বুধবার, ২১ মে ২০২৫, ০৭:০৩

বিক্রি হয়নি ২৫ ভাগ ইলিশ

বিক্রি হয়নি ২৫ ভাগ ইলিশ

হামিদ বিশ্বাস: বেশি দাম পেতে প্রায় ছয় মাস আগে থেকেই শুরু হয় ইলিশের মজুত। লক্ষ্য পহেলা বৈশাখকে কেন্দ্র করে অতিরিক্ত মুনাফা।

এবার মজুতদারদের মাথায় হাত পড়েছে। ১লা বৈশাখের আগে ইলিশ খাওয়ার ক্ষেত্রে সরকারের উচ্চপর্যায় থেকে নিরুৎসাহের বার্তা দেয়ায় ইলিশ বিক্রি অনেক কম হয়েছে।

ছাড়া বিভিন্ন পর্যায় থেকে বার্তা দেয়া হয় যে, ইলিশ পহেলা বৈশাখের সঙ্গে সম্পর্কিত কিছু না। এ কারণে বর্ষবরণের আগে অনেকে ইলিশ কিনতে আগ্রহী হননি। এতে ইলিশের বাজারও গেছে মন্দা। হিমাগারে মজুত ইলিশের অন্তত ২৫ ভাগ বিক্রি হয়নি বলে ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন।

ইলিশের জন্য বিখ্যাত যাত্রাবাড়ী মৎস্য আড়ৎ ও কাওরান বাজারের পাইকারি ইলিশ বিক্রেতাদের দেয়া তথ্য অনুযায়ী, এবারের বৈশাখে সারা দেশের ইলিশ মাছ বিক্রির টার্গেট ছিল প্রায় ২ হাজার কোটি টাকা। এর মধ্যে বিক্রি হয়েছে প্রায় ১ হাজার ৫০০ কোটি টাকা।

যাত্রাবাড়ী বুড়িগঙ্গা মৎস্য আড়তের ম্যানেজার মো. আবদুল মান্নান বলেন, যাত্রাবাড়ীতে ইলিশের বাজার খুব চাঙ্গা ছিল। কিন্তু বৈশাখের আগের রাতে হঠাৎ মাছের দাম পড়ে যায় এবং বিক্রিও অনেক কমে যায়। এতে শুধু যাত্রাবাড়ী বাজারেই প্রায় ২৫ শতাংশ ইলিশ মাছ অবিক্রিত অবস্থায় রয়ে গেছে।

কাওরান বাজারের ‘আল্লাহ্র দান ফিস’ এর প্রধান বিক্রেতা মো. সুমন জানান, বৈশাখে প্রায় ২ লাখ টাকার অবিক্রিত ইলিশ পড়ে আছে। পাইকার ও খুচরা মিলে প্রায় ৪০ লাখ টাকার ইলিশ বিক্রির টার্গেট ছিল। কিন্তু বিক্রি হয়েছে প্রায় ৩৮ লাখ টাকা। বৈশাখকে কেন্দ্র করে ৬ মাস আগে প্রায় ৩০ লাখ টাকার ইলিশ মাছ সংরক্ষণ করা হয়। আর গত ১৫ দিনে আরও ১০ লাখ টাকার ইলিশ সংগ্রহ করা হয়।

কিন্তু বর্তমান সব বিক্রি না হওয়ায় কিছুটা লোকসানে পড়েছে বলে জানান সুমন। তবে তার আশা, যে মাছ রয়ে গেছে তা দ্রুতই বড় বড় হোটেলগুলো নিয়ে যাবে। সে ক্ষেত্রে লোকসান আরও কমে আসবে। এছাড়া কাওরান বাজারে ইলিশ বিক্রির সঙ্গে জড়িত প্রায় আরও ১৩টি দোকানের একই অবস্থা। তবে সে সব দোকানের পুঁজি কম, ক্ষতিও কম। খুচরা পর্যায়ের এসব দোকানে গড়ে প্রায় ২ লাখ টাকার বিক্রির টার্গেট থাকলেও বিক্রি হয়েছে এক থেকে দেড় লাখ টাকার ইলিশ।

কাওরান বাজারে সুকুমার ও গৌতমের মালিকানাধীন ইলিশ আড়তের বিক্রেতা মো. সুজন জানান, ১১ বছরের জীবনে এই প্রথম কোন বৈশাখে লোকসান গুনেছি। এর আগে প্রতিটি বৈশাখে বিক্রির চাপের কারণে ইলিশের সংকট দেখা দিতো। কিন্তু এবার চিত্র তার উল্টো। তিনি বলেন, ২৫ লাখ টাকার ইলিশ সংরক্ষণ করা হয়েছে ৬ মাস আগে। কিন্তু ৬ লাখ টাকার ইলিশ অবিক্রিত পড়ে আছে। মাত্রাতিরিক্ত গরম ও সরকারের ঘোষণার কারণে ইলিশ মাছ বিক্রি কমে গেছে।

গত ১লা মার্চ থেকে আগামী ৩০শে এপ্রিল পর্যন্ত সারা দেশের নদীগুলোতে ইলিশ ধরার উপর নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে মৎস্য অধিদপ্তর। এখন বাজারে যে ইলিশ পাওয়া যাচ্ছে তা আগে থেকে সংরক্ষণ করে রাখা। প্রায় ৬ মাস আগ থেকে কোল্ড স্টোরে ইলিশ মাছ মজুদ করা হয়। প্রতিটি বৈশাখে ইলিশ মাছ বিক্রির অসুস্থ্য প্রতিযোগিতা হয়। এবারও তার ব্যত্যয় ঘটেনি। এবার একটা ইলিশ ১৭ হাজার টাকা বিক্রির রেকর্ড় গড়েছে।

এসব অসুস্থ্য প্রতিযোগিতার বিরোধিতা করেছেন সৎ ব্যবসায়ীরা। তারা বলছেন, এসব অসুস্থ্য প্রতিযোগিতা করে শিল্পটি ধ্বংস করা হবে। এর থেকে বের হওয়ার উপায় বের করতে হবে। যোগাযোগ করা হলে যাত্রাবাড়ি মৎস্য আড়ৎদার ব্যবসায়ী বহুমুখী সমিতি লিমিটেডের সভাপতি মো. আবু বকর সিদ্দিক বলেন, ইলিশ মাছ বিক্রিতে অসুস্থ্য প্রতিযোগিতা বন্ধ করতে হবে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ধন্যবাদ জানিয়ে তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রীর খাদ্য তালিকায় ইলিশ মাছের নাম না থাকায় অসুস্থ প্রতিযোগিতা কিছুটা কমেছে।

তবে তিনি ঘোষণাটি এক সপ্তাহ আগে দিলে ভালো হতো। তাৎক্ষণিক হওয়ায় কিছু সৎ ব্যবসায়ীও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন বলে জানান এই ব্যবসায়ী নেতা।




Comments are closed.



পুরানো সংবাদ সংগ্রহ

সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি রবি
 
১০১১
১২১৩১৪১৫১৬১৭১৮
১৯২০২১২২২৩২৪২৫
২৬২৭২৮২৯৩০৩১  
All rights reserved © shirshobindu.com 2012-2025