শীর্ষবিন্দু আন্তর্জাতিক নিউজ ডেস্ক: ইতালির এক শহরে মুসলিম, হিন্দু ও খ্রিষ্টান ধর্মাবলম্বী কয়েকজন শরণার্থীর পা ধুয়ে দিলেন পোপ ফ্রাঁসিস। এ সময় তাদের পায়ে চুম্বনও করেন ক্যাথলিক খ্রিষ্টানদের সর্বোচ্চ এই ধর্মীয় নেতা। শরণার্থী সবাইকে একই ঈশ্বরের সন্তান বলে অভিহিত করেন তিনি। ব্রাসেলস হামলার পর বিশ্বব্যাপী মুসলিমবিরোধী যে প্রবণতা সৃষ্টি হয়েছে, তার মধ্যে পোপের এই উদার আচরণ ভ্রাতৃত্বের বার্তা নিয়ে এসেছে বলে মনে করছেন অনেকে।
ফিলিপাইনের স্টার পত্রিকায় প্রকাশিত এক খবরে বলা হয়, বৃহস্পতিবার ইতালির রাজধানী রোমের নিকটবর্তী শহরতলি ক্যাসতেলনুয়োভো ডি পোর্তোতে এক শরণার্থী শিবিরে ইস্টার সপ্তাহ উপলক্ষে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে এমনটি করেছেন পোপ ফঁ্রাসিস। ক্রুশবিদ্ধ হওয়ার আগে যিশু খ্রিষ্ট সেবার নজির রাখতে তার দূতদের পা ধুয়ে দিয়েছিলেন। সেই আচারেরই পুনরাবৃত্তি ঘটেছে রোমের ওই শহরতলিতে। ব্রাসেলস হামলার মাধ্যমে যে হত্যালীলা চলেছে, তার বিপরীতেই পোপ সেবার এ দৃষ্টান্তকে দাঁড় করিয়েছেন।
এ সময় পোপ বলেন, রক্তপিপাসুদের এই হামলা যুদ্ধের শামিল। যারা ব্রাসেলস হামলার সঙ্গে জড়িত, তারা মানুষের মধ্যে থেকে ভ্রাতৃত্বের বন্ধন নষ্ট করতে চায়। শরণার্থী শিবিরে জড়ো হওয়া মানুষগুলো মানবিক ভ্রাতৃত্বের উদাহরণ উল্লেখ করে পোপ বলেন, ‘আমাদের আলাদা আলাদা ধর্ম ও সংস্কৃতি রয়েছে। কিন্তু আমরা সবাই ভাই ভাই এবং সবাই শান্তিতে বাস করতে চাই।’ পোপের এমন বক্তব্যের পর অনেক শরণার্থীই কান্নায় ভেঙে পড়েন।
এরপর পোপ তাদের সবার সামনে হাঁটু গেড়ে বসেন এবং পিতলের কলস থেকে পানি ঢেলে তাদের পা ধুয়ে দিয়ে মুছে দেন এবং তাদের পায়ে চুম্বন করেন। ফঁ্রাসিসের আগমন উপলক্ষে বিভিন্ন ভাষায় ‘স্বাগতম’ লেখা ব্যানার টানানো হয় শরণার্থী শিবিরজুড়ে। ওই শিবিরে ৮৯২ জন শরণার্থীর সবাই অবশ্য ইস্টারের ওই অনুষ্ঠানে যোগ দেননি। তবে যারা উপস্থিত ছিলেন, পোপ পরে তাদের প্রত্যেকের সঙ্গে শুভেচ্ছা বিনিময় করেন। তাদের অনেকের সঙ্গে সেলফিও তোলেন পোপ। পা ধুয়ে দেয়ার এই আচার ভ্যাটিক্যানের পক্ষ থেকে দীর্ঘদিন ধরেই পালন করে আসা হচ্ছে। তবে যিশুর ১২ সঙ্গীর কথা মাথায় রেখে পোপ ফঁরাসিসের দায়িত্ব গ্রহণের পূর্ব পর্যন্ত কেবল ১২ জন ক্যাথলিক পুরুষের পা ধুয়ে দিতেন পোপরা।
২০১৩ সালে পোপ ফ্রাঁসিস পোপের দায়িত্ব গ্রহণের পর এক অনুষ্ঠানে পুরুষের পাশাপাশি নারীদের পা-ও ধুয়ে দেন। আর কেবল ক্যাথলিক নয়, মুসলিমদের ক্ষেত্রেও তিনি এ ধর্মীয় আচার চালু করেন। ভ্যাটিক্যানের পক্ষ থেকে বলা হয়, বৃহস্পতিবারের অনুষ্ঠানে পোপ আটজন পুরুষের পাশাপাশি চারজন নারীর পা ধুয়ে দেন। পুরুষদের মধ্যে চারজন ছিলেন নাইজেরিয়ার ক্যাথলিক; তিনজন ছিলেন মালি, সিরিয়া ও পাকিস্তানের মুসলিম ও ভারতের একজন হিন্দু।
অনুষ্ঠানে পোপ স্পষ্টভাবেই বলেন, ‘মুসলিম, হিন্দু, ক্যাথলিক, প্রোটেস্ট্যান্ট বা যে কোনো ধর্মই হোক না কেন, সব ধর্মের অনুসারীরাই এক। আমরা সবাই ভাই ভাই, একই ঈশ্বরের সন্তান। আমরা সবাই মিলে একসঙ্গে শান্তিতে বাঁচতে চাই।’