শীর্ষবিন্দু নিউজ: ষোড়শ সংশোধনী অবৈধ। ইতিহাসের দুর্ঘটনা। সংসদ কর্তৃক বিচারক অপসারণের বিধানকে এভাবেই বর্ণনা করেছেন হাইকোর্ট। সংখ্যাগরিষ্ঠ মতের ভিত্তিতে বিচারপতি মইনুল ইসলাম চৌধুরী, বিচারপতি কাজী রেজা-উল হক এবং বিচারপতি আশরাফুল কামালের হাইকোর্ট বেঞ্চ এ রায় ঘোষণা করেন।
অবৈধ, বেআইনি ও বাতিল ঘোষণা করা হয়েছে সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনীকে, যে সংশোধনীর মাধ্যমে বিচারক অপসারণের ক্ষমতা সংসদের হাতে ন্যস্ত করা হয়। ষোড়শ সংশোধনী অবৈধ ঘোষণার রায়টি এসেছে হাইকোর্টের বৃহত্তর বেঞ্চ থেকে। এরপরই সংসদে এই নিয়ে শুরু হয় তুমুল বাক বিতন্ডা।
পয়েন্ট অব অর্ডারে সরকারি দল আওয়ামী লীগ এবং বিরোধী দল জাতীয় পার্টি সাংসদেরা হাইকোর্টের রায়ের তীব্র সমালোচনা করেন। তারা ৩০০ বিধিতে আইনমন্ত্রীর বক্তব্য দাবি করেন। প্রধান বিচারপতিসহ বিচারপতিদের সমালোচনাকালে দফায় দফায় সংসদে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। পরিস্থিতি সামাল দিতে স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরীকে হিমশিম খেতে হয়।
আওয়ামী লীগের সাংসদ শেখ ফজলুল করিম সেলিম তিনি বিচারপতিদের উদ্দেশে বলেছেন, আইনের দৃষ্টিতে সবাই সমান। আপনারা বাড়াবাড়ি করবেন না। আপনাদের বাড়াবাড়ির কারণে কেউ অশুভ শক্তির সঙ্গে হাত মেলালে জনগণ জবাব দেবে।” বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ বলেছেন, “যারা বিচারক, তাদের আমরা চিনি, জানি। আমরা ক্ষমতায় বলেই তারা বিচারক হয়েছেন। তারা নিরপেক্ষভাবে কাজ করবেন, তা আমরা প্রত্যাশা করি।
সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতিদের অপসারণের ক্ষমতা জাতীয় সংসদের হাতে ফিরিয়ে এনে করা সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনী সংবিধান পরিপন্থী বলে আজ হাইকোর্ট রায় দিয়েছেন। এ রায়ের প্রতিক্রিয়ায় সংসদ ছিল উত্তপ্ত। পয়েন্ট অব অর্ডারে বৃহস্পতিবার বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ ও শেখ ফজলুল করিম সেলিম এসব কথা বলেন।
বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ বলেন, এ সংসদ সার্বভৌম। আমরাই বিচারপতিদের নিয়োগ দিয়েছি। হাইকোর্ট সংসদ প্রণীত আইন বাতিল করলে এটা খারাপ দৃষ্টান্ত হবে। এটা হতে পারে না। তিনি বলেন, সামরিক শাসনামলে সাবেক প্রধান বিচারপতি কামাল উদ্দিন হোসেন ও বিচারপতি মাহমুদ হোসেনকে অসম্মানজনকভাবে বিদায় করা হয়েছিল। এখন সে সুযোগ নেই। এখন কাউকে অপসারণ করতে হলে সংসদে দুই-তৃতীয়াংশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা লাগবে। হাইকোর্টের এ রায়ে আমরা দুঃখিত, ব্যথিত ও মর্মাহত।
তোফায়েল আহমেদ বলেন, যারা বিচারক, তাদের আমরা চিনি, জানি। আমরা ক্ষমতায় বলেই তারা বিচারক হয়েছেন। তারা নিরপেক্ষভাবে কাজ করবেন তা আমরা প্রত্যাশা করি। তিনি বলেন, একজন প্রধান বিচারপতি আরেকজন প্রধান বিচারপতির বিরোধিতা করছেন। এটার অবসান হওয়া উচিত।
শেখ ফজলুল করিম সেলিম বলেন, এ রায়ে পেছনে ষড়যন্ত্র আছে। রাষ্ট্রপতি অপরাধ করলে তার বিচার সংসদ করতে পারলে বিচারপতিরা কোথা থেকে এসেছেন যে তাদেরটা করা যাবে না। তাদের আইনসম্মত বিচার করার কথা বলা হয়েছে। অথচ তারা আইনবহির্ভূত কাজ করেছেন। যারা আইনবহির্ভূত কাজ করেছেন, তাদেরও বিচার করা উচিত।
তিনি বলেন, বিচারপতিদের বেতন-ভাতা বাড়ানোর আইন যদি আমরা পাস না করি, তাহলে তারা কি এ আইন পাস করতে পারবেন?
এর আগে সংসদ অধিবেশন শুরুর পর পয়েন্ট অব অর্ডারে দাঁড়িয়ে আলোচনার সূত্রপাত করেন জাতীয় পার্টির সংসদ সদস্য ফখরুল ইমাম। আলোচনায় অংশ নেন কাজী ফিরোজ রশীদ ও জাসদের মঈন উদ্দীন খান বাদল। তারা আদালতের রায়ের বিষয়ে আইনমন্ত্রীর বিবৃতি দাবি করেন।
স্পিকারের সভাপতিত্বে দিনের কার্যসূচি শুরু হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই পয়েন্ট অব অর্ডারে জাতীয় পার্টির সাংসদ ফখরুল ইমাম বক্তব্য দেন। অবশ্য আইনমন্ত্রীর ৩০০ বিধি বক্তব্যের পর বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ এবং আওয়ামী লীগের সাংসদ শেখ ফজলুল করিম সেলিম পয়েন্ট অব অর্ডারে দাঁড়ালে স্পিকার তাদের বক্তব্য রাখার সুযোগ দেন। তবে পয়েন্ট অর্ডারে বক্তব্যের সময় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা অধিবেশন কক্ষে উপস্থিত ছিলেন না।