শুক্রবার, ১৬ মে ২০২৫, ০৫:০৭

নাদিয়ার কষ্ট তুলে ধরলো দ্য ইন্ডিপেনডেন্টের রিপোর্ট

নাদিয়ার কষ্ট তুলে ধরলো দ্য ইন্ডিপেনডেন্টের রিপোর্ট

নিউজ ডেস্ক: গ্রেট বৃটিশ বেক অফ জয়ী বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত নাদিয়া হোসেন আবারও বৃটিশ মিডিয়ার শিরোনাম হয়েছেন। কিন্তু এবারের কারণ একেবারেই অন্যরকম। নাদিয়া তার কষ্টের কথা অকপটে প্রকাশ করেছেন। হিজাব পরিধানের কারণে তাকে যে নানাভাবে হেনস্থা ও হয়রানির শিকার হতে হয় পথে ঘাটে সেই জমানো কষ্ট ও নীরব কান্না এবারে অনুযোগ ও অভিমান হিসেবে ঝরে পড়েছে।

একইসঙ্গে তিনি পবিত্র ইসলাম ধর্মের অপব্যবহার বিষয়ে তার আতঙ্কের কথাও জানিয়েছেন। বলেছেন, ‘প্রত্যেকটি হামলার পরে আমি মেঘ মাথায় নিয়ে দরজার বাইরে বেরিয়ে আসি।’ শনিবার বৃটেনের শীর্ষস্থানীয় দৈনিক দি ইন্ডিপেন্ডেন্ট নাদিয়ার ওই মন্তব্য ছেপেছে টাইম ম্যাগাজিনের বরাতে। সিলেটের এই লন্ডনি কইন্যার মর্যাদায় কত উপরে উঠেছেন, সেটা পরিষ্কার পত্রিকাটির এই ফলাও করা কভারেজে। তার ইসলাম ভাবনা নিয়েই প্রতিবেদন, সঙ্গে কয়েকটি বড় আলোকচিত্র ছাপা হয়েছে।

টাইম ম্যাগাজিনকে নাদিয়া বলেন, ‘আমি যদি ট্রেনে কি বাসে থাকি তাহলে লোকে আমার থেকে দূরে সরে বসে। আর ভ্রমণকালে আমার সঙ্গে যদি কোনো বাক্স বা স্যুটকেস থাকে তাহলে কেউ কেউ সেদিকে সন্দেহভরা চোখে তাকাবেন, বাসের জন্য অপেক্ষমাণ আমার দিকে এটা-ওটা নিক্ষিপ্ত হওয়ার ঘটনাও ঘটে।’ নাদিয়া হোসেন আরো বলেন, ‘গত নভেম্বরে প্যারিসে যখন আইসিস উগ্রপন্থিরা হামলা চালালো তখন আমার ভাইকে অপদস্থ হতে হয়েছিল।’ কিন্তু নাদিয়া বৃটিশ সমাজের প্রতি আশা ছাড়েননি। কারণ তার কথায়, বৃটেন একটি সমন্বিত সমাজ। তাই যারা আমার প্রতি নেতিবাচক ঘটনা ঘটিয়ে থাকেন তারা নি?সন্দেহে সংখ্যালঘু।’

নাদিয়া দম্পতির বিয়ের বয়স ১১ বছরের, পরিবারের সম্মতিক্র?মে বিয়ে হয়েছিল তাদের। তাঁর স্বামীও অপমানের শিকার হয়ে থাকেন, আর সেটা করেন রক্ষণশীল মুসলিমরা, যারা তাদের আধুনিক দৃষ্টিভঙ্গি পছন্দ করেন না। তারা টিটকারি দিয়ে বলেন, স্ত্রীর ভরণপোষণ কি সে (স্বামী) দিতে পারে না? তাহলে স্ত্রীকে কেন কাজে নামিয়েছে?

নাদিয়ার স্বামী একজন পুরুষ মানুষই নন। কিন্তু এসব কথা শুনে আমার স্বামী বিচলিত হন না। তার একটুও মন খারাপ হয় না। নাদিয়া আরো বলেন, ‘ আমার সংস্কৃতিতে এটা অনুমোদনযোগ্য নয় যে, স্বামী গৃহস্থালী কাজ করবেন। গত রাতে আমি বিছানায় শুয়ে টুইটে ব্যস্ত ছিলাম। আর সে সময় আমার স্বামী আমার পায়ের কাছে কাপড় চোপড় ইস্ত্রি করছিলেন। এই দৃশ্য যদি আমাদের কোনো জ্যেষ্ঠ আত্মীয় অবলোকন করতেন, তাহলে নির্ঘাত? তাঁর মৃত্যু ঘটতো!’

বৃটেনের এক কোটি ৩০ লাখ টিভি দর্শকের বাড়িতে বাড়িতে এক নামে যাকে সবাই চেনেন, তিনি বাঙলাদেশি নাদিয়া, একথা লিখছেন ইন্ডিপেন্ডেন্ট প্রতিবেদক অলিভিয়া ব্লেয়ার। তার কথায়, সব থেকে নামকরা বেকারের খেতাব কুড়ানোর পর থেকে নাদিয়া পত্রিকায় লিখছেন, কুকবুক বের করা নিয়ে চুক্তিবদ্ধ হচ্ছেন, আর ঘন ঘন উপস্থিত হচ্ছেন টিভি টক?শোতে।

উল্লেখ্য, নাদিয়া বৃটেনের রানী দ্বিতীয় এলিজাবেথের ৯০তম জন্মদিনের কেক বানানোর সুযোগ পেয়ে লুজ উইমেন নামে একটি অনুষ্ঠানের প্যানেলে উপস্থিত হয়ে কদিন আগেই হৈচৈ ফেলে দেন। বৃটেনের লুটন শহরের চালনি গার্লস হাইস্কুলে অধ্যয়নকালে কেক ও নানা ধরনের পিঠা পুলি বানাতেন তিনি। তিন সন্তানের জননী নাদিয়ার বাবা সিলেটের বিয়ানীবাজারের মোহাম্মদপুর গ্রামের বাসিন্দা। তার বিজয়ে মোহাম্মদপুরে বয়ে গিয়েছিল বেশ আনন্দের জোয়ার, যার রেশ এখনও কাটেনি। মনে হচ্ছে নাদিয়া বৃটিশ জনজীবনে একটি স্থায়ী সিংহাসন তৈরি করতে যাচ্ছেন।

গত ১২-১৫ই মে পর্যন্ত চলেছে রানীর জন্মদিন উদ্?যাপন। উইন্ডসর ক্যাসলের হোমপার্কের ওই অনুষ্ঠানে ৯০০ ঘোড়া ও ১৫০০ আমন্ত্রিত অতিথির মধ্যে রাতারাতি খ্যাতি ঘিরে উন্নীত হন রূপকথার গল্পের মতোই। তাকে প্রশংসা করে মন্তব্য করতে হচ্ছে বৃটেনের খোদ প্রধানমন্ত্রীকেও।




Comments are closed.



পুরানো সংবাদ সংগ্রহ

সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি রবি
 
১০১১
১২১৩১৪১৫১৬১৭১৮
১৯২০২১২২২৩২৪২৫
২৬২৭২৮২৯৩০৩১  
All rights reserved © shirshobindu.com 2012-2025