নিউজ ডেস্ক: কিশোরি বীথি আক্তারের (১২) শরীরে একাধিক সমস্যা চিহ্নিত করেছে চিকিৎসকরা। মুখে ও শরীরে লোম নিয়ে জন্মগ্রহণ করা এ কিশোরী শরীরে যন্ত্রণা নিয়ে ভর্তি হয় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালে।

চিকিৎসকরা বলছেন, তার সমস্যাগুলোকে বিশেষ কোনো রোগের মধ্যে ফেলা যাচ্ছে না। তিন ধরনের রোগের জন্য আলাদা আলাদা চিকিৎসা প্রয়োজন। তাই পৃথক মেডিকেল বোর্ড গঠন করা হয়েছে। তারা এ নিয়ে কাজ করছেন।

আগামী এক মাসের মধ্যে ইতিবাচক কিছু আশা করছেন চিকিৎসকরা। প্রথমে কিশোরীর স্তনের সার্জারি করার কথা ভাবছেন চিকিৎসকরা। এরপর লোম ও দাঁতের চিকিৎসা করা হবে। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় স্তন সার্জারির পর স্কিনের চিকিৎসার জন্য বীথিকে পাঠানো হবে সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে (সিএমএইচ)।

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যান্ডোক্রাইনোলজি (ডায়াবেটিস ও হরমোন) বিভাগের প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান অধ্যাপক মো. ফরিদ উদ্দিন বলেন,‘বীথির সমস্যাগুলোকে আমরা বিশেষ কোনো রোগের মধ্যে ফেলতে পারছি না। এগুলো হচ্ছে মাল্টিপল সিনড্রোম, কতগুলো সমস্যার সমন্বয়। তার সমস্যা একটা না। সমস্যা তিনটা। তবে এটা বলা যায় যে, সমস্যাগুলো জন্মগত। বাংলাদেশে এই ধরনের রোগী এই প্রথম দেখলাম।’

তিনি বলেন, ‘এ পর্যন্ত হরমোনের যেসব পরীক্ষা করা হয়েছে, তাতে দেখা যাচ্ছে হরমোন স্বাভাবিক রয়েছে। এছাড়া হরমোনের আরো কিছু পরীক্ষা বাকি আছে। সেগুলো হয়ে গেলে আরো কিছু বিষয় হয়তো জানা যাবে। আমরা আশা করছি আগামী এক মাসের মধ্যে একটা ভালো ফল আসবে।’

ফরিদ উদ্দিন বলেন, ‘বীথির স্কিন ও স্তনের চিকিৎসার জন্য আলাদা আলাদা মেডিকেল বোর্ড গঠন করা হয়েছে। তারা এ নিয়ে কাজ করছেন। আমরা প্রথমে তার স্তনের সার্জারি করার কথা ভাবছি। তারপর মুখের লোমের চিকিৎসা এবং সবশেষে দাঁতের চিকিৎসা করা হবে। দাঁতের চিকিৎসায় অনেকদিন সময় লাগবে। আশা করছি আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে স্তনের সার্জারি করার বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয়া হতে পারে। এই বিষয়ে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক এসে বীথিকে দেখে গেছেন। তারা সার্জারি করার ব্যাপারে সম্মতি জানিয়েছেন।’

তিনি বলেন, ‘স্তনের সার্জারির পর স্কিনের চিকিৎসার জন্য তাকে সিএমএইচ এ পাঠানো হবে। বিশেষজ্ঞরা বলেছে, লোমের সমস্যার সমাধানের জন্য লেজার থেরাপি দিতে হবে। কিন্তু আমাদের এখানে (বিএসএমএমইউ) সেই ব্যবস্থা নেই। এজন্য তাকে সিএমএইচে পাঠানো হবে। যেহেতু সে মেয়ে, অন্তত যদি তার মুখটাকে লোমমুক্ত করা যায় তাহলেও তার জন্য অনেক ভাল হবে।’

বীথির চিকিৎসাকে এগিয়ে নিতে বিএসএমএমইউ এবং চিকিৎসকরা সহযোগিতা করছে জানিয়ে তিনি আরো বলেন, ‘আমাদের গরীব দেশ, ফ্রি সবকিছু করতে গেলে একটা সিস্টেমর মধ্যে দিয়েই করতে হয়। বীথির পরীক্ষা-নিরীক্ষা বিনামূল্যে করে দেয়া হচ্ছে। ওষুধ এবং অপারেশন সংশ্লিষ্ট কিছু খরচ রয়েছে। এগুলোর জন্য কিছু টাকা জোগাড় করতে হবে।’

এ ধরনের রোগের বিষয়ে জনগণকে সতর্ক করতে এবং কুসংস্কারের দূর করতে গণমাধ্যমকে এগিয়ে আসার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, ‘দেশের আনাচে-কানাচে এমন অনেক রোগী আছেন যারা লোকলজ্জা ও কুসংস্কারের কারণে চিকিৎসকের কাছে আসে না। তাদের বলবো, এ ধরণের কোনো সমস্যা দেখা দিলে দ্রুত নিকটস্থ চিকিৎসক কিংবা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেলে এসে পরামর্শ নিন। প্রয়োজনে চিকিৎসা নিন।’

সোমবার দুপুরে হাসপাতালে গিয়ে দেখা যায়, বীথিকে পরীক্ষার জন্য নেয়া হয়েছে। পরে বেডে আনা হলে বীথি জানায়, তার কিছুটা ভাল লাগছে। স্তনের জ্বালাপোড়া কিছুটা কমেছে।

বীথির বাবা আব্দুর রাজ্জাক বলেন, ‘অপারেশন বা পরীক্ষা-নিরীক্ষার খরচ না লাগলেও অন্যান্য কিছু খরচ তো আছে। সেই টাকা কোথায় পাবেন। হাসপাতালে মেয়েকে নিয়ে থাকার কারণে তিনি তো কাজও করতে পারছেন না।’

তিনি আরো বলেন, ‘বীথির জন্ম থেকেই মুখে দাড়ি গোঁফসহ সারা শরীরে লোম ছিল। এতো কোন সমস্যা হচ্ছিল না। একবছর আগে স্তন অস্বাভাবিক আকারে বাড়তেথাকে। আর মাসখানেক আগে স্তনে জ্বালাপোড়া শুরু হয়। এর আগে সাত বছর বয়সে দাঁত পড়ে যায়। পরে আর সেই দাঁতও গজায়নি।’

গত ১৬ এপ্রিল থেকে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যান্ডোক্রাইনোলজি (ডায়াবেটিস ও হরমোন) বিভাগের ১৬ নম্বর ওয়ার্ডে অধ্যাপক মো. ফরিদ উদ্দিনের অধীনে চিকিৎসাধীন রয়েছে বীথি।

টাঙ্গাইল জেলার নাগরপুর উপজেলার জয়ভোগ গ্রামের আবদুর রাজ্জাকের তিন সন্তানের মধ্যে বড় বীথি। জয়ভোগ পাবলিক উচ্চবিদ্যালয়ের ষষ্ঠ শ্রেণির শিক্ষার্থী সে।

কোনো হৃদয়বান ব্যক্তি চাইলে ০১৭২০-৩৬৬৭৮৩ নম্বরে বিকাশ করে বীথির চিকিৎসায় সহযোগিতা করতে পারেন। MD.A.RAZZAK, হিসাব নম্বর : ০৯৪৭১০১২০৭৩৯০,পূবালী ব্যাংক লিমিটেড, শাহবাগ এভিনিউ, মডেল থানা- এই একাউন্টে সহায়তা পাঠাতে পারেন।