আশরাফুল ইসলাম ইমরান: দক্ষিণ সুরমা উপজেলার ব্যস্ততম সড়ক মোগলাবাজার-ঢাকাদক্ষিণ (পাহাড় লাইন) সড়কের একাংশ যানচলাচলের সম্পূর্ণ অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। এই সড়ক দিয়ে দুই উপজেলার লোকজন যাতায়াত করে থাকেন। দক্ষিণ সুরমার মোগলাবাজার, দাউদপুর ইউনিয়নের বাসিন্দা এবং গোলাপগঞ্জ উপজেলার লক্ষ্মীপাশা, লক্ষণাবন্দ, ঢাকা দক্ষিণ সহ আশপাশ এলাকার জনসাধারণ এই সড়কপথে যাতায়াত করেন।
কিন্তু বর্তমানে সড়কটি যাতায়াতের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। সড়কের বিভিন্ন স্থানে বড় বড় গর্তের সৃষ্টি হয়েছে। অনেক স্থানে পিচের গালা উঠে গিয়ে শুধু পাথর দেখা যাচ্ছে। এলজিইডি ও সিএমবি’র রশি টানাটানিতে দুর্ভোগ পোহাচ্ছেন জনসাধারণ। বর্তমানে মোগলাবাজার-ত্রিমুখী থেকে চৌধুরী বাজার পর্যন্ত এলজিইডির অধীনে ১ কোটি ২০ লাখ টাকা ব্যয়ে ধীর গতির সংস্কার কাজ চলছে। বাকী অংশ সিএমবি’র অধীনে থাকায় কাজ হবে কি না তা নিয়ে জনমনে শংশয় রয়েছে।
সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ বলছেন, বিগত চারদলীয় জোট সরকারের আমলে সড়কটিকে কোন অংশ সিএমবি থেকে এলজিইডি আবার কোন অংশে এলজিইডি থেকে সিএমবি করায় সংস্কার কাজে দেখা দিয়েছে বিড়ম্বনা। স্থানীয় জনসাধারণ সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে জনসাধারণের দুর্ভোগের কথা চিন্তা করে অনতিবিলম্বে রাস্তাটির সম্পূর্ণ সংস্কার কাজ দ্রুত বাস্তবায়নের জন্য জোর দাবী জানিয়েছেন।
খানাখন্দে ভরা সড়ক দিয়ে যাত্রী পারাপারের জন্য চালকরা অতিষ্ট হয়ে উঠেছেন। ঢাকাদক্ষিণ থেকে কদমতলী টার্মিনালে আসতে যেখানে সময় লাগতো ঘন্টাখানেক, সেখানে বর্তমানে সময় লাগে ২ ঘন্টা। অতিরিক্ত সময় লাগার কারণে শহরের ব্যবসায়ী, চাকুরীজীবী ও বিভিন্ন স্কুল কলেজের শিক্ষার্থীদের দুর্ভোগ চরম আকার ধারণ করেছে। ভাঙ্গা রাস্তায় সময় বেশি লাগার দরুন এ অঞ্চলের বাসিন্দারা কর্মক্ষেত্রে আসতে বাসাবাড়ি থেকে বের হতে হয় এক থেকে দেড় ঘন্টা আগে। পাহাড় লাইন সড়কের চৌধুরীবাজার, ইলাইগঞ্জ, মান্দারেরতল, দশমাইল, রাখালগঞ্জ, লক্ষ্মীপাশা এলাকায় বড় বড় গর্ত সৃষ্টি হয়ে যাত্রী সাধারণ সীমাহীন দুর্ভোগ পোহাচ্ছেন।
বৃষ্টির পর গর্তে জমা থাকা পানি যানবাহন চলাচলের সময় পথচারী সহ সড়কের পার্শ্ববর্তী ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে ছিটকে গিয়ে ক্ষতি সাধন করছে। সড়কটিকে এখন সড়ক বলে চেনার উপায় নাই। পুরো সড়কের স্থানে স্থানে মিনি পুকুরের মতো বিশাল আকার গর্ত খনাখন্দ আর ডোবার মতো সৃষ্টি হয়েছে। জীবনের ঝুঁকি নিয়ে প্রতিদিন হাজার হাজার মানুষ বাধ্য হয়ে এ সড়কে যাতায়াত করছেন।
বিশেষ করে রোগী ও গর্ভবতী মহিলাদের চলাচল বিশেষ ভোগান্তির শিকার হতে হচ্ছে। পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তর এফডাব্লিও মাঠ কর্মীদের দেয়া তথ্য মতে এ অঞ্চলে প্রায় অর্ধ শতাধিক গর্ভবতী মহিলা রয়েছেন। রাস্তা খারাপ থাকায় তাদের চিকিৎসা সেবা মারাত্মকভাবে বিঘিœত হচ্ছে।
তাছাড়া সড়কটি পর্যাপ্ত পরিমাণে প্রশস্থ না থাকায় যানবাহন চালকদের গাড়ি চালাতে বেশ বেগ পেতে হচ্ছে। দু’দিক থেকে দুটি গাড়ি আসলে ব্রেক না করে সাইট দেয়া সম্ভব হয় না। বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার পর সড়কের গুরুত্বের কথা বিবেচনা করে সড়কটি ঢাকা দক্ষিণ থেকে মোগলাবাজার ত্রিমুখী পয়েন্ট পর্যন্ত প্রশস্থ করার সিদ্ধান্ত নেন শিক্ষামন্ত্রী নূরুল ইসলাম নাহিদ এবং তা পরবর্তীতে প্রশস্থ করা হয়।
কিন্তু সড়কটি প্রশস্থ করা হয় গোলাপগঞ্জ উপজেলার ঢাকা দক্ষিণ থেকে উপজেলার শেষ অংশ লক্ষ্মীপাশা পর্যন্ত। আর দক্ষিণ সুরমা এলাকার রাখালগঞ্জ থেকে মোগলাবাজার ত্রিমুখী পর্যন্ত সড়কটি যেভাবে ছিল সেভাবেই থেকে যায়। সড়কটি পুরাপুরি কেন প্রশস্থ করা হলো না, তা আজো অজানা রয়ে গেল। এলাকার জনসাধারণ মনে করছেন আমলাতান্ত্রিক জটিলতার কারণেই সড়কটির দক্ষিণ সুরমা অংশ প্রশস্থ করা হয়নি। তবে বর্তমানে মোগলাবাজার তেমুখী থেকে চৌধুরীবাজার পর্যন্ত এলজিইডির অধীনে সংস্কারকৃত সড়ক প্রশস্থ করে নির্মাণ কাজ চলছে।
এদিকে রাস্তা খারাপ থাকায় যানবাহন সীমিত আকারে চলাচল করছে। ফলে যাত্রী সাধারণের ভোগান্তির শেষ নেই। বিশেষ করে রাতের বেলা রাস্তা খারাপের অজুহাত দেখিয়ে পরিবহন শ্রমিকরা তাদের গাড়ি রাস্তায় বের করে না। এতে করে সিলেট শহর থেকে নিজ গন্তব্যে ফেরা যাত্রীরা পড়েন চরম বিপাকে। এলাকার জনসাধারণ কালক্ষেপন না করে মানুষের দুর্ভোগ লাঘবে দ্রুত সড়কটি সংস্কারের দাবি জানিয়েছেন। এ দুর্ভোগের শেষ কোথায়? এ ব্যাপারে ভুক্তভোগী মহল স্থানীয় এমপি মাহমুদ উস সামাদ চৌধুরী সহ সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের আশু দৃষ্টি কামনা করছেন।