শীর্ষবিন্দু আন্তর্জাতিক নিউজ ডেস্ক: রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন পানামা পেপার্স কেলেঙ্কারিতে তার নাম আসার প্রতি ইঙ্গিত করে কোনো ধরনের দুর্নীতির সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করেছেন। পানামা পেপার্স ফাঁস হয়ে যাওয়ার পর বিশ্বজুড়ে হইচই শুরু হওয়ার প্রেক্ষাপটে প্রথমবারের মতো এ ব্যাপারে মুখ খুললেন রুশ প্রেসিডেন্ট।
তিনি পাল্টা অভিযোগ করেন, তার প্রতিপক্ষরা রাশিয়াকে অস্থিতিশীল করার চেষ্টা করছে। পানামার একটি ল’ ফার্মের ফাঁস হয়ে যাওয়া গোপন নথিতে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের ঘনিষ্ঠ কয়েকজন সহযোগী একটি সন্দেহজনক অর্থ পাচারকারী চক্রের সঙ্গে জড়িত বলে প্রকাশ পায়।
বিবিসির এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এসব নথিতে বিলিয়ন ডলার পাচারের একটি চক্রের সন্ধান মিলেছে, যা পরিচালিত হয় রুশ মালিকানাধীন ব্যাংক রোশিয়ার মাধ্যমে।
রাশিয়া ক্রাইমিয়াকে নিজেদের অংশ করে নেওয়ার পর ব্যাংক রোশিয়া নামের ওই ব্যাংকের উপর নিষেধাজ্ঞা জারি করে যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় ইউনিয়ন। বিদেশি কোম্পনিগুলোর মাধ্যমে ব্যাংকটি কীভাবে অর্থ পাচার করে আসছিল তা ফাঁস হওয়া নথির মাধ্যমেই প্রথম জানা যাচ্ছে।
তাতে দেখা যায় সোনেত্তি ওভারসিস, ইন্টারন্যাশনাল মিডিয়া ওভারসিস, সানবার্ন এবং স্যান্ডালউড কন্টিনেন্টাল ভুয়া শেয়ার হস্তান্তর, মিথ্যা পরামর্শক চুক্তি, অবাণিজ্যিক ঋণ এবং অবমূল্যায়িত সম্পত্তি কেনার মাধ্যমে কীভাবে লাভবান হয়েছে।
নথিতে দেখা যায়, রুশ প্রেসিডেন্টের অন্যতম ঘনিষ্ঠ এক বন্ধু সের্গেই রোলদুগিন ইন্টারন্যাশনাল মিডিয়া ওভারসিস এবং সোনেত্তি ওভারসিস -এর মালিক।
কোনো ধরনের দুর্নীতির সঙ্গে নিজের জড়িত থাকার বিষয়টি প্রত্যাখ্যান করে টেলিভিশনে সরাসরি সম্প্রচারিত এক অনুষ্ঠানে পুতিন বলেন, রাশিয়ার পশ্চিমা প্রতিপক্ষরা রুশদের সংহতি ও ঐক্য দেখে অস্বস্থি বোধ করছে। আর এ কারণেই তারা আমাদের বাধ্য করার চেষ্টা চালাচ্ছে। তিনি আরো বলেন, তারা পানামা পেপার্সে পুতিনের নাম খুঁজে পায়নি। তারা তথ্যের একটি পণ্য তৈরি করেছে।
তারা আমার কয়েকজন পরিচিত এবং বন্ধুর নাম পেয়েছে আর সেটা ধরেই তারা জড়ানোর চেষ্টা করেছে। পুতিন উইকিলিকসের ট্যুইটের প্রসঙ্গ টানেন। সেখানে অভিযোগ করা হয়েছে, যুক্তরাষ্ট্র সরকারের দি অর্গানাইজড ক্রাইম অ্যান্ড করাপশন রিপোর্টিং প্রজেক্ট (ওসিসিআরপি) এবং ইউএসএইড প্রতিষ্ঠান দুটি পুতিনকে আক্রমণ করার জন্য পানামা পেপার্স তৈরি ও অর্থায়ন করেছে।
অভিযোগের ব্যাপারে রোলদুগিন প্রকাশ্যে কোনো মন্তব্য করেননি। পুতিনও রোলদুগিন কিংবা রাশিয়ার অফশোর কোম্পানির মালিকদের সম্পর্কে বিস্তারিত কিছু বলেননি। কিন্তু তিনি তার বন্ধুর প্রশংসা করেছেন।
তিনি বলেন, রোলদুগিনের মতো মানুষদের জন্য তিনি গর্বিত। তিনি তার আয়ের প্রায় সবটুকুই বাদ্যযন্ত্র কেনা এবং রাষ্ট্রীয় অন্যান্য প্রতিষ্ঠানে দান করেছেন। সংগীত বাদন দলের চেলো বাদক রোলদুগিন কিশোর বয়স থেকেই পুতিনের পরিচিত, প্রেসিডেন্ট পুতিনের কন্যা মারিয়ার ধর্মপিতাও তিনি।
নথি অনুযায়ী সন্দেহের আবর্তে ভরা ওই চুক্তিগুলো থেকে রোলদুগিন ব্যক্তিগতভাবে কোটি কোটি ডলার লাভ করেছেন। চেলো বাদক রোলদুগিন এর আগে সাংবাদিকদের কাছে তিনি ব্যবসায়ী নন বলে দাবি করেছিলেন। বিদেশি কোম্পানির সঙ্গে জটিল ওই চুক্তিগুলোর সঙ্গে তার জড়িত থাকার বিষয়টি সন্দেহ এমন বাড়িয়ে তুলছে যে, তিনি হয়তো শুধুমাত্র অন্য কারো প্রতিনিধিত্ব করছেন।
ইন্টারন্যাশনাল মিডিয়া ওভারসিস তিনটি ব্যাংক অ্যাকাউন্ট খোলার সময় রোলদুগিনের সঙ্গে রুশ প্রেসিডেন্টের সম্পর্কের বিষয়টিও গোপন করে। প্রতিটি একাউন্টের আবেদনপত্রে জিজ্ঞেস করা হয়েছিল রোলদুগিনের সঙ্গে রাজনৈতিকভাবে প্রভাবশালী কারো কোনো সম্পর্ক আছে কিনা? উত্তরে সে ধরনের কারো সঙ্গে তার কোনো সম্পর্ক নেই বলে বলা হয়েছে- যা নিশ্চিতভাবেই সত্য নয়।