বৃহস্পতিবার, ১৫ মে ২০২৫, ০৮:৫৩

পানামা পেপারস কেলেংকারী: বৃটিশ প্রধানমন্ত্রীর পদত্যাগ দাবি

পানামা পেপারস কেলেংকারী: বৃটিশ প্রধানমন্ত্রীর পদত্যাগ দাবি

শীর্ষবিন্দু নিউজ ডেস্ক: পদত্যাগের চাপে রয়েছেন ব্রিটিশ প্রধানমনন্ত্রী ডেভিড ক্যামেরন। পৈতৃক সম্পত্তি হিসেবে অফশোর কোম্পানির মালিকানা পেয়েছিলেন এমন স্বীকারোক্তির পর তার পদত্যাগ দাবি করেছেন বিরোধীরা। লেবার পার্টির শ্যাডো চ্যান্সেলর ডোনেল বলেছেন, ক্যামেরন তার বিশ্বাস হারিয়েছেন। শুক্রবার প্রকাশিত এক জরিপে ক্যামেরনের প্রতি সমর্থনও কমেছে।

অফসোর বিনিয়োগ থেকে সুবিধা পাওয়ার কথা স্বীকার করার পর বৃটিশ প্রধানমন্ত্রী ডেভিড ক্যামেরনের পদত্যাগ দাবি করা হয়েছে। এ দাবি তুলেছেন লেবার দলের এমপি জন মান। তাকে সমর্থন করেছেন লিবারেল ডেমোক্রেট দলের নেতা টিম ফ্যারোন। একই সঙ্গে সরকারের অন্য মন্ত্রীদের আয়কর রিটার্ন প্রকাশ করার আহ্বান জানিয়েছেন লেবার দলের এমপিরা।

আলোচিত পানামা পেপারস কেলেংকারিতে বিশ্বের অনেক দেশের রাষ্ট্রপ্রধান ও ক্ষমতাধররা টালমাটাল অবস্থায় পড়েছেন। এর প্রথম শিকার হয়েছেন আইসল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী সিগমুন্ড গুনলাগসন। কর ফাঁকি দিয়ে বিদেশে ব্যবসা করার গোপন তথ্য ফাঁসের পর পদত্যাগ করেছিলেন তিনি। আর ক্যামেরন দ্বিতীয় শিকার (রাষ্ট্রপ্রধান) হতে যাচ্ছেন বলে ধারণা করা হচ্ছে।

এদিকে এই কেলেংকারির জেরে আর্জেন্টিনার প্রেসিডেন্টের বিরুদ্ধে বিক্ষোভে নেমেছে দেশটির নাগরিকরা। অন্যদিকে, পানামার ওই বিতর্কিত আইনি প্রতিষ্ঠান মোসাক ফনসেকার সঙ্গে চীন সরকারের যোগাযোগ ছিল বলে তথ্য বেরিয়েছে। এর আগে চীনের কমিউনিস্ট পার্টির শীর্ষস্থানীয় আট নেতার নিকটাত্মীয়দের ট্যাক্স ফাঁকি দিয়ে অফশোর কোম্পানি করার কথা জানানো হয়েছিল। খবর গার্ডিয়ান, এএফপি ও রয়টার্সের।

পানামার আইনি পরামর্শক প্রতিষ্ঠান মোসাক ফনসেকার ১ কোটি ১৫ লাখ গোপন নথি ফাঁসের পর বিশ্বজুড়ে ব্যাপক তোলপাড় সৃষ্টি হয়েছে। রাজনৈতিক চাপের মুখে পড়েছেন অর্থ পাচারকারী রাষ্ট্রপ্রধান ও ক্ষমতাবানরা। এ নথি ফাঁসের পর বিশ্বের ২০০টিরও বেশি দেশের প্রভাবশালী ব্যক্তিত্ব, ৭২ জন বর্তমান ও সাবেক রাষ্ট্রপ্রধান, কয়েকশ’ রাজনীতিক, ব্যবসায়ী, সেলিব্রেটি আর নামিদামি ক্রীড়া ব্যক্তিত্বের গোমর ফাঁস হয়ে গেছে। এসব প্রভাশালীর সম্পদ আড়াল, ট্যাক্স ফাঁকি আর অর্থ পাচারের খবর বিশ্বের সামনে উন্মুক্ত হয়ে পড়েছে।

এ তালিকায় উঠে আসে ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী ডেভিড ক্যামেরনের বাবার নাম। এ নিয়ে প্রাথমিক সমালোচনার মুখে ক্যামেরন বলেছিলেন, বাবার অফশোর কোম্পানিতে তার পরিবার কোনো সুবিধা পায়নি। কিন্তু ঘটনার তিন দিন পর বৃহস্পতিবার ক্যামেরন স্বীকার করেছেন, তিনি ও তার স্ত্রী সামান্থা ক্যামেরন তার বাবা ইয়ান ক্যামেরনের অফশোর ট্রাস্টের শেয়ারের মালিকানা পেয়েছিলেন।

তবে ক্যামেরনের দাবি, প্রধানমন্ত্রী হওয়ার আগেই তিনি ওই অংশীদারিত্ব বিক্রি করে দিয়েছেন এবং লভ্যাংশের ওপর যুক্তরাজ্যের নিয়ম অনুযায়ী আয়করও দিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘সামান্থা (ক্যামেরনের স্ত্রী) ও আমার একটি যৌথ হিসাব ছিল যেখানে ব্লেয়ারমোর ইনভেস্টমেন্ট ট্রাস্টের ৫ হাজার শেয়ার ছিল। ওগুলো আমরা ২০১০-এর জানুয়ারিতে ৩০ হাজার পাউন্ডের কাছাকাছি দামে বিক্রি করে দেই। লভ্যাংশ থেকে আমি করও পরিশোধ করেছি।

তবে এ লাভ মূলধনী করের সীমার মধ্যে না পড়ায় আমি স্বাভাবিক নিয়মেই কর পরিশোধ করি।’ গার্ডিয়ান জানিয়েছে, ব্রিটেনের বিরোধী দলগুলো ক্যামেরনের ব্যাখ্যায় সন্তুষ্ট নয়। লেবার পার্টি, স্কটিশ ন্যাশনাল পার্টি ও গ্রিন পার্টি ক্যামেরনের পুরো আর্থিক বিবরণী প্রকাশের দাবি জানিয়েছে। হাউস অব কমন্সে উপস্থিত হয়ে ব্যাখ্যা দেয়ার দাবি করেছে তারা। শুক্রবার সকাল থেকে ট্ইুটারে ‘রিজাইন ক্যামেরন’ (পদত্যাগ কর ক্যামেরন) হ্যাশটাগ ট্রেন্ডস বেড়েছে।

এমপি জন মান প্রধানমন্ত্রীকে পদত্যাগ করার আহ্বান জানিয়ে বলেছে, তিনি পার্লামেন্টের স্থায়ী কমিশনার ক্যাথরিন হাডসনকে বলবেন ক্যামেরনের বিষয়টি পরীক্ষা করে দেখতে যে, তিনি তার শেয়ার থেকে যে সুবিধা তিনি পেয়েছেন তা তিনি হাউস অব কমন্সের রেজিস্টারে প্রকাশ করেছেন কিনা। ওদিকে ডেভিড ক্যামেরন দেশবাসীকে ভুলপথে পরিচালিত করেছেন বলে অভিযোগ করেছেন লেবার দল নেতা জেরেমি করবিন।

তিনি আরও বলেছেন, প্রধানমন্ত্রী মানুষের আস্থা হারিয়েছেন। অনলাইন দ্য ইন্ডিপেন্ডেন্ট বলেছে, প্রধানমন্ত্রীর পদত্যাগ দাবিতে ১০ ডাউনিং স্ট্রিটের সামনে সমবেত হবে কয়েক হাজার মানুষ। তবে ডাউনিং স্ট্রিটের এক মুখপাত্র বলেছেন, প্রধানমন্ত্রীর সব তথ্য রেকর্ডভুক্ত করা আছে আইন অনুসারে। তার জবাবে এমপি জন মান বলেন, এতন কোন পদক্ষেপ দিয়ে প্রমাণ করা যাবে না যে, তিনি আইন মেনে চলেছেন। পানামা পেপারস বিস্ফোরণের পরেই কেবল ডেভিড ক্যামেরন অফসোর বিনিয়োগ থেকে সুবিধা নেয়ার কথা স্বীকার করতে বাধ্য হয়েছেন। এ সম্পদের কথা তিনি রেজিস্টারে দেখান নি।

জন মানকে সমর্থন করে লিবারেল ডেমোক্রেট নেতা টিম ফারোন বলেন, ডেভিড ক্যামেরন নৈতিকতা বিবর্জিত করা করেছেন। এ বিষয়ে তদন্ত হওয়া উচিত। এ বিষয়ে সোমবার পার্লামেন্টে প্রধানমন্ত্রী ডেভিড ক্যামেরন একটি বিবৃতি দেবেন বলে দাবি করেন লেবার নেতারা। উল্লেখ্য, বৃহস্পতিবার ডেভিড ক্যামেরণ স্বীকার করেন, বাহামাভিত্তিক ব্লেয়ারমোর হোল্ডিংসে থাকা তার শেয়ার তিনি বিক্রি করেছেন ১৯ হাজার পাউন্ড। এর পর থেকে বৃটেনের রাজনীতিতে তোলপাড় চলছে। তার বিরুদ্ধে চলছে পার্লামেন্টের তদন্ত।

তবে শ্যাডো চ্যান্সেলরের মতে, পদত্যাগ এ মুহূর্তে বিবেচ্য না। কিন্তু একজন প্রধানমন্ত্রী তার বিশ্বাস হারিয়ে ফেলেছেন। কারণ তিনি বিতর্কের সোজাসাপ্টা উত্তর দিতে পারেননি। লুকোচুরি করেছেন। এসএনপি নেতা নিকোলো স্টারজিওনের মতে, প্রধানমন্ত্রী জনগণের বিশ্বাসের সঙ্গে প্রতারণা করেছেন।

এ ছাড়া এক জরিপে ক্যামেরনের প্রতি জনসমর্থন ৩৪ শতাংশে নেমে এসেছে। পানামা পেপারস প্রকাশ হওয়ার পর এ জরিপ করেছে ইউগভ নামের একটি সংস্থা। ফেব্রুয়ারিতে এমন একটি জরিপে ক্যামেরনের প্রতি জনসমর্থন ছিল ৩৯ শতাংশ। অন্যদিকে লেবার পার্টির নেতা জেরেমি করবিনের জনপ্রিয়তা ২৫ শতাংশ থেকে বেড়ে ৩০ শতাংশ হয়েছে।

বিবিসি জানিয়েছে, আগামী সপ্তাহের মধ্যে বার্ষিক আয়কর বিবরণী প্রকাশ করতে পারেন ক্যামেরন। ক্যামেরনের বক্তব্যের পর পরে ১০নং ডাইনিং স্ট্রিট এক বিবৃতিতে জানায়, ক্যামেরন ও তার স্ত্রী ব্লেয়ারমোর হোল্ডিংসের ওইসব শেয়ার ১৯৯৭ সালের এপ্রিলে ১২ হাজার ৪৯৭ পাউন্ডে ক্রয় করেন এবং ২০১০-এর জানুয়ারিতে ৩১ হাজার ৫শ’ পাউন্ডে বিক্রি করে দেন। ক্যামেরনের বাবা ইয়ান ‘ব্লেয়ারমোর হোল্ডিংস’ নামে একটি অফশোর কোম্পানির পরিচালক ছিলেন এবং মিটিংয়ে অংশ নিতে মাঝেমধ্যেই বাহামা কিংবা সুইজারল্যান্ডে যেতে হতো বলে মোসাক ফনসেকার ফাঁস হওয়া বেশ কয়েকটি নথিতে জানা গেছে।

কোম্পানিটি ২০০৬ সাল পর্যন্ত বেয়ারার শেয়ার দিয়ে মক্কেলের গোপনীয়তা নিশ্চিত করত বলেও নথিগুলোর বরাত দিয়ে বিবিসি জানিয়েছে। পরদিন আইটিভি নিউজকে ক্যামেরন মোসাক ফনসেকার তথ্য ফাঁসের পর তার বাবা ও পরিবারকে নিয়ে সমালোচনার জবাব দেন। তিনি বলেন, ‘মৌলিক ভুল ধারণা’ থেকে সমালোচনাগুলো করা হচ্ছে, যেখানে মনে করা হচ্ছে, ব্লেয়ারমোর হোল্ডিংস কর ফাঁকি দেয়ার জন্যই বানানো হয়েছিল।’ ক্যামেরন বলেন, বিষয়টি মোটেও তা নয় বরং এটি তৈরি হয়েছিল একটি এক্সচেঞ্জ কন্ট্রোল হিসেবে। লক্ষ্য ছিল, যারা এসব ক্ষেত্রে বিনিয়োগ করতে চায় তারা যেন সেটি করতে পারে।

মোসাক ফনসেকার মাধ্যমে দেশের বাইরে ভুয়া প্রতিষ্ঠান বানিয়ে যারা অর্থ গচ্ছিত রেখেছেন, তাদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলেন দেং জিয়াগুই। প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের বড় বোনের স্বামী তিনি। রাষ্ট্র পরিচালনার শীর্ষ পর্ষদ পলিটব্যুরোর আরও সাত সদস্যের আত্মীয়ের নামও উঠে এসেছে ফাঁস হওয়া পানামা পেপারসে।

পানামা কেলেংকারিতে জড়িত থাইল্যান্ডের ২১ নাগরিক : ফাঁস হওয়া পানামা পেপারস কেলেংকারিতে থাইল্যান্ডের ২১ নাগরিকের নাম পাওয়া গেছে। এর মধ্যে ১৬ জনকে চিহ্নিত করা গেছে। এদের মধ্যে কয়েকজন রাজনীতিবিদ ও ব্যবসায়ী। দেশটির অর্থ পাচার প্রতিরোধ কার্যালয় (এএমএলও) শুক্রবার এ তথ্য জানিয়েছে।

শুক্রবার বার্তা সংস্থা এএফপি জানায়, ২০০০ সালে প্রথম চীনে অফিস খুলেছিল মোসাক ফনসেকা। একে একে সেখানে ১১টি শাখা অফিস হয়। তবে বর্তমানে চীনে ফনসেকার ৮টি অফিস রয়েছে। এর মধ্যে একটি হংকংয়ে। জানা গেছে, অফিস প্রতিষ্ঠার পর চীনে বিনিয়োগ কনফারেন্সের আয়োজন করতে ফনসেকা। প্রথমদিকে বিদেশে ব্যবসার জন্য চীনা সরকার ও কোম্পানিগুলোকে ফ্রি আইনি সেবা ও পরামর্শ দিত মোসাক ফনসেকা।

২০১৪ সালে বিদেশে ব্যবসাবিষয়ক প্রতিনিধি সম্মেলনে মোসাক ফনসেকাকে আমন্ত্রণ জানিয়েছিল চীন সরকার। পরে এই মোসাক ফনসেকাই হয়ে ওঠে কর ফাঁকি দিয়ে নামে-বেনামে কোম্পানি খুলে ব্যবসা করা ও অর্থ পাচারের কূট বুদ্ধিদাতা। আর এতে জড়িয়ে পড়েন চীনের কমিউনিস্ট পার্টির শীর্ষ নেতারা। তারা নিজেরা না করে আত্মীয় ও ঘনিষ্ঠজনদের দিয়ে বিভিন্ন ভুয়া কোম্পানি খুলে অর্থ পাচার করতে শুরু করেন।




Comments are closed.



পুরানো সংবাদ সংগ্রহ

সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি রবি
 
১০১১
১২১৩১৪১৫১৬১৭১৮
১৯২০২১২২২৩২৪২৫
২৬২৭২৮২৯৩০৩১  
All rights reserved © shirshobindu.com 2012-2025