শীর্ষবিন্দু নিউজ ডেস্ক: তাপদাহে পুড়ছে দেশ। বিশেষ করে ঢাকা, রাজশাহী, খুলনা ও রংপুর অঞ্চলের বিভিন্ন এলাকায় মৃদু থেকে তীব্র তাপপ্রবাহ চলছে গত দুই সপ্তাহের বেশি সময় ধরে। রাজশাহী ও খুলনা বিভাগের কয়েকটি পকেটে তীব্র তাপদাহ অব্যাহত রয়েছে।
শুক্রবার এ জেলায় সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয় সৈয়দপুরে ৪০.২ ডিগ্রি সেলসিয়াস। অপর দিকে সৈয়দপুরেরই কাছের অঞ্চল ডিমলায় সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে শনিবার। ডিমলায় শনিবার সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল ১৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস। সৈয়দপুরে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হলেও এখানকার নিম্ন তাপমাত্রা ছিল ২০.৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এটা আবহাওয়ার অদ্ভুত আচরণের ফল বলে মনে করছেন আবহাওয়াবিদরা।
আবহাওয়া অফিস আজ শনিবার সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত আবহাওয়ার পূর্বাভাসে জানিয়েছে, চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগের দু-এক জায়গায় অস্থায়ী দমকা অথবা ঝড়ো হাওয়াসহ বৃষ্টি অথবা বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে।
এছাড়া দেশের অন্যত্র আকাশ অস্থায়ীভাবে আংশিক মেঘলাসহ আবহাওয়া প্রধানত শুষ্ক থাকতে পারে। দিনাজপুর ও সৈয়দপুর অঞ্চলের উপর দিয়ে তীব্র তাপপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে। ঢাকা, টাঙ্গাইল, ফরিদপুর, মাদারীপুর, গোপালঞ্জ, চাঁদপুর ও রংপুর অঞ্চলসহ রাজশাহী ও খুলনা বিভাগের উপর দিয়ে মৃদু থেকে মাঝারি ধরনের তাপপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে। বিরাজমান তাপপ্রবাহ অব্যাহত থাকতে পারে। সারা দেশে দিন এবং রাতের তাপমাত্রা প্রায় অপরিবর্তিত থাকতে পারে।
আবহাওয়ার অদ্ভুত আচরণ লক্ষ্য করা যাচ্ছে রংপুর বিভাগে। সৈয়দপুরের সর্বোচ্চ তাপমাত্রার সাথে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা পার্থক্য অনেক। অন্য দিকে আজ রাজধানী ঢাকার সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল ৩৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস এবং সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ২৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এখানে সর্বোচ্চ তাপমাত্রার সাথে সর্বনিম্ন তাপমাত্রার খুব বেশি পার্থক্য নেই। আজ তীব্র তাপপ্রবাহের আওতায় ছিল দিনাজপুর, সৈয়দপুর, রাজশাহী, বগুড়া, ঈশ্বরদী অঞ্চল। এসব অঞ্চলের তাপমাত্রা ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াস অথবা এর কাছাকাছি ছিল।
বাংলাদেশের সাথে লাগোয়া ভারতের পশ্চিমবঙ্গের সাথে রাজশাহী, খুলনা ও রংপুর বিভাগে রয়েছে সীমান্ত অঞ্চল। পশ্চিমা লঘুচাপের বর্ধিতাংশ পশ্চিমবঙ্গ ও তৎসংলগ্ন এলাকায় অবস্থান করছে। পশ্চিমা লঘুচাপে আর্দ্রতা বায়ু থাকে না, অনেকটা শুষ্কতা বিরাজ করে। পশ্চিমা ওই লঘুচাপের বর্ধিতাংশ বাংলাদেশের রাজশাহী, খুলনা ও রংপুর অঞ্চলের ওপর বিরাজমান রয়েছে। এ কারণে বাংলাদেশের এ ক’টি অঞ্চলে বিরূপ আবহাওয়া। এ বিরূপ আবহাওয়ার আঁচ ঢাকা বিভাগের বেশ কিছু অঞ্চলে লাগছে।
চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগের অঞ্চলগুলো অপেক্ষাকৃত কম উষ্ণতা বিশিষ্ট। এ দুই বিভাগের তাপমাত্রা চলতি গরম মওসুমে ৩৬ ডিগ্রি সেলসিয়াসের বেশি উঠেনি। অন্যদিকে বাংলাদেশের কোথাও বৃষ্টিপাতের রেকর্ড না থাকলেও সিলেট অঞ্চলে বেশ বৃষ্টি হচ্ছে। আজ শুক্রবারও সিলেটে ১৩ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছে।
আহাওয়া অফিসের কাছে সামনের তিন দিনেও বৃষ্টি হওয়ার কোনো সুখবর নেই। তবে চলতি সপ্তাহের শেষ দিকে বৃষ্টি অথবা বজ্র বৃষ্টির সম্ভাবনা দেখছেন আবহাওয়াবিদরা।
এ দিকে বেসরকারি আবহাওয়া কেন্দ্র স্কাইমেট জানিয়েছে, আগামী ১ মে থেকে ঢাকা ও রংপুর বিভাগে হালকা বৃষ্টি হতে পারে। ৪ অথবা ৫ মে ঢাকা বিভাগে মাঝারি থেকে ভারী বৃষ্টি হতে পারে বলে জানিয়েছে। তবে আগামী ৫ মে পর্যন্ত খুলনা বিভাগে বৃষ্টির কোনো সম্ভাবনা দেখছে না স্বাইমেট। বরিশাল বিভাগে সপ্তাহের শেষে হালকা বৃষ্টি হতে পারে। চট্টগ্রাম বিভাগেও সপ্তাহের শেষের দিকে হালকা বৃষ্টি হতে পারে। সিলেট বিভাগে ২ মে’র পর থেকে ভারী বৃষ্টি হতে পারে। স্কাইমেট আগামী ২ মে থেকে রাজশাহী বিভাগে হালকা বৃষ্টির কথা জানিয়েছে।
পরিবেশবিদরা বলছেন, বিশ্বব্যাপী জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব এটি। আর বাংলাদেশ জলবায়ু পরিবর্তনের অন্যতম ক্ষতিগ্রস্ত একটি দেশ। তীব্র গরমকে ঠান্ডা করতে না আছে বাতাসের প্রবাহ না হচ্ছে বৃষ্টিপাত। আকাশে মেঘের আনাগোনাও নেই যে বৈশাখের এ প্রখর সূর্যালোককে বাধা দিয়ে ঠান্ডা রাখবে পরিবেশ। সব মিলিয়ে বৈরী আবহাওয়ার শিকার বাংলাদেশের এ অঞ্চলগুলো।