় ভোট দিবেন কিনা জানতে চাইলে জনতা হাত তুলে সম্মতি প্রকাশ করেন। ভোট চেয়ে বক্তব্য শেষ করেন প্রধানমন্ত্রী।
তবে কোন নির্বাচনের জন্য তিনি ভোট চেয়েছেন তা উল্লেখ না করলেও অনেকে এটাকে মধ্যবর্তী নির্বাচনের ইঙ্গিত বলে মনে করছেন।