বুধবার, ২১ মে ২০২৫, ০৭:১১

বাংলাদেশের চুরি হয়ে যাওয়া অর্থ উদ্ধারের আশা খুবই কম

বাংলাদেশের চুরি হয়ে যাওয়া অর্থ উদ্ধারের আশা খুবই কম

দুনিয়া জুড়ে নিউজ ডেস্ক: বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ থেকে চুরি যাওয়া ৮ কোটি ১০ লাখ ডলার উদ্ধারের সুযোগ খুব কম বলে মনে করছে ফিলিপাইনের তদন্তকারী সিনেট কমিটি ব্লু রিবন। দেশটির দৈনিক ইনকোয়েরার পত্রিকায় ওই কমিটির সদস্য সের্গিও ওসমেনা এ কথা জানিয়েছেন। তাঁর সন্দেহ, চুরি যাওয়া অর্থ এর মধ্যেই দেশের বাইরে পাচার হয়ে গেছে।

গতকাল বুধবার অর্থ চুরির বিষয়ে শুনানিতে সিনেটর সেন সের্গিও ওসমেনা এ কথা বলেন। একই রকম হতাশা প্রকাশ করেছেন ব্লু রিবন কমিটির সভাপতি তেয়োফিস্তো গুংগোনা। তিনি বলেন, চুরি যাওয়া অর্থ উদ্ধার করা খুব কঠিন হবে। কারণ এই অর্থ এর মধ্যেই অতলে হারিয়ে গেছে। তাঁর মন্তব্য, এটি ‘ব্ল্যাকহোলে’ চলে গেছে।

ওসমেনা বলেন, বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে চুরি যাওয়া অর্থের খোঁজ পাওয়ার ব্যাপারটি নির্ভর করছে ক্যাসিনোর সহযোগিতার ওপর। ইনকোয়েরার পত্রিকার ১১ মার্চের খবরে জানা যায়, ৮ কোটি ১০ লাখ মার্কিন ডলারের মধ্যে ৪ কোটি ৬০ লাখ ডলার দেশটির রিজাল ব্যাংক হয়ে ক্যাসিনোতে (জুয়া খেলার স্থান) ঢুকেছে।

সিনেটে গতকালের শুনানিতে ক্যাসিনোর কাছ থেকে তথ্য আদায়ের ওপর গুরুত্ব দেওয়া হয়। চুরি যাওয়া অর্থ কোথায় ও কী কাজে ব্যবহার হয়েছে, তা ক্যাসিনোর কাছ থেকেই জানা সম্ভব বলে মনে করছে এই কমিটি। এটা ক্যাসিনোর সহযোগিতার ওপর নির্ভর করছে।

এ কারণেই মাকাতি শহরে সিনেট সদস্য ওসমেনা সাংবাদিকদের বলেন, অর্থ উদ্ধারের আশা খুব কম। তবে তিনি এটাও বলেন, দেশের বাইরে থাকায় সোলোয়ার ক্যাসিনোর প্রেসিডেন্টকে তাঁরা এ নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করতে পারেননি। ওই ক্যাসিনোর প্রেসিডেন্ট যে করপোরেট কনস্যুলারকে পাঠিয়েছেন, তিনি লেনদেনের ব্যাপারে বিস্তারিত কিছু জানেন না।

তবে ওসমেনা বলেন, চুরি যাওয়া অর্থ কোথায় গেল, তা তিনি ক্যাসিনোর রেকর্ড যাচাই করে দেখতে চান। তাঁরা ক্যাসিনোগুলোর কাছ থেকে ওই অর্থের ‘ইলেকট্রনিক ট্রেইল’ খোঁজার চেষ্টা করবেন। তবে এ ব্যাপারে আইনের অনেক ফাঁক রয়েছে। সেই ফাঁক দিয়ে ক্যাসিনো সহজেই বেরিয়ে আসতে পারে।

ওসমেনা ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ফিলিপাইনের আইন সরকারের চেয়ে অপরাধীদের বেশি রক্ষা করে। এ প্রসঙ্গে তিনি ব্যাংকের গোপনীয়তা-বিষয়ক একটি আইনের উদাহরণ দেন।

ফিলিপাইনে এ ঘটনা তদন্ত-সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের তথ্যের ভিত্তিতে সেখানকার সংবাদমাধ্যমে যে খবর প্রকাশিত হয়েছে, তা থেকে বোঝা যায়, ৫ ফেব্রুয়ারি বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভের অর্থ চুরি হয়। চুরি হওয়া ৮ কোটি ১০ লাখ ডলার ফিলিপাইনের রিজাল ব্যাংকিং করপোরেশনের জুপিটার শাখায় ছিল ৯ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত। সেখান থেকে অর্থের বড় অংশ চলে যায় দেশটির ক্যাসিনোতে। আবার ক্যাসিনোতেও সেই অর্থ ছিল আরও ২০ দিন, ২৯ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত।

অর্থ চুরির পুরো ঘটনাটি বাংলাদেশে গোপন রাখা হয়। আর গোপনীয়তার মধ্যেই অর্থ সরিয়ে ফেলা সহজ হয়।

ফিলিপাইনের দৈনিক ইনকোয়েরার গতকাল বুধবার দেশটির সিনেট কমিটির শুনানিতে উপস্থাপিত তদন্ত প্রতিবেদনকে উদ্ধৃত করে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করে। সেই তদন্ত প্রতিবেদন ছিল রিজাল কমার্শিয়াল ব্যাংকিং করপোরেশনের (আরসিবিসি) নিজেদের করা। ব্যাংকটির মাকাতি শহরের জুপিটার স্ট্রিট শাখা থেকে চারটি ব্যাংক হিসাব হয়ে চুরির অর্থ বেরিয়ে যায় মূলত ৯ ফেব্রুয়ারি।

ইনকোয়েরার-এর প্রতিবেদনে এ বিষয়ে বলা হয়েছে, ৯ ফেব্রুয়ারি বাংলাদেশ ব্যাংকের পক্ষ থেকে আরসিবিসির কাছে একটি বিশেষ বার্তা পাঠানো হয়, যেখানে ‘অর্থের নগদায়ন বন্ধ ও ব্যাংক হিসাব জব্দ’ করার অনুরোধ করা হয়েছিল। ওই বার্তা হাতে পাওয়ার দিনই আরসিবিসির জুপিটার শাখার চার ব্যাংক হিসাব থেকে ৫ কোটি ৮১ লাখ ৫০ হাজার মার্কিন ডলার বা বাংলাদেশি মুদ্রায় ৪৬৫ কোটি ২০ লাখ টাকার সমপরিমাণ অর্থ সরিয়ে ফেলা হয়। অথচ ওই দিন দুপুরের আগেই আরসিবিসির প্রধান কার্যালয়ের নিকাশ (সেটেলমেন্ট) বিভাগ থেকেও জুপিটার শাখায় চারটি ই-মেইলের মাধ্যমে অর্থ ফেরত আনার নির্দেশ পাঠানো হয়েছিল। অর্থ সরিয়ে নেওয়ার জন্য ব্যাংকটির অভ্যন্তরীণ তদন্তে জুপিটার শাখার ব্যবস্থাপক মায়া সান্তোস দেগুইতোকে দায়ী করা হয়েছে।

ফিলিপাইনের ইনকোয়েরার পত্রিকাটিতে ১১ মার্চ আরেকটি প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়। সেখানে বলা হয়েছে, ফিলিপাইনে আসা ৮ কোটি ১০ লাখ মার্কিন ডলারের মধ্যে ৪ কোটি ৬০ লাখ ডলার রিজাল ব্যাংক হয়ে দেশটির ক্যাসিনোতে (জুয়া খেলার স্থান) ঢুকেছে। দেশটির বিনোদনকেন্দ্র ও ক্যাসিনো নিয়ন্ত্রণকারী রাষ্ট্রীয় সংস্থা ফিলিপাইন অ্যামিউজমেন্ট গেমিং করপোরেশনের (পিএজিসিওআর) এক কর্মকর্তার একটি বক্তব্য প্রতিবেদনে যুক্ত করা হয়েছে। সেখানে ওই কর্মকর্তা বলেছেন, ২০ দিন ধরে ওই অর্থ সেখানেই ছিল, জুয়ার টেবিলে ব্যবহার হয়েছে। মনে হচ্ছিল সবকিছুই স্বাভাবিক। অস্বাভাবিক কিছুই ছিল না সেখানে। যখন ইনকোয়েরার পত্রিকায় প্রথম প্রতিবেদন হলো, তারপরই কর্তৃপক্ষ নড়েচড়ে বসল।




Comments are closed.



পুরানো সংবাদ সংগ্রহ

সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি রবি
 
১০১১
১২১৩১৪১৫১৬১৭১৮
১৯২০২১২২২৩২৪২৫
২৬২৭২৮২৯৩০৩১  
All rights reserved © shirshobindu.com 2012-2025