সোমবার, ১২ মে ২০২৫, ১২:২৯

সিলেটে রহস্যময় মার্সিডিজ বেঞ্জের খোঁজে গোয়েন্দারা

সিলেটে রহস্যময় মার্সিডিজ বেঞ্জের খোঁজে গোয়েন্দারা

ওয়েছ খছরু: সিলেটে দুই কোটি টাকা মূল্যের ‘মার্সিডিজ বেঞ্জ’ গাড়ি নিয়ে কৌতূহলের অন্ত নেই। শুল্ক গোয়েন্দাদের অভিযানের আগেই হঠাৎ হাওয়া হয়ে গেল গাড়িটি। কোথায় গেল, কিভাবে গেল এবং কারাইবা নিয়ে গেল এসব প্রশ্নে অবাক হয়েছেন খোদ গোয়েন্দারাই। তবে গাড়ির পিছু ছাড়ছেন না তারা। গতকাল সকাল থেকে আলোচিত ওই গাড়ির খোঁজে সিলেটে চলছে অভিযান।

ভিযানে শুধু শুল্ক গোয়েন্দারাই নয়, সিলেটের র্যাব ও পুলিশের একাধিক টিম গাড়ির সন্ধানে নেমেছে। বিকাল পর্যন্ত গোয়েন্দারা নগরীর কমপক্ষে ৫টি সম্ভাব্য স্থানে অভিযান চালিয়েছে। কিন্তু কোথাও মিলেনি গাড়ির সন্ধান। এ কারণে বিকালে গোয়েন্দা তরফ থেকে দেশজুড়ে এ গাড়ির ছবি দিয়ে বার্তা পাঠানো হয়েছে। নজরদারি বাড়ানো হয়েছে ঢাকা-সিলেট হাইওয়ে রুটেও। প্রবাসীর শহর সিলেট। শখের গাড়ি নিয়ে তীব্র প্রতিযোগিতা চলে সিলেটে।

বিশেষ করে বৃটেনের রাস্তার গাড়িগুলো শখ করে সিলেটে নিয়ে আসেন প্রবাসীরা। আর দাপটের সঙ্গে এসব গাড়ি চালান নগরীতে। সম্প্রতি সিলেটের রাস্তায় চলাচলকারী একটি ‘মার্সিডিজ বেঞ্জ’-এ চোখ পড়ে সিলেটের শুল্ক গোয়েন্দাদের।

আর এটি নিয়ে কৌতূহল বাড়ে গোয়েন্দাদের মধ্যে। গোপন সংবাদের ভিত্তিতে বৃহস্পতিবার বিকালে আম্বরখানাস্থ বিএম টাওয়ারে গিয়ে বি-৩ ফ্ল্যাটের পার্কিংয়ে একটি ‘মার্সিডিজ বেঞ্জ’ গাড়ি (ঢাকা-৬১৪/ও) দেখতে পায় শুল্ক গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদপ্তরের একটি টিম। প্রায় দুই কোটি টাকা মূল্যের ওই গাড়ির মালিক সম্পর্কে জানতে চাইলে সেখানকার নিরাপত্তাকর্মী হায়দার মিয়া শুল্ক কর্মকর্তাদের অবগত করেন, টাওয়ারের বাসিন্দা প্রবাসী আবদুল মালেক ওই গাড়ি ব্যবহার করেন।

কয়েক মাস আগে তিনি গাড়িটি সিলেটে নিয়ে এসেছেন। নগরীতে যাতায়াতে আবদুল মালেক গাড়িটি ব্যবহার করে থাকেন। পরবর্তীতে খবর নিয়ে গোয়েন্দা টিমের সদস্যরা নিশ্চিত হন টাওয়ারের দ্বাদশ তলার বাসিন্দা প্রবাসী আবদুল মালেকই গাড়ির মালিক। এ সময় শুল্ক ফাঁকি দিয়ে আনা এবং জালিয়াতির মাধ্যমে কাস্টমস দলিলাদি প্রস্তুত করে বিআরটিএ’র রেজিস্ট্রেশন করা ওই গাড়িটির স্থিরচিত্র ও ভিডিও করে শুল্ক গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদপ্তরের টিম। এরপর তারা গাড়িটির কাগজপত্র সঠিক আছে কিনা তল্লাশি করতে যান।

এদিকে, রাতে তল্লাশির মাধ্যমে জানা যায় গাড়িটি শুল্ক ফাঁকি দিয়ে সিলেটে আনা হয়েছে।

গাড়িটির গায়ে যে নম্বর সাঁটানো সেটিও অন্য আরেকজনের নম্বর প্লেট। এ ব্যাপারে নিশ্চিত হওয়ার পর গোয়েন্দা কর্মকর্তারা ভোরেই আম্বরখানাস্থ বিএম টাওয়ারের পার্কিংয়ের সামনে গোয়েন্দা নিযুক্ত করেন। আর দুপুর ১২টার দিকে শুল্ক অধিদপ্তরের একটি টিম ও বিমানবন্দর থানার সাব-ইন্সপেক্টর মো. হানিফসহ একদল পুলিশ বিএম টাওয়ারে গেলে গাড়িটি পার্কিংয়ে পাওয়া যায়নি।

এ সময় নিরাপত্তাকর্মী হায়দার মিয়া জানান, সকালে কে বা কারা গাড়িটি নিয়ে চলে গেছে। এ সময় গোয়েন্দা আবদুল মালেকের ফ্ল্যাটে গিয়ে তাকে ও তার পরিবারের কাউকে পাওয়া যায়নি। বাসায় কেউ নেই বলে জানিয়ে দেয় কাজের লোকজন। আর পার্কিং থেকে গাড়ি চলে যাওয়ার ঘটনায় তোলপাড় শুরু হয়। টাওয়ারের নিরাপত্তাকর্মী ও ম্যানেজারকে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদ করার পর শুল্ক গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদপ্তর সিলেটর সহকারী পরিচালক প্রভাত কুমার সিংহ জানিয়েছেন, গাড়িটি আটক করার জন্য সিলেটে বিশেষ অভিযান শুরু করেছে পুলিশ।

এছাড়া দেশজুড়ে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে গাড়িটি আটকের ব্যাপারে। তিনি জানান, শুল্ক ফাঁকি দিয়ে আনা গাড়িটি আবদুল মালেক তার চালক আব্দুজ জহিরের মাধ্যমে বৃহস্পতিবার রাত সাড়ে ৯টার দিকে বিএম টাওয়ারের পার্কিং থেকে সরিয়ে নেন। তাই আবদুল মালেকের বিরুদ্ধে ফৌজদারি ও শুল্ক ফাঁকি দেয়ায় মামলা দায়ের করা হবে।

এদিকে, গাড়ি উধাও হয়ে যাওয়ার পর বিষয়টি পুলিশ, র‌্যাবসহ বেশ কয়েকটি সংস্থাকে অবগত করা হয়। এদিকে, বিকালে শুল্ক কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, গাড়ির খোঁজে বিমানবন্দর এলাকা, নগরীর সুবহানীঘাট ও সুরমা টাওয়া এবং উপশহরসহ বেশ কয়েকটি স্থানে অভিযান চালানো হয়েছে। কিন্তু গাড়ি পাওয়া যায়নি। তবে, সিলেট শহরেই গাড়িটি রয়েছে বলে দাবি করেন গোয়েন্দারা।

গাড়ির মালিক আবদুল মালেকের বাড়ি জগন্নাথপুর উপজেলায়। তিনি সিলেট শহরের একাধিক মার্কেট ও শপিং সেন্টারের ব্যবসার সঙ্গে জড়িত। গোয়েন্দারা জানান, অভিযানে তাদের সঙ্গে ওই গাড়ির চালক রয়েছে। তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করে করেই চলছে অভিযান।




Comments are closed.



পুরানো সংবাদ সংগ্রহ

সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি রবি
 
১০১১
১২১৩১৪১৫১৬১৭১৮
১৯২০২১২২২৩২৪২৫
২৬২৭২৮২৯৩০৩১  
All rights reserved © shirshobindu.com 2012-2025