শীর্ষবিন্দু নিউজ ডেস্ক: প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মাতৃভাষার মর্যাদা রক্ষায় সমাজের সর্বস্তরের মানুষকে আরও সচেতন হওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন। শনিবার সকালে রাজধানীর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে একুশে পদক বিতরণ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির ভাষণে প্রধানমন্ত্রী এ কথা বলেন।
সংস্কৃতিবিষয়ক মন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূরের সভাপতিত্বে এবং মন্ত্রিপরিষদ সচিব শফিউল আলমের পরিচালনায় অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য দেন সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের সচিব আকতারী মমতাজ। এ সময় প্রধানমন্ত্রী বলেন, আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে স্বীকৃত যে ভাষা, সেটাকেই পর্যায়ক্রমে গ্রহণ করতে হবে। কিন্তু আমাদের মাতৃভাষার স্বকীয়তাও রক্ষা করতে হবে।
অনুষ্ঠানে জাতীয় সংসদের ডেপুটি স্পিকার ফজলে রাব্বি মিয়া, জাতীয় সংসদে বিরোধী দলীয় নেতা রওশন এরশাদ, অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আব্দুল মুহিত, তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু, খাদ্যমন্ত্রী কামরুল ইসলাম, নৌপরিবহন মন্ত্রী শাজাহান খান, প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রী মোস্তাফিজুর রহমান ফিজার উপস্থিত ছিলেন।
অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা, মন্ত্রিপরিষদ সদস্য, সংসদ সদস্যবৃন্দ, বিভিন্ন মন্ত্রণালয়, দপ্তর-অধিদপ্তর এবং স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা, কূটনৈতিক মিশনের সদস্যবৃন্দ এবং উন্নয়ন সহযোগী প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
মাতৃভাষা শিক্ষা নেওয়ার পর অন্য ভাষা শিখলেই প্রকৃত শিক্ষাটা হয় উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, কাজেই এ বিষয়ে আমাদের সমাজকে আমি আরও একটু সচেতন হওয়ার আহ্বান জানাচ্ছি। আমাদের মাতৃভাষার মর্যাদা, যেটা এত রক্তের বিনিময়ে পেয়েছি, সেটা যেন ধারণ করতে পারি।
একুশে ফেব্রুয়ারির ইতিহাস বিশ্ববাসীর কাছে তুলে ধরতে প্রধানমন্ত্রী সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়কে আহ্বান জানিয়ে বলেন, একুশে ফেব্রুয়ারি যে ইতিহাস সেটা আমরা বিশ্বব্যাপী তুলে ধরার উদ্যোগ নিয়েছি। এ বিষয়ে আমি সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়কে অনুরোধ করব আরও কিছু উদ্যোগ গ্রহণ করতে। নিজ নিজ ক্ষেত্রে কৃতিত্বপূর্ণ অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ এ বছর ১৬ জনকে একুশে পদক দেওয়া হয়। পদকপ্রাপ্ত ব্যক্তিদের নাম ঘোষণার সঙ্গে সঙ্গে তাঁদের পদকপ্রাপ্তির সাইটেশন পাঠ করেন মন্ত্রিপরিষদ সচিব শফিউল আলম।
ভাষা আন্দোলনে কৃতিত্বপূর্ণ অবদানের জন্য বিচারপতি কাজী এবাদুল হক, সাঈদ হায়দার ও জসিম উদ্দিনকে এই পদক দেওয়া হয়। এই বিভাগে প্রয়াত সৈয়দ গোলাম কিবরিয়ার (মরণোত্তর) পুরস্কার গ্রহণ করেন তাঁর জ্যেষ্ঠ সন্তান রোকেয়া বেগম। শিল্পকলায় অভিনেত্রী জাহানারা আহমেদ, শাস্ত্রীয় সংগীতে পণ্ডিত অমরেশ রায় চৌধুরী, সংগীতে শিল্পী শাহীন সামাদ, নৃত্যে আমানুল হককে একুশে পদকে সম্মানিত করা হয়। চিত্রকলায় শিল্পী প্রয়াত কাজী আনোয়ার হোসেনের (মরণোত্তর) পক্ষে সহধর্মিণী মিসেস সুফিয়া আনোয়ার প্রধানমন্ত্রীর কাছ থেকে পদক গ্রহণ করেন।
মুক্তিযুদ্ধে অবদানের জন্য মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা ও ট্রাস্টি মফিদুল হক আর সাংবাদিকতায় ‘দৈনিক জনকণ্ঠ’ পত্রিকার উপদেষ্টা সম্পাদক তোয়াব খানকে একুশে পদক দেওয়া হয়েছে।
গবেষণায় অধ্যাপক এ বি এম আব্দুল্লাহ ও মংছেন চীং মংছিনকে একুশে পদকে ভূষিত করা হয়েছে। এ ছাড়া ভাষা এবং সাহিত্যে বিশেষ অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ জ্যোতি প্রকাশ দত্ত, অধ্যাপক হায়াৎ মামুদ এবং হাবিবুল্লাহ সিরাজীকে একুশে পদক দেওয়া হয়েছে।
একুশে পদক প্রদান অনুষ্ঠানে বক্তব্য দিচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী। পদকপ্রাপ্ত ব্যক্তিরা স্বর্ণের তৈরি ৩৫ গ্রাম ওজনের পদক, দুই লাখ টাকা, সম্মাননাপত্র এবং একটি রেপ্লিকা পেয়েছেন।