শীর্ষবিন্দু নিউজ ডেস্ক: বৃটেনজুড়ে গত দেড় বছরে বন্ধ হয়ে গেছে প্রায় ছয়শ’ ভারতীয়-উপমহাদেশীয় খাবারের দোকান। চলমান পরিস্থিতি অব্যাহত থাকলে বাকি খাবারের দোকানের প্রায় এক-তৃতীয়াংশই বন্ধ হয়ে যেতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন সংশ্লিষ্টরা। আর এর পিছনের কারণ হলো বৃটেনের অভিবাসন নীতি। কড়া অভিবাসন নীতির কারণে
এসব খাবারের দোকানের জন্য প্রয়োজনীয় শেফ (বাবুর্চি) ও কর্মীদের ভারত, বাংলাদেশ বা পকিস্তান থেকে নিয়ে যেতে পারছেন না মালিকরা। ফলে গ্রাহকদের দিতে পারছেন না পর্যাপ্ত সেবা, কমছে গ্রাহক। ব্যবসায়িক লোকসানের মুখে বন্ধ করে দিতে হচ্ছে দোকানগুলো। প্রভাবশালী বৃটিশ দৈনিক গার্ডিয়ানের এক প্রতিবেদনে উঠে এসেছে কারি হাউজ নামে বৃটেনজুড়ে পরিচিত এই খাতের দুর্দশাগ্রস্ত চিত্র।
আর তাতেও মূল কারণ হিসেবে দেখানো হয়েছে বৃটেনের কড়া অভিবাসন নীতিকে। বৃটিশ কারি অ্যাওয়ার্ডের প্রতিষ্ঠাতা এনাম আলী তার সঙ্গীদের নিয়ে তাদের খাতের জন্য অভিবাসন নীতিকে শিথিল করার প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছেন। তাদের পক্ষ থেকে বৃটেনের প্রধানমন্ত্রী, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ও শ্রম মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে আবেদন।
এতে ভারতীয় উপমহাদেশের দেশগুলো থেকে আসা বাবুর্চিদের জন্য এক বছরের ভিসা প্রবর্তনের আবেদন জানানো হয়েছে। এটা বাস্তবায়িত না হলে তা নির্বাচনে বৃটেনের কনজারভেটিভ পার্টির জন্য সুখকর ফলাফল বয়ে আনবে না বলে হুমকি দিয়ে রেখেছেন এনাম আলী। কেননা বর্তমান পরিস্থিতিতে বৃটেনের এশিয়া, বিশেষ করে ভারতীয় উপমহাদেশের অভিবাসীরা অত্যন্ত ক্ষুব্ধ এবং ব্যালট বাক্সে তারা এই বিষয়ে প্রতিক্রিয়াকে দেখাতে চায়।
তিনি জানান, ওই আবেদনে বলা হয়েছে, ‘আমরা কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রিত সাময়িক একটি ভিসা প্রবর্তনের জন্য আবেদন করছি যাতে করে ইউরোপীয় ইউনিয়নের বাইরের দেশ থেকে আমরা কঠোর শর্তে অভিজ্ঞ বাবুর্চি নিয়ে আসতে পারি।’ এসব বাবুর্চিকে সর্বোচ্চ এক বছরের জন্য আনা হবে এবং কাজের বাইরে অন্য কোনো সুবিধা ভোগ করার বিধান থাকবে না বলে জানানো হয়েছে আবেদনে। যুক্তরাষ্ট্র, জার্মানি ও মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোতে এমন কঠোর শর্তাধীন স্বল্পমেয়াদের ভিসার ব্যবস্থা রয়েছে বলেও জানানো হয়।
কিন্তু এই আবেদন বৃটেনের বর্তমান অভিবাসন নীতির সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়। বর্তমান অভিবাসন নীতিতে একজন বাবুর্চির বৃটেনে থাকা ও খাওয়ার খরচ বাদেই বছরে উপার্জন থাকতে হবে ২৯ হাজার পাঁচশ ৭০ পাউন্ড। কারি হাউজের মালিকরা বলছেন, এত বেশি বেতন দিয়ে বাবুর্চি নিয়ে আসার সামর্থ্য নেই তাদের।
স্ট্র্যাফোর্ডশায়ারে ফিল্ড অব বাংলাদেশি রেস্টুরেন্টারসের প্রেসিডেন্ট ইমাম উদ্দিন বলেন, বর্তমানে অনেক খাবারের দোকান বিক্রির জন্য পড়ে আছে। কিন্তু সেগুলো কেউ কিনছে না। এটা খুবই খারাপ। তারা যে সেবা দিতে চায় তা দিতে পারছে না। ফলে তাদের বিক্রির দিকে যেতে হচ্ছে এবং বন্ধ করে দিতে হচ্ছে।
এডিনবরার একটি কারি হাউজের মালিক ওয়ালি উদ্দিন জানিয়েছেন, বাবুর্চির সংকটের কারণে এখন বাবুর্চিদের বেতনও বাড়ছে। গত দুই বছরে তাদের দ্বিগুণ বেশি বেতন দিতে হয়েছে বলে জানান তিনি।
ব্রাইটনের আরেক খাবারের দোকানের মালিক অ্যালান স্পেরিং বলছেন, বাবুর্চিরা এখন স্বাধীনভাবে থাকার সুযোগ চাইছেন, যা কোনোভাবেই বাস্তবসম্মত নয়। আর এশিয়ার দেশগুলো থেকে বাবুর্চি নিয়ে আসতে পারলে নির্ভেজাল ভারতীয় ঢঙের খাবার সরবরাহ নিশ্চিত হয় এবং তাতে কর্মীরাও উৎসাহিত হয় বলে জানান তিনি।