দীন ইসলাম: ২২শে মার্চ হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের নিরাপত্তার দায়িত্ব নেবে ব্রিটিশ কোম্পানি রেডলাইন অ্যান্ড কন্ট্রোল রিস্ক। সে অনুযায়ী সব ধরনের প্রস্তুতি চূড়ান্ত করেছে বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়। আজ বেলা তিনটায় অর্থনৈতিক বিষয়-সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির জরুরি বৈঠক ডাকা হয়েছে। উদ্দেশ্য- সরাসরি ক্রয় প্রক্রিয়ার মাধ্যমে রেডলাইন-এর টেকনিক্যাল প্রস্তাব অনুমোদন করা।
এরপর বেলা সাড়ে তিনটায় অনুষ্ঠিত হবে সরকারি ক্রয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির বৈঠক। দুটি বৈঠকেরই এজেন্ডা একটি। বেসামরিক বিমান পরিবহন মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, মন্ত্রিসভা কমিটির অনুমোদনের পর ২১শে মার্চ ব্রিটিশ কোম্পানির সঙ্গে চুক্তি করবে সরকার। এরপর দিন দায়িত্ব নেবে ওই ব্রিটিশ কোম্পানি। এসব বিষয় ঠিকভাবে দেখভাল করতে গতকাল ছুটির দিনে বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের আন্তঃমন্ত্রণালয় বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়।
ওই বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটনমন্ত্রী রাশেদ খান মেনন। সভা শেষে তিনি জানান, ২২শে মার্চের মধ্যেই ব্রিটিশ কোম্পানিকে দায়িত্ব দেয়ার আনুষ্ঠানিকতা শেষ হবে। এর আগে আইনি প্রক্রিয়া এবং ক্রয়-সংক্রান্ত নিয়ম-কানুন শেষে যুক্তরাজ্যের দেয়া সময়সীমা শেষ হওয়ার আগেই সব চূড়ান্ত হবে বলে আশা করছি।
ওইভাবেই প্রস্তুতি চলছে জোরালোভাবে। এর আগে বিমানবন্দরের নিরাপত্তায় গঠিত স্টিয়ারিং কমিটির বৈঠকে তিনটি ব্রিটিশ কোম্পানি রেডলাইন অ্যান্ড কন্ট্রোল রিস্ক, ওয়েস্ট মিনিস্টার গ্রুপ ও রেস্ট্রাটা পিলগ্রিমস গ্রুপ অ্যান্ড অ্যাডাম স্মিথ ইন্টারন্যাশনালকে তালিকাভুক্ত করা হয়। মার্কিন নিরাপত্তা সংস্থা ও বিভিন্ন বিমানবন্দরের নিরাপত্তার তারা কাজ করছে।
বিমান মন্ত্রণালয়ের এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা জানান, রেডলাইন অ্যান্ড কন্ট্রোল রিস্ককে শাহজালাল বিমানবন্দরের নিরাপত্তার দায়িত্ব দেয়ার বিষয়টি চূড়ান্ত। ওইভাবেই মন্ত্রিসভা কমিটির জন্য সার সংক্ষেপ তৈরি করেছে মন্ত্রণালয়। চুক্তির পর ব্রিটিশ কোম্পানির সঙ্গে যৌথভাবে কাজ করবে বাংলাদেশের নিরাপত্তা সংস্থাগুলো। এদিকে শাহজালাল বিমানবন্দরের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য ৩১শে মার্চের মধ্যে যুক্তরাজ্যের দেয়া কর্মপরিকল্পনা বাস্তবায়ন শুরুর বিষয়ে অনড় অবস্থানে রয়েছে দেশটি। সরকাররের ঊর্ধ্বতনদের সঙ্গে বৈঠকে ব্রিটিশ হাইকমিশনার অ্যালিসন গেল এ বার্তা পৌঁছে দিয়েছেন।
এরপরই বিষয়টি নিয়ে তাড়াহুড়ো করছে বিমান মন্ত্রণালয়। এর আগে গত ৮ই মার্চ ঢাকা থেকে যুক্তরাজ্যে সরাসরি কার্গো ফ্লাইট চলাচল বন্ধ করে দেয় যুক্তরাজ্য। ওইদিন দেশটির ডিপার্টমেন্ট অব ট্রান্সপোর্টের বাংলাদেশ
এয়ারপোর্ট আপডেট শীর্ষক এক বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ঢাকা আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের নিরাপত্তা পরিস্থিতির সাম্প্রতিক মূল্যায়নে দেখা গেছে, আন্তর্জাতিক নিরাপত্তার জন্য প্রয়োজনীয় কিছু বিষয় পূর্ণ করা হয়নি। অন্তবর্তীকালীন পদক্ষেপের অংশ হিসেবে পরবর্তী নির্দেশনা না দেয়া পর্যন্ত ঢাকা থেকে সরাসরি ফ্লাইটে যুক্তরাজ্যে কার্গো পরিবহন করতে দেয়া হবে না। এ নিষেধাজ্ঞার আগে গত বছর ডিসেম্বরে অস্ট্রেলিয়াও বাংলাদেশ থেকে সরাসরি কার্গো ফ্লাইট নিষিদ্ধ করা হয়। যা এখনও বলবৎ আছে।
এদিকে গেল সপ্তাহে ঢাকার ব্রিটিশ হাইকমিশনারের নেতৃত্বে সরকারের উচ্চপর্যায়ের এক সভায় নিরাপত্তা ব্যবস্থা উন্নয়ন ও কার্গো কমপ্লেক্সকে ঢেলে সাজাতে শর্টটার্ম, মিডটার্ম ও লংটার্ম পর্যবেক্ষণ দেয় ব্রিটিশ প্রতিনিধি দল। তাদের প্রস্তাবনার আলোকে সরকারের পক্ষ থেকে সাত সদস্যবিশিষ্ট একটি স্টিয়ারিং কমিটি গঠনের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটনমন্ত্রী এ কমিটির চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করছেন। গতকাল কমিটির সঙ্গে একটি রিভিউ বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে। আজ বিকালের মধ্যে সব আনুষ্ঠানিকতা শেষে চুক্তি হবে বলে আশা করছে বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়।